X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১
আজ নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস

নিরাপদ মাতৃত্বে অন্যতম বাধা প্রসবজনিত ‘ফিস্টুলা’

জাকিয়া আহমেদ
২৮ মে ২০১৭, ০৬:০০আপডেট : ২৮ মে ২০১৭, ০৬:০০
image

ছবি: অনলাইন হতে সংগৃহীত

আজ রবিবার (২৮ মে ) বিশ্ব নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস। বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে ১৪ জন মা প্রসবজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন। দেশে নিরাপদ মাতৃত্বে ‘ফিস্টুলা’ অন্যতম বাধা বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

বতর্মানে দেশে শতকরা ৪০ শতাংশ প্রসব দক্ষদের হাতে হয়ে থাকে। আর বাকি ৬০ শতাংশ প্রসবই হয় বাড়িতে অপ্রশিক্ষিতদের হাতে হচ্ছে। আর বাধাগ্রস্ত প্রসব থেকে মৃত্যু হয় ৮ শতাংশ। তাই বাধাগ্রস্ত প্রসবের সমাধান হলেই ৮ শতাংশ মাতৃমৃত্যু হার কমে যাবে তেমনি বাধাগ্রস্ত প্রসবের কারণে যে ফিস্টুলা হয়ে থাকে সেখান থেকেও নারীরা রক্ষা পাবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রসব ব্যথা ১২ ঘণ্টার বেশি স্থায়ী হলে বাধাগ্রস্ত প্রসবের কারণে ফিস্টুলা হতে পারে। তবে ফিস্টুলা সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য এবং ফিস্টুলা হবার পরও সঠিকভাবে চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন।কিন্তু অবহেলা ও গোপনীয়তার কারণে এই রোগীরা চিকিৎসা বঞ্চিত হয়ে থাকেন।

সংশ্লিষ্টরা বলেন, ফিস্টুলার মতো কঠিন রোগ নিয়ে নারীরা অবহেলিত জীবন কাটাচ্ছে। মা হবার আগেই শরীর পরিপূর্ণ হয়ে ওঠার আগে মেয়েদের বিয়ে, অসতর্কতা, অদক্ষ দাইয়ের হাতে প্রসব, পরিবারের অবহেলা এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসকের কাছে না যাওয়ার কারণেই নারীরা প্রসবকালীন সঠিক সেবা পান না, যার কারণে নারীরা আক্রান্ত হচ্ছেন ফিস্টুলার মতো অসুখে।

৯ বছরের ছেলেকে নিয়ে মালেকা বেগম থাকেন মায়ের বাড়িতে। মালেকা বেগম বলেন, ১৪ বছর তার বিয়ে হয়। দ্বিতীয়বার গর্ভবতী হলে কক্সবাজারের স্থানীয় হাসপাতালে নিলে নার্স ইনজেকশন দিয়ে বাচ্চা বের করার চেষ্টা করে। কিন্তু রক্তক্ষরণ হলেও রাতেই বাড়ি নিয়ে আসা হয় তাকে। পরদিন মালুমঘাট হাসপাতালে নিলে তিনি মৃত সন্তান প্রসব করেন। মালেকা বলেন, ‘এই ‘মরা বাচ্চা’ হওয়ার পর থেকেই সবসময় প্রস্রাব ঝরে। স্বামী আমাকে হাসপাতালে ফেলে পালিয়ে যায়। এমন রোগ না হলে স্বামী আমাকে ছেড়ে যেত না।’

ময়মনসিংহের আনোয়ারা বেগমও দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে ভুগেছেন এই রোগে। ১৬ বছর বয়সে বিয়ের ৩ মাস পরেই গর্ভবর্তী হওয়া আনোয়ারা বলেন, প্রথম ডেলিভারির পর থেকেই প্রস্রাব ঝরে। প্রসব ব্যথা ওঠার প্রথমদিন সারারাত বাড়িতে রাখা হয়, পরদিন ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজে নেওয়া হলে অপারেশনের পর মৃত বাচ্চা হয়। কিন্তু প্রস্রাব ঝরার জন্য ডাক্তার তিনমাস পরে যেতে বললেও যাওয়া হয়নি টাকার অভাবে। তারপর থেকে ১৭ বছর ধরে এই রোগ নিয়ে বেঁচে আছি।

কেবল মালেকা বেগম কিংবা আনোয়ারা নয়, ২০০৩ সালের করা এক জরিপ থেকে জানা যায়, দেশে ৭১ হাজার ফিস্টুলা রোগী রয়েছে, আর এর সঙ্গে প্রতিবছর ২ হাজার করে রোগী নতুন যোগ হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভুল অস্ত্রোপচার ও অদক্ষ হাতে প্রসবের কারণেই ফিস্টুলা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ফিস্টুলা গোপন করার কারণে দেশে ফিস্টুলা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। যার কারণে ফিস্টুলা রোগীর সঠিক সংখ্যা পাওয়া যায় না।

