X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

রাজধানী ছাড়ছেন প্রায় ৬০ লাখ মানুষ

শফিকুল ইসলাম
২৪ জুন ২০১৭, ১৯:৫৪আপডেট : ২৫ জুন ২০১৭, ১৩:০৮

 

ঈদে লঞ্চঘাটে ছুটে আসছেন ঘরমুখো মানুষ যানজট ও রোদ-বৃষ্টিসহ নানা ধরনের বিড়ম্বনা উপেক্ষা করে নাড়ীর টানে রাজধানী ছাড়ছেন মানুষ। এরা কেউ লঞ্চে, কেউ গাড়িতে কেউ ট্রেনে বাকি কিছু বিমানে যাচ্ছেন। রুটের গাড়ি বা ট্রেনে না গিয়ে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, এমনকি কেউ কেউ পিকআপ ভ্যান ভাড়া করে বাড়ি যাচ্ছেন। রাজধানীর বাস, লঞ্চ, ট্রেন স্টেশনে এখন ঘরমুখো মানুষের ভিড়।

গত বৃহস্পতিবার (২২ জুন) থেকেই ভিড় দেখা গেছে, রাজধানীর রেলস্টেশনসহ  লঞ্চ ও বাস টার্মিনালে। ওই দিন অফিসে কোনও রকমে হাজিরা দিয়েই বাড়ি ছুটেছেন সরকারি-বেসরকারি অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারিরা। গত দু’দিন শুক্রবার (২৩ জুন) ও আজ  শনিবার (২৪ জুন) এ দু’দিন যাচ্ছেন শ্রমজীবী মানুষ, বিশেষ করে গার্মেন্টস শ্রমিকরা। কাল রবিবারও (২৪ জুন) ঈদ করতে বাড়ি যাবেন জীবিকার সন্ধানে রাজধানীতে আসা লাখো মানুষ।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) হিসাব মতে, এবার রাজধানী ছেড়ে পরিবার পরিজনের সঙ্গে ঈদ করতে গ্রামে যাবেন এমন মানুষের সংখ্যা কমবেশি ৬০ লাখ। তবে এ সংখ্যা ৭০ লাখের বেশি হবে বলে মনে করেন রাজধানীতে বসবাসকারী মানুষ। জীবিকার সন্ধানে রাজধানীতে আসা মোট মানুষের মধ্যে এ সংখ্যা অর্ধেকের কিছু কম বলে জানিয়েছে ঢাকার দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের দুই মেয়রের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষ্যমতে, এই মুহূর্তে রাজধানীতে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা দেড় কোটি। তবে বেসরকারি হিসেবে এখন রাজধানীতে বসবাস করে দুই কোটির বেশি মানুষ।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে নাড়ীর টানে যারা বাড়ি যাচ্ছেন, পথে পথে সৃষ্ট যানজটে তাদের বিড়ম্বনার শেষ নেই। পরিবহন সংকট ও বৈরী আবহাওয়া প্রচণ্ড রোদ ও গরম উপেক্ষা করে স্বজনদের কাছে যেতে হচ্ছে। ভয়াবহ যানজটে রাস্তায় দিনের সিংহভাগ শেষ হচ্ছে। গত তিনদিন ধরেই রাজধানীতে বৃষ্টি নেই, রোদ আছে; আছে গরম। এর মধ্যেই ট্রেনের ছাদে, লঞ্চ ও বাসের পিঠে করে মফস্বলে ঘনিষ্টজনদের কাছে যাচ্ছে মানুষ।

জানা গেছে, রাজধানী ছেড়ে যাওয়া এই ৬০ থেকে ৭০ লাখ মানুষের মধ্যে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ মানুষ যাবেন লঞ্চে। সরকারি হিসাবে প্রতিদিন ট্রেনযোগে রাজধানী ছাড়ছেন ২৫ হাজার মানুষ। তবে বেসরকারি হিসেবে এ সংখ্যা এর দ্বিগুণ অর্থাৎ ৫০ হাজার। সেই হিসেবে ঈদের আগে কমপক্ষে আট থেকে নয় লাখ মানুষ বাড়ি যাচ্ছেন ট্রেনযোগে। বাকিটা যাবেন সড়ক পথে। তবে এর মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বাড়ি যাবেন বিমানযোগে।

গত সপ্তাহ থেকেই রাজধানী ছেড়ে স্রোতের মত বিভিন্ন মাধ্যমে মানুষ গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন। গাড়ী ও টিকেট সংকট, পথে পথে যানজট এবং রোদ ও গরমে মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। রাজধানীর টার্মিনাল ও রেলওয়ে ষ্টেশন এবং লঞ্চঘাটে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নাড়ীর টানে গ্রামের বাড়ির যাচ্ছেন নগরবাসীর বড় একটা অংশ। পুলিশের হিসাব মতে, রাজধানী থেকে প্রায় ৬০ লাখের বেশি লোক পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছেন।

