X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভাস্কর্য ইস্যুতে উভয়পক্ষকে সন্তুষ্ট রাখতে চায় সরকার

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৯ মে ২০১৭, ২১:৪৪আপডেট : ২৯ মে ২০১৭, ২২:৩৬

সুপ্রিম কোর্টের সামনের ভাস্কর্যটি অপসারণের কাজ চলছে

সুপ্রিম কোর্টের চত্বর থেকে গ্রিক দেবীর ভাস্কর্য সরিয়ে অ্যানেক্স ভবনের সামনে পুনঃস্থাপন প্রক্রিয়ায় দৃশ্যত প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার সিদ্ধান্ত প্রতিফলিত হলেও এর নেপথ্যে কার্যত সরকারের আগ্রহ রয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও প্রভাবশালী একটি গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক সূত্র সরকারের এ মনোভাবের কথা জানিয়েছে।

সূত্রগুলো বলছে, ২৫ মে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে ভাস্কর্য সরানোর পেছনে হেফাজতে ইসলামসহ কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠনগুলোকে সন্তুষ্ট করা এবং ২৭ মে অ্যানেক্স ভবনের সামনে তা পুনঃস্থাপন করে মূলত ভাস্কর্যপন্থী শক্তিগুলোকে সান্ত্বনা দিতে চেয়েছে সরকার।

রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম বলছেন, ‘গ্রিক দেবীর ভাস্কর্য সরানো হয়েছে প্রধান বিচারপতির নির্দেশেই। তিনি ফুল কোর্ট জজদের মতামত নিয়ে এটি সরিয়েছেন।’ যদিও শনিবার (২৭ মে) রাতে ভাস্কর্যটি পুনঃস্থাপন করা হলে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

ক্ষমতাসীন দলের একটি সূত্র জানায়, ‘সরকার দুপক্ষকেই সন্তুষ্ট করতে চেয়েছে। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ভাস্কর্য সরিয়ে ও পুনঃস্থাপন করে হেফাজত ও আওয়ামী ঘরানার বুদ্ধিজীবীদের পাশে রাখার কৌশল করা হয়েছে।’

আওয়ামী লীগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এই ভাস্কর্য না সরালে কেউ না কেউ ভেঙে ফেলতো। অতীতে এমন ঘটনা ঘটেছে। এ ব্যাপারে কোনও নেতা সপরিচয়ে বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

যদিও হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে স্থাপিত গ্রিক দেবী থেমিসের ভাস্কর্য সরিয়ে ফেলতে, অথবা জাতীয় ঈদগাহ থেকে যেন দেখা না যায়, তার ব্যবস্থা নিতে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার সঙ্গে গত ১৭ এপ্রিল একান্তে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই দিন মন্ত্রিপরিষদের এক অনির্ধারিত আলোচনায় প্রসঙ্গটি উঠলে প্রধানমন্ত্রী নিজেই এ কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।বৈঠকে অংশ নেওয়া চার জন সিনিয়র মন্ত্রী বাংলা ট্রিবিউনকে বিষয়টি  নিশ্চিত করেছিলেন।

সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছাই শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়েছে। এজন্যই সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে সরিয়ে দিয়ে পেছনে অ্যানেক্স ভবনের সামনে পুনঃস্থাপন করা হয়েছে।

রাষ্ট্রের প্রভাবশালী একটি গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানায়,সরকার নৈতিকভাবে ভাস্কর্যটি  সরাতে চেয়েছিল। বৃহস্পতিবার (২৭ মে) রাতেই সেটি স্থাপন করতে চাইলেও বাধা দেওয়া হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার তরফে সরকারকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল, বিতর্ক ঠেকাতে ভাস্কর্যটি যেন পুনঃস্থাপন করা না হয়।

তবে বৃহস্পতিবার রাত থেকেই ভাস্কর্য সরানোর প্রতিবাদে বাম সংগঠনগুলোর একটি অংশ প্রতিবাদ করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে। বিশিষ্টজনেরা দাবি করছিলেন, গ্রিক দেবী পুনঃস্থাপন করার।

