X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

স্বপ্ন যাচ্ছে বাড়ি

মেহেদী তারেক
২৪ জুন ২০১৭, ০৪:০৮আপডেট : ২৪ জুন ২০১৭, ০৭:১৫

বাস কাউন্টারে অপেক্ষারত যাত্রীরা দুই হাতে ভারি দুই ব্যাগ। ঘর্মাক্ত মুখে ছুটে চলছেন বাস টার্মিনালের উদ্দেশ্যে।  রাজধানীর বিভিন্ন বাস টার্মিনালের আশেপাশে শুক্রবার (২৩ জুন) এই চিত্র ছিল নিয়মিত। রাজধানী ছেড়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঈদের ছুটি কাটাতে ছুটে চলছেন মানুষজন। রোদের তাপে প্রচণ্ড গরম,বাড়তি ভাড়া কিংবা বাসের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা। কোনোকিছুই বাঁধ সাধতে পারছে না এই যাত্রায়। ধুলো ময়লা আর কংক্রিটের নগরী ছেড়ে প্রাণের টানে সবাই ছুটছেন গ্রামের পানে। প্রিয়জনদের সঙ্গে দীর্ঘ অপেক্ষার পর দেখা হবে এই আনন্দে মিলিয়ে যাচ্ছে সকলের ক্লান্তি।

আবদুল্লাহ আল বাকি নামে একজন গাবতলি হানিফ কাউন্টারে অপেক্ষা করছেন বাসের জন্য। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমার কর্মস্থল খাগড়াছড়ি কিন্তু গ্রামের বাড়ি ঠাকুরগাঁয়ে। অগ্রিম টিকিট বিক্রির সময় লাইনে দাঁড়াতে পারিনি। পরিচিত একজনের কাছ থেকে টিকিট নিয়েছি অতিরিক্ত ২০০ টাকা দিয়ে। তবু বাড়ি যেতে হবে। বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা মা আছেন। তাদের সঙ্গে ঈদ কাটানো হবে পরম আনন্দের বিষয়।

সরকারি-বেসরকারি অফিস ছুটি হয়ে যাওয়ায় মূলত বৃহস্পতিবার (২২ জুন) থেকেই শুরু হয় মূল ঈদ যাত্রা। বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে শুক্রবার (২৩ জুন)সকাল পর্যন্ত নগরীর বাস স্ট্যান্ড গুলোতে লক্ষ্য করা করা যায় ঘরে ফেরা মানুষের উপচে পড়া ভিড়। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চাপ কমে আসছে।

স্বপ্ন যাচ্ছে বাড়ি জয়নাল আবেদীন নামক নওগাঁগামী এক যাত্রী তার ঈদ যাত্রা সম্পর্কে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সারা বছর বাড়ির বাইরে থাকি। বছরে দুইবার সুযোগ পাই ছেলে মেয়েদের মুখ দেখার। আর তাই যতো কষ্টই হোক না কেন গ্রামে যেতে চাই। ঈদের আনন্দ ছেলে মেয়েদের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে চাই।’

এদিকে, বরাবরের তুলনায় এবার যাত্রী ভোগান্তি অনেক কম হচ্ছে বলে মনে করছেন যাত্রীরা। যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন বাস স্ট্যান্ডে নিয়োজিত আছেন বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। স্থাপন করা হয়েছে অস্থায়ী র‍্যাব ক্যাম্প, পুলিশ কন্ট্রোল রুম, ট্রাফিক পুলিশ কন্ট্রোল রুম। গাবতলি বাস টার্মিনালে স্থাপিত অস্থায়ী র‍্যাব ক্যাম্পে দায়িত্বপালনরত র‍্যাব-৪ এর ডিএডি আলাউদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের কাছে এখনও কোনও লিখিত অভিযোগ আসেনি। তবে কেউ এসে অভিযোগ করলে সঙ্গে সঙ্গে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে সমাধানের চেষ্টা করছি। আশা করছি ঈদ যাত্রা নির্বিঘ্ন থাকবে।’

