X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মোদির কাছে কী নালিশ করলেন মমতা?

রঞ্জন বসু, দিল্লি প্রতিনিধি
২৬ মে ২০১৭, ২২:১৯আপডেট : ২৬ মে ২০১৭, ২২:২৪

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যয় এবার আর কোনও কূটনৈতিক সৌজন্যেরও ধার ধারলেন না পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। জামদানি বা ইলিশ উপহারের বিনিময়ে মমতা ব্যানার্জির মুখে অন্তত যে ভদ্রতা বা মিষ্টি কথার আড়ালটুকু থাকত, খসে পড়ল সেটাও।  বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযোগ নিয়ে তিনি এবার সরাসরি অল-আউট আক্রমণে গেলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে দাবি করলেন তার প্রতিকার।

বৃহস্পতিবার দুপুরে দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে দেখা করে একটি তিন পৃষ্ঠার স্মারকলিপি তুলে দেন মমতা বন্দোপাধ্যয় , যার ছত্রে ছত্রে ছিল বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ।  

পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থ যে তিনি কোনও মতেই বাংলাদেশের কাছে বিক্রি হতে দেবেন না, এই চিঠির মাধ্যমে নিজের রাজ্যের ভোটারদের কাছে সেটাই প্রমাণ করতে চেয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য ছিল রাজ্যের জন্য নানা আর্থিক দাবিদাওয়া জানানো ও ঋণ মওকুফের আর্জি পেশ করা । সেই সঙ্গে বাংলাদেশ নিয়ে লেখা এই চিঠিটিও নরেন্দ্র মোদির হাতে গুঁজে দেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী।

কিন্তু বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কী কী নালিশ করেছেন মমতা ‘প্রিয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিজি’কে সেই লম্বা অভিযোগপত্রে? পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের বয়ানেই সেই অভিযোগগুলো এখানে হুবহু তুলে ধরা হলো-

প্রথমত, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের যে অভিন্ন নদীগুলো আছে, তার পানি ভাগাভাগির সমঝোতা বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতা আমাদের  খুবই খারাপ। যেমন- গঙ্গাচুক্তির কথাই যদি ধরা যায়  তাহলে বলতে হয়, এই চুক্তির জন্যই ফারাক্কা ব্যারাজ একেবারে শুকিয়ে গেছে। ফারাক্কায় এনটিপিসি’র যে তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি আছে,  পানির অভাবে  সেটি প্রায়ই বসে যাচ্ছে। গত গ্রীষ্ম মৌসুমে বারবার এ ঘটনা ঘটেছে। পদ্মা দিয়ে বাংলাদেশে বেশি পানি চলে যাচ্ছে, ফলে রাজ্যের দুটো বন্দর – কলকাতা ও হলদিয়ার ওপরও এর অত্যন্ত বিরূপ প্রভাব পড়ছে।

দ্বিতীয়ত, অভিন্ন নদীগুলোর মধ্যে যেগুলো বাংলাদেশ থেকে ভারতে ঢুকেছে – সেগুলোর ওপরও বেআইনিভাবে নদীবাঁধ নির্মাণ করে ও আরও নানা স্থাপনা তৈরি করে বাংলাদেশ সেখান থেকে পানি টেনে নিচ্ছে। এই জিনিস ঘটেছে আত্রাই, টাঙ্গন বা পুনর্ভবা নদীর ক্ষেত্রে। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, আত্রাই যখন বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় ঢুকছে, তখন উজানে পানি টেনে নেওয়ার ফলে সেই নদী একেবারে শুকিয়ে গেছে। আত্রাই শুকিয়ে যাওয়ায় বালুরঘাট শহর তথা গোটা দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা ধুঁকছে – আর এর জন্য দায়ী হলো বাংলাদেশের দেওয়া নদীবাঁধ।

তৃতীয়ত, শুধু অন্যায়ভাবে পানি সরিয়ে নেওয়াই নয় , বাংলাদেশের কয়েকটি নদীর মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গে অত্যন্ত দূষিত রাসায়নিকও প্রবেশ করছে। যেমন- আমাদের  নদীয়া জেলাতে যে চূর্ণী নদী আছে, তা এসেছে বাংলাদেশ থেকে। ওই নদীর ওপর বাংলাদেশে দর্শনার চিনিকল ও আরও নানা কলকারখানা আছে, যার দূষিত বর্জ্য কোনও ট্রিটমেন্ট ছাড়াই সোজা চূর্ণী নদীতে ফেলা হচ্ছে। ফলে সেই চূর্ণী যখন ভারতে ঢুকছে তখন তার পানি রীতিমতো বিষাক্ত । মারাত্মক দূষণের কারণে তা গোসল করার উপযোগীও নেই! এ ব্যাপারে বাংলাদেশকে বহুবার বলেও কোনও লাভ হয়নি।

চতুর্থত, শুধু নদী নয় , পারস্পরিক ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গের অভিজ্ঞতা খুবই খারাপ । পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশের ইলিশের চাহিদা বিপুল, কিন্তু গত বেশ কয়েক বছর ধরে তারা আমাদের রাজ্যে ইলিশ রফতানি কার্যত বন্ধ রেখেছে। অপরদিকে পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার আমের একটা বিরাট বাজার ছিল বাংলাদেশ, কিন্তু আমের ওপর আমদানি শুল্ক (ইমপোর্ট ডিউটি) প্রায় দ্বিগুণ করে দিয়ে তারা মালদার আম সেদেশে যাওয়ার রাস্তা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। কিছুদিন আগেও মালদায় উৎপাদিত আমের প্রায় ৭০ শতাংশই যেত লাগোয়া বাংলাদেশে।  কিন্তু সেই বাজার প্রায় পুরোটাই হাতছাড়া হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

এই প্রধান অভিযোগগুলো ছাড়াও কেন্দ্রীয় সরকারকে লেখা তিন পৃষ্ঠার ওই চিঠিতে ছোটখাটো আরও অভিযোগ রয়েছে । আর চিঠির মূল সুরটা হলো , নদীর পানিই বলুন বা গাছের আম, বাংলাদেশ সরকার সব ব্যাপারেই পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে প্রবঞ্চনা করে চলেছে এবং মমতা বন্দোপাধ্যয়ের সরকার কেন্দ্রের কাছে এর প্রতিকার আশা করে।  এর অধিকাংশ বিষয়ই যেহেতু আন্তর্জাতিক তাই দুদেশের সরকারকে কথা বলেই এগুলো মিটমাট করতে হবে বলে চিঠিতে দাবি জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ।

মমতা বন্দোপাধ্যয়ের এই স্মারকলিপি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় বা ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও মন্তব্য করেনি। তবে দিল্লিতে শীর্ষস্থানীয় সরকারি কর্মকর্তারা একান্ত আলোচনায় স্বীকার করছেন, এর ফলে তিস্তাচুক্তি সম্পাদনের কাজ যে আরও কঠিন হয়ে পড়লো, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।  

/এপিএইচ/

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
বিরল সূর্যগ্রহণ দেখতে নায়াগ্রা জলপ্রপাতে জড়ো হবেন ১০ লাখ দর্শনার্থী
বিরল সূর্যগ্রহণ দেখতে নায়াগ্রা জলপ্রপাতে জড়ো হবেন ১০ লাখ দর্শনার্থী
নামাজ চলাকালে মসজিদের এসি বিস্ফোরণ, মুসল্লিদের মধ্যে আতঙ্ক
নামাজ চলাকালে মসজিদের এসি বিস্ফোরণ, মুসল্লিদের মধ্যে আতঙ্ক
সর্বাধিক পঠিত
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!