X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

‘আমাদের ঈদ নেই, আমরা ঈদ দেখি’

শফিকুল ইসলাম
২৬ জুন ২০১৭, ১৭:৫৭আপডেট : ২৮ জুন ২০১৭, ১৫:০৩

 

ঈদের দিন রিকশায় ঘুরাঘুরি, ছবি- নাসিরুল ইসলাম ১ ঈদের দিন রাজধানীর অধিকাংশ মানুষ শেকড়ের টানে বাড়ি গেলেও কিছু মানুষ রয়ে গেছেন এই শহরে। যারা যেতে পারেননি, তাদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ শ্রমজীবী। এদের কেউ রিকশা চালান, কেউ লেগুনা, কেউ বাস আবার কেউ সিএনজি চালান। ঈদের দিন সবার জন্য আনন্দের হলেও তাদের অনেকের মনেই আনন্দ নেই। অভাব তাদের আনন্দ অনেকটাই ফ্যাকাসে করে দিয়েছে। তাই তারা পরিবার-পরিজন ছেড়ে ঢাকায় রয়ে গেছেন। বাড়তি কিছু আয়ের জন্য তারা রাস্তায় নেমেছেন। এদিন যারা পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনকে নিয়ে বাইরে বের হয়েছেন, তাদেরকে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করেন তারা। এই সময় আবার অনেকে রিকশায় করে ফাঁকা নগরী ঘুরে দেখার স্বাদ জাগে। সেই স্বাদও মেটান তারা। আর এভাবেই কাটছে শ্রমজীবী মানুষের ঈদ আনন্দ।

দিনাজপুরের দিনমজুর আব্দুল গফুর। এলাকায় দিনমজুরের কাজ করলেও এখন এলাকায় কাজ নেই। সংসার চালাতে তো টাকার প্রয়োজন। কাজ না করলে সেই টাকা পাবেন কই? তাই রাজধানী ঢাকায় এসেছেন শবে বরাতের পরের দিন। উদ্দেশ্য রিকশা চালাবেন। তার ধারণা ঢাকায় রিকশা চালালে দিনে হাজার, ১২শ’ টাকা রোজগার কর সম্ভব। তাই ঢাকায় নেমে রাজধানীর মান্ডা এলাকায় পরিচিত একজনের মাধ্যমে একটি গ্যারেজ থেকে রিকশা নিয়ে নেমে পড়েন রাস্তায়।

আব্দুল গফুর জানান, রিকশার দৈনিক জমা দিতে হয় ১২০ টাকা। রাতে ফিরে খাওয়া দাওয়া সবই ওই গ্যারেজে। থাকা খাওয়া বাবদ গ্যারেজ ম্যানেজারকে দিতে হয় আরও ১২০ টাকা। বিনিময়ে গফুর মিয়া সকালে আলু ভর্তা বা ভাজি আর পাতলা ডাল দিয়ে গরম ভাত খেয়ে রিকশা নিয়ে নেমে পড়েন। সুযোগ মতো দুপুরে এসে যেকোনও ধরনের মাছ বা মুরগির মাংস ও এক প্রকার সবজি দিয়ে ভাত খেয়ে কিছুটা সময় বিশ্রাম নিয়ে আবারও রাস্তায় নামেন রিকশা নিয়ে। আর রাতে যখনই ফেরেন তখন ওই একই ধরনের খাবার খেয়ে গ্যারেজের পাটাতনের ওপরই ঘুমিয়ে পড়েন। এই নিয়মেই চলছে শবে বরাতের পরের দিন থেকে। যা ঈদের দিনও ব্যাহত রয়েছে। বাংলা ট্রিবিউনের এই প্রতিবেদকের সঙ্গে গফুর মিয়ার কথা হয় কমলাপুর রেল স্টেশনে। তখন সকাল সাড়ে ৯টা।

ঈদের দিনেও রাস্তায় কেন জানতে চাইলে গফুর মিয়া বলেন, ‘আমরা গরীব মানুষ। আমাদের আবার ঈদ। প্রায় দেড় মাস হয়ে এলো ঢাকায় এসেছি। এলাকায় কাজ নেই। দুই ছেলেমেয়েসহ চার জনের সংসার। সংসার চালাতে তো টাকা লাগে। তাই রোজগানের সন্ধানে ঢাকায় এসেছি। ঈদের সময় ছেলেমেয়েগুলোর জন্য মন টানে। কিন্তু কি আর করার? টাকার জন্য ঢাকায় এসেছি। সেই টাকা রোজগার না করে যদি বাড়ি গিয়ে ঈদের দিন বসে থাকি তাহলে তো আর চলবে না। তাই ঈদে বাড়ি যাইনি। ছেলেমেয়ের জন্য জামাকাপড় কেনার টাকা বিকাশে পাঠিয়েছি। ওরা সেই টাকা দিয়ে জামা কাপড় কিনেছে বলে মোবাইল ফোনে জানিয়েছে।’