এনজেন্ডার হেলথ বাংলাদেশের ‘ফিস্টুলা কেয়ার প্রকল্প’ এর গবেষণা থেকে জানা যায়, প্রতি হাজার বিবাহিত নারীর মধ্যে দেশে ফিস্টুলা আক্রান্ত নারীর সংখ্যা ১ দশমিক ৭ জন। সারা বিশ্বেই মোট প্রসবের শতকরা ৫ শতাংশ প্রসব বাধাগ্রস্ত হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব মতে, বিশ্বে ২০ লাখ নারী ফিস্টুলা রোগে আক্রান্ত, আর এক লাখেরও বেশি নারী নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছেন।

আর বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এ হার আরও বেশি। বাধাগ্রস্ত প্রসবের কারণে ৭৬ শতাংশ এবং অস্ত্রোপচারজনিত কারণে বাকি ২৪ শতাংশ নারী ফিস্টুলায় আক্রান্ত হচ্ছে। আবার অস্ত্রোপচারের কারণে ৮০ শতাংশ জরায়ু অপারেশনে ও ২০ শতাংশ অস্ত্রোপচার পরবর্তী নানা আঘাতের কারণে ফিস্টুলায় আক্রান্ত হচ্ছে। তবে চিকিৎসার মাধ্যমে ৮০ থেকে ৮৩ শতাংশ ফিস্টুলা নিরাময় করা সম্ভব। যদিও দেশে ফিস্টুলা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংখ্যা হাতে গোণা। মাত্র ২৫ থেকে ৩০ জন ফিস্টুলা সার্জন কাজ করে যাচ্ছেন।

সরকারি ১১ এবং বেসরকারি ৮টি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে ফিস্টুলা অপারেশন বিনামূল্যে হয়ে থাকে।ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফিস্টুলা সেন্টারে বছরে ২৫০ থেকে ৩০০ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানায় ফিস্টুলা নিয়ে কাজ করা সংস্থা এনজেন্ডার হেলথ। সংস্থাটি জানায়, রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়াতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বেড সংখ্যা বাড়িয়ে ১৬ থেকে ৩৫ বেড করা হয়েছে। অপরদিকে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬টি বেড নিয়ে পৃথকভাবে শুরু হয়েছে ফিস্টুলা সেন্টার।

এনজেন্ডার হেলথ বাংলাদেশের ফিস্টুলা কেয়ার প্লাস প্রকল্পের প্রকল্প ম্যানেজার ডা.শেখ নাজমুল হুদা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সহজে প্রতিরোধ যোগ্য এবং যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদেরও অস্প্রোপচারের মাধ্যমে নিরাময় সম্ভব। ১৮ বছরের আগে মেয়েদের বিয়ে দেওয়া যাবে না কারণ কিশোরী বয়সী সন্তান জন্মদান ফিস্টুলার অন্যতম কারণ। আর দক্ষ ধাত্রীদের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করাতে হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিস্টুলা সেন্টারের প্রকল্প উপদেষ্টা অধ্যাপক সালেহা বেগম চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, অপারেশনের চাইতে প্রতিরোধের ওপর জোর দিতে হবে। কারণ, শতভাগ অপারেশন আমরা করতে পারিনি। তাছাড়া প্রতিরোধ না করতে পারলে ফিস্টুলা রোগীর সংখ্যা বাড়বে। তাই ২০ বছরের নিচের মেয়েদের সন্তান না নেওয়া, গর্ভকালীন নিয়মিত চেকআপ, প্রসব বেদনা ওঠার ১২ ঘণ্টার মধ্যে বাচ্চা না হলে জরুরি তাকে হাসপাতালে নিতে হবে-এই কয়েকটি বিষয়ে পরিবারের সচেতনতা থাকলে একজন নারী ফিস্টুলার মতা নিদারুণ অভিশাপ থেকে বাঁচিয়ে দিতে পারে।

/এমএইচ/

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বেয়ারস্টো-শশাঙ্কে হেসেখেলে ২৬২ রান করে জিতলো পাঞ্জাব
বেয়ারস্টো-শশাঙ্কে হেসেখেলে ২৬২ রান করে জিতলো পাঞ্জাব
ফরিদপুরে দুই শ্রমিক হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার দাবিতে খেলাফত মজলিসের মিছিল
ফরিদপুরে দুই শ্রমিক হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার দাবিতে খেলাফত মজলিসের মিছিল
মশা তাড়ানোর ৫ প্রাকৃতিক উপায়
মশা তাড়ানোর ৫ প্রাকৃতিক উপায়
মেলা থেকে অস্ত্রের মুখে দুই নারীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ
মেলা থেকে অস্ত্রের মুখে দুই নারীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!