প্রিয়জনের সান্নিধ্যে ঈদ করতে ঘরমুখো মানুষের চোখেমুখে পূর্ণতার ছাপ লক্ষ্য করা গেছে। বৃষ্টি নাই, কিন্তু গরম কিছুটা বেশি হলেও ভালোভাবে বাড়ি যেতে পারছেন, এই আনন্দেই তাদের চোখেমুখে আনন্দের ছাপ। রাজধানীর বাস ও লঞ্চ টার্মিনাল এবং রেল ষ্টেশনের মানুষের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

বাহ্মণবাড়িয়াগামী আহাদ আলী বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, তিনি যানজট, রোদ ও গরম উপেক্ষা করে ষ্টেশনে এসে প্রচণ্ড যাত্রীর চাপ দেখতে পান রেল ষ্টেশনে। কিছু বিড়ম্বনা আছে, তারপরেও তিনি খুশী। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করাই আনন্দই আলাদা।’

এদিকে, দিনাজপুরগামী এম এ কাদের পরিবারের সঙ্গে ঈদ করার প্রত্যাশায় গতকাল শুক্রবার (২৩ জুন) সকালেই পৌঁছান কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে। তিনি বলেন, নির্ধারিত ট্রেনে উঠতে গিয়ে ভোগান্তিও কম নয়। তার পরেও ভালো যে ট্রেনে উঠতে পেরেছি। কিছুক্ষণের মধ্যে ট্রেনটি ছাড়বে। আর এক সময় বাড়িও পৌঁছাবো।’

কমলাপুর স্টেশন থেকে ছেড়ে যাওযা ট্রেনগুলোর সিডিউল বিপর্যয় অতীতের যেকোনও বছরের তুলনায় কম। কর্তৃপক্ষের দাবি সিডিউলের ব্যত্যয় ঘটেনি। তবে শনিবার রংপুর এক্সপ্রেস নির্ধারিত সময়ের পাঁচ ঘন্টা পর কমলাপুর ছেড়ে যেতে দেখা গেছে।

নিরাপত্তা কর্মী বাদল জানান, স্বাভাবিকভাবেই যাওয়া মানুষের চাপ একটু বেশি, পরিবহন সংকট ও মানুষের চাপ এবং কিছুটা গরম হলেও এবার ভোগান্তি কম। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক বলেন, ‘ঢাকা থেকে বিভিন্ন অঞ্চলে বাড়ি ফেরা মানুষের জন্য আমাদের পক্ষ থেকে সব রকম ব্যবস্থা রয়েছে। সব ট্রেন কমলাপুরে আনা হয়েছে। যাতে মানুষের ভোগান্তি না হয়।

এদিকে, গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ বাস স্টেশনেও দেখা গেছে যাত্রীদের ভিড়। গাড়িতে জায়গা না পেয়ে অনেককে গাড়ির ছাদে উঠতে দেখা গেছে। তবে এসব বাস স্টেশনের যানজটে নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে গাড়ি স্টেশনে পৌঁছানোর কারণে অপেক্ষমান যাত্রীরা কিছুটা ভোগান্তিতে পড়েছিলেন।

পবিত্র শবে কদর, ঈদ ও সাপ্তাহিক মিলিয়ে মোট মোট নয় দিনের ছুটির কবলে পড়েছে রাজধানী। তবে এর মধ্যে ২৮ ও ২৯ জুন দুই দিনের কর্মদিবস রয়েছে। অফিসে যাদের উপস্থিতি কিছুটা নমনীয় থাকবে তারা এই সুযোগে ওই দুই দিনের ছুটি নিয়ে বা বসকে ম্যানেজ করে নিয়েছেন। তারা একেবারে সব শেষ করে ২ জুলাই অফিসে ফিরবেন। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৬ জুন সোমবার ঈদুল ফিতর পালিত হবে। ঈদের পরের দিন ২৭ জুন পর্যন্ত সরকারি ছুটি রয়েছে। ২৮ জুন বুধবার ও ২৯ জুন বৃহস্পতিবার অফিস চলবে। এরপর আবার ৩০ জুন শুক্রবার ও ১ জুলাই শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। কাজেই ২ জুলাই রবিবার থেকে পরোদমে চলবে অফিস আদালত। এর আগে থেকেই মানুষ আবার  ফিরতে শুরু করবে এই রাজধানীতে।

/এসআই/এসএমএ/   

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ডিভোর্স দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্বামী
ডিভোর্স দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্বামী
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!