বিএনপির কোনও কোনও নেতা মনে করেন, ‘সরকার ভাস্কর্যটি সরানো ও পুনঃস্থাপন নিয়ে দোটানায় পড়েছে। এর মধ্যে সম্প্রতি হেফাজতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে ভাস্কর্যটি   সরানো হলেও পুনঃস্থাপন না করে উপায় ছিল না। বিশেষ করে ভাস্কর্যপন্থী একটি বড় গোষ্ঠী সরকারের সমর্থক হিসেবে পরিচিত। এ কারণে সরকার দোটানায় পড়েছে।’ আর এই বিপদ দেখেই বিএনপি এখনও ভাস্কর্য নিয়ে মুখ খোলেনি।

গত বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাত ১২টার পর গ্রিক দেবীর ভাস্কর্যটি সরানোর কাজ শুরু হয়। ভোর পাঁচটার দিকে ঢাকা মেট্রো ন-১৬-১৫০৪ নম্বরের পিকআপ ভ্যানে করে হাইকোর্টের অ্যানেক্স ভবনের সামনে পানির পাম্পের পাশে ভাস্কর্যটি রাখা হয়। এর ২৪ ঘণ্টা পর শনিবার (২৭ মে) রাত দেড়টায় ফের অ্যানেক্স ভবনের সামনে পুনঃস্থাপন করা হয়। যদিও ভাস্কর্য পুনঃস্থাপন না করতে হেফাজতে ইসলামের হুঁশিয়ারি ছিল।

গোয়েন্দা সূত্র বলছে, সরকার যেভাবেই হোক এই ইস্যু থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে। বিশেষ করে হেফাজতসহ ধর্মভিত্তিক সংগঠনগুলোর কাছে বার্তা দেওয়া হয়েছে, গ্রিক দেবীর ইস্যুতে কোনও আন্দোলন চলবে না।

হেফাজত নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এর সত্যতা পাওয়া গেছে। হেফাজতের কেন্দ্রীয় এক নেতা বলেন, ভাস্কর্য নিয়ে প্রশ্ন তুলতে হবে, সে ধরনের পরিবেশ ও পরিস্থিতি নেই। তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ হলেও এখন থেকে এই ইস্যুটিতে চুপ থাকার সিদ্ধান্ত রয়েছে হেফাজতের।এ কারণে ঢাকায় নূর হোসাইন কাসেমী সব ভাস্কর্য সরানোর দাবি করলেও তার বক্তব্যের পক্ষে কোনও অবস্থান নেয়নি হেফাজত।

আগামী দিনেও হেফাজত এ ধরনের প্রশ্ন তুলবে কিনা, জানতে চাইলে মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ‘এ বিষয়ে সারা দেশের বিজ্ঞ আলেমদের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত আসবে। এখনই এ নিয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না।’ সংগঠনটির কেন্দ্রীয় এই সাংগঠনিক সম্পাদক আরও বলেন, ‘এখন রমজানের ব্যস্ততা, ঈদের পর এটি নিয়ে বলা যাবে।’

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ভাস্কর্য সরানো এবং পুনঃস্থাপনের সঙ্গে রাজনীতি বা সরকারের কোনও সম্পর্ক নেই। প্রধান বিচারপতি নিজেই তা স্থাপন করিয়েছেন। আবার নিজের সিদ্ধান্তেই সরানোর পর পুনঃস্থাপন করিয়েছেন। তিনি সরানোর বিষয়ে বারের আইনজীবীদের সঙ্গেও কথা বলেছেন।’

আওয়ামী লীগের এই নেতা আরও বলেন, যদিও প্রথমবার স্থাপনের সময় প্রধান বিচারপতিকে আমরা পরামর্শ দিয়েছিলাম, ভাস্কর্যটি যেন স্থাপন না করেন। আমরা বলেছিলাম, এতে বিতর্ক হতে পারে।

এসটিএস / ইএইচএস/ এপিএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বাড়তি ফসল মিষ্টিকুমড়ায় কৃষকের মুখে হাসি
বাড়তি ফসল মিষ্টিকুমড়ায় কৃষকের মুখে হাসি
ধাক্কা মেরে ফেলে চাপা দিলো কাভার্ডভ্যান, মোটরসাইকেলচালক নিহত
ধাক্কা মেরে ফেলে চাপা দিলো কাভার্ডভ্যান, মোটরসাইকেলচালক নিহত
ডিভোর্স দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্বামী
ডিভোর্স দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্বামী
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!