স্বপ্ন যাচ্ছে বাড়ি এছাড়াও বিআরটিএ’র উদ্যোগে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে গাবতলিতে পরিচালনা করা হচ্ছে ভিজিলেন্স টিম। তারা মনিটরিং করছেন কোথাও কোনও অনিয়ম হচ্ছে কিনা। সেখানে কর্তব্যরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুস সালাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিআরটিএ’র নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কেউ বেশি ভাড়া রাখছে কিনা প্রধানত এটা নিয়েই আমরা কাজ করছি। এছাড়া অন্য কোনও বিষয়ে কোনও সমস্যা হচ্ছে কিনা সেটাও দেখছি। আমাদের টিম বিভিন্ন পয়েন্টে গিয়ে সার্বিক পরিস্থিতি ঠিক আছে কিনা তা তদারকি করছে। ভাড়া বেশি রাখার অভিযোগে আমরা একটি বাসের ড্রাইভারকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৩ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছি। এছাড়া কেউ এসে আমাদের কাছে অভিযোগ করলে আমরা দ্রুত বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

বাস ট্রাক মালিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে গাবতলি বাস টার্মিনালে বারবার মাইকে করে যাত্রীদের দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন নির্দেশনা। উৎসবমুখর পরিবেশে ঈদ পালন করতে সবাই বাড়ি যাচ্ছেন। অনেকেই কাউন্টারে চলে এসেছেন নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই। আজিজুল হক নামে দিনাজপুরের এক যাত্রী জানালেন, তার বাস বিকাল ৩টায়, তিনি দুপুর ১টার সময় কাউন্টারে চলে এসেছেন। রাস্তায় জ্যামে বাস মিসের আশঙ্কায় তিনি এত তাড়াতাড়ি চলে এসেছেন। দীর্ঘদিন পর গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন সেজন্য উৎফুল্ল তিনি।

স্বপ্ন যাচ্ছে বাড়ি এদিকে, কানউন্টারগুলো থেকে বেশিরভাগ বাসই নির্ধারিত সময়ে ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছে। তবে কিছু কিছু বাস ছাড়তে দেরি হচ্ছে। মো. রফিকুল ইসলাম নামে এক যাত্রী অভিযোগ করেন,শ্যমলী পরিবহনের তার সাড়ে ১১টার রাজশাহীর বাস দুপুর ১টার সময়ও আসেনি। কল্যাণপুর শ্যমলী কাউন্টার থেকে জাকির হোসেন এই অভিযোগ সম্পর্কে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সকালের জ্যামের কারণে কিছু বাস ঢাকায় ফিরতে দেরি হচ্ছে তাই আমরা সময়মত ছাড়তে পারছি না। তবে বাকি বাসগুলো ঠিক সময়েই ছেড়ে যাচ্ছে। আর ঈদের মৌসুমে ১০-১৫ মিনিট দেরি কোনও দেরি না।’

তবে যাত্রীদের ভিড় এখনও জমেনি বলে মনে করেন গাবতলির বাস কাউন্টারে থাকা কর্মকর্তারা। গার্মেন্টস ছুটি হলেই মূলত ভিড় হবে বলে মনে করেন তারা। সূর্যমুখী বাস সার্ভিসের গাবতলি কাউন্টার থেকে হালিম জানান, ‘যাত্রীদের ভিড় সাধারণত হয় ভোর বেলা আর সন্ধ্যা পর। এই গরমে দিনের বেলা গরমে কেউ জার্নি করতে চান না।’

/এমটি/এসএনএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
গাজায় ত্রাণ পৌঁছাতে ইসরায়েলকে ক্রসিং খুলে দেওয়ার নির্দেশ জাতিসংঘের
গাজায় ত্রাণ পৌঁছাতে ইসরায়েলকে ক্রসিং খুলে দেওয়ার নির্দেশ জাতিসংঘের
হৃদরোগ বিভাগে ছারপোকার রাজত্ব, হাসপাতাল পরিচালক দুষছেন রোগীদের
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালহৃদরোগ বিভাগে ছারপোকার রাজত্ব, হাসপাতাল পরিচালক দুষছেন রোগীদের
‘মডার্ন মেট্রোপলিস’ থিমে ঈদ সংগ্রহ এনেছে ঢেউ
‘মডার্ন মেট্রোপলিস’ থিমে ঈদ সংগ্রহ এনেছে ঢেউ
কাপাসিয়ায় গরু চোর সন্দেহে ২ জনকে পিটিয়ে হত্যা
কাপাসিয়ায় গরু চোর সন্দেহে ২ জনকে পিটিয়ে হত্যা
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়