ঈদে বাড়ির ফেরার তাগিদে বাস, ট্রেনের মতো লঞ্চঘাটেও এখন যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে এখন গ্রামমুখী মানুষের ঢল। বিপুল এই মানুষের চাপে নিজেই নিরাপত্তার সংকটে এখন সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল এলাকা। এসব যাত্রীকে পরীক্ষা করে প্রবেশ করানোর জন্য সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে কোনও ধরনের ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি।
এদিকে, যাত্রীবাহী লঞ্চগুলোর বেশিরভাগেই নেই আনসার সদস্য। আনসারের বদলে সিকিউরিটি গার্ড দিয়ে চলছে এসব লঞ্চ। এছাড়া অপ্রতুল লাইফবয়া, প্রাথমিক তথ্য বিবরণী না থাকাসহ নানা অসঙ্গতি নিয়ে চলছে লঞ্চগুলো।
সম্প্রতি ঈদ যাত্রা শুরু হওয়ার আগে ‘এমডি ফারহান-৪’ নামের একটি লঞ্চে ডাকাতরা আক্রমণ করে। তখন আনসার সদস্যদের সাহসিকতার কারণে ডাকাতদের হাত থেকে রক্ষা পায় লঞ্চের যাত্রীরা। ঘটনাস্থলে উপস্থিত আনসার দুলাল হোসেন জানান, প্রায় ৩০ টির মতো ট্রলার লঞ্চটিকে ঘিরে ধরে। পরে আমরা ফাঁকা গুলি করি। আমি নিজে চার রাউন্ড গুলি ছুরি। তারপর ডাকাতরা পালিয়ে যায়। এখন ঈদযাত্রার মতো সময়ে যদি ডাকাতদের আক্রমণ হয় অথবা এমন কোনও হামলার ঘটনা ঘটে তাহলে কিন্তু, সেগুলো দেখার জন্য নেই কেউ।
সাধারণত ছোট লঞ্চে ৪ জন আর বড় লঞ্চে ৬ জন আনসার থাকে। আনসারদের সঙ্গে হাতিয়ার (আগ্নেয়াস্ত্র) থাকে। কিন্তু, সিকিউরিটি গার্ডের হাতিয়ার থাকে না। তাই কোনও ধরনের আক্রমণ ঘটলে সেগুলো ঠেকানোর ক্ষমতা নেই সিকিউরিটি গার্ডদের।
লঞ্চগুলোতে প্রাথমিক তথ্য বিবরণী দেওয়া থাকে সর্বসাধারণের জন্য। সে তথ্যতে দেখা যায়, যাত্রী ধারণক্ষমতার তুলনায় লাইফ বয়ার সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক কম। আবার বেশ কিছু লঞ্চে ঘুরে দেখা যায় সেগুলোতে প্রাথমিক তথ্য বিবরণীও নেই। যেমন সুন্দরবন-৮। এ বিষয়ে সুন্দরবন ৮ এর মাস্টার সাইদুল ইসলামকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘লঞ্চটি রঙ করার কারণে আগের তথ্য বিবরণী মুছে গেছে। যে রঙের কাজ করে তাকে খবর দেওয়া হয়েছে, সে আসতেছে।’
সরেজমিন দেখা গেছে, সদরঘাটের যে প্রবেশমুখ, সেখানে নেই কোনও মেটাল ডিটেক্টর কিংবা বিস্ফোরক শনাক্তকারী কোনও যন্ত্র। যার কারণে কেউ কোনও বিস্ফোরক বহন করলেও তা ধরার কোনও উপায় নেই।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাব-১০ এর এএসপি রেজাউল করিম বলেন, ‘সদরঘাটের বাহিরে আমাদের গোয়েন্দা টিম ঘোরাফেরা করছে। এ ধরনের ঘটনা এড়াতে গোয়েন্দা নজরদারিই যথেষ্ট। এছাড়া সন্দেহভাজন কাউকে পেলেই আমরা তল্লাশি করছি।’
নিয়মানু্যায়ী লঞ্চের প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে সার্ভের সময়সূচি লেখা থাকে। সাধারণত এই সার্ভটি হয় লঞ্চটির ফিটনেস পরীক্ষা সংক্রান্ত। কিন্তু অনেক লঞ্চে এই সময়সূচির জায়গাটা ফাঁকা।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিএ’র যুগ্ম পরিচালক মো. জয়নাল আবেদিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘লঞ্চ পরিচালনার জন্য আনসার থাকাটা বাধ্যতামূলক নয়। মালিকরা নিজেদের প্রয়োজনে তারা রাখেন। সদরঘাটের নিরাপত্তা আমরা দিচ্ছি, কিন্তু লঞ্চের নিরাপত্তার দায়িত্ব মালিকদেরই। তাই তারা আনসার কিংবা নিরাপত্তারক্ষী রেখে থাকেন।’
লাইফ বয়া থাকার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘প্রতি ৬ জনের জন্য একটি লাইফবয়া থাকা প্রয়োজন।’ লঞ্চের ফিটনেস এর ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘এগুলো দেখার দায়িত্ব আমাদের নয়, নৌ পরিবহন অধিদফতরের। আর যে সব লঞ্চে প্রাথমিক তথ্য বিবরণী নেই, সেসব লঞ্চ মালিকদের কারণ দর্শানোর চিঠি দেওয়া হবে ।’
/এমটি/এসএসএ/টিএন/