ঈদের দিন রিকশায় ঘুরাঘুরি, ছবি- নাসিরুল ইসলাম ঈদের সময় আপনি কেন গেলেন না— জানতে চাইলে গফুর মিয়া বলেন, ‘কিছু বাড়তি আয়ের জন্যই যাইনি। ঈদের দিন রিকশা নিয়ে সকালেই নেমেছি। কাউকে স্টেশনে, আবার কাউকে ঈদগাহে নামিয়েছি। ঈদের দিন বলে যাত্রীরা নির্ধারিত ভাড়ার কিছু বেশিই দিয়েছেন।’

মুখে একরাশ হাসি দিয়ে গফুর মিয়া আরও বলেন, ‘ঈদের দিন রাত অবধি রিকশা চালিয়ে যা পাবো তা নিয়ে কাল মঙ্গলবার সকালে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হবো।’

শুধু দিনাজপুরের গফুর মিয়াই নন, সোমবার ঈদের দিন বেলা সোয়া ১০টার দিকে মতিঝিল সোনালী ব্যাংকের সামনে কথা হয় রাজবাড়ির সেলিম মিয়ার সঙ্গে। সিএনজি নিয়ে বসে আছেন সেলিম। জানতে চাইলে সেলিম মিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ঈদের দিন, গাড়ি কম। পাবলিক বাস তেমন চলে না। কিন্তু যারা ঈদে গ্রামে যাননি তারা নিজের বাসার কাজকর্ম সেরে আত্মীয়-স্বজনের বাসায় বেড়াতে যান, তখন তাদের কাছে সিএনজিই একমাত্র ভরসা। এ ছাড়াও ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা দলবেঁধে ঈদের দিন শিশুপার্ক, যাদুঘর, চিড়িয়াখানায় ঘুরতে যায়। তাদের বাহনও এই সিএনজি। ঈদের সময় বলে যাত্রীর সঙ্গে দরদাম করতে হয় না। মিটারে যেতে হয় না। পুলিশের বাড়াবাড়ি থাকে না। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে রাস্তায় জ্যাম নেই। ট্রিপ নিয়ে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই গন্তব্যে পৌঁছানো যায়। তাই আয়ও হয় ভালো।’

সেলিম মিয়া বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। ঘরে বসে থাকলে তো আর চলবে না। ঈদের ছুটি থাকবে আরও  তিন-চার দিন। নগরীতে মানুষ নেই। তখন তো আর আয় রোজগার হবে না। তখন ছেলেমেয়ে নিয়ে খাব কী? তাই ঈদের দিন ঘরে বসে না থেকে বাড়তি কিছু আয় করছি। যা দিয়ে আগামী তিন-চার দিন চলা যাবে। তাই ঈদের দিন গাড়ি নিয়ে রাস্তায় এলাম।’

একইভাবে রাজধানীর নতুন বাজার থেকে গুলিস্তানগামী লেগুনার চালক সোহাগ মিয়া ও তার হেলপার রুবেল ৬ নম্বর বাসের হেলপার হেমায়েত হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। ঢাকায় আমাদের পরিবার-পরিজন নেই। গ্রামে মা ভাইবোন আছে। তাদের জন্য টাকা পাঠিয়েছি। বসে থেকে কি করবো। তাই  ঈদের দিন গাড়ি নিয়ে নেমেছি। ভালোই আয় রোজগার হবে বলে মনে হচ্ছে। কারণ ব্যাখ্যা করে তারা দু’জনেই জানান, রাস্তায় জ্যাম নেই। নির্ধারিত ভাড়ার সঙ্গে কিছু বকশিসও দিচ্ছেন। অনেকে ইচ্ছা করেই কিছু টাকা বেশি দেন। আবার কারও কাছ থেকে চেয়েও নিচ্ছি। অন্য সময় তিন ঘন্টায় যা আয় করতাম, তা ঈদের দিন এক ঘন্টায় সে আয় করছি। ঈদের দিন তো কোনও সিটিং ফিটিং নাই। লোকজন যা পাই তাই উঠাই। রাস্তায় গাড়ি কম বলে বকশিসসহ ভাড়াও বেশি। তাই আয়ও বেশি।’

/এসএমএ/ 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
চট্টগ্রামে ক্রিকেটারদের ‘ক্লোজড ডোর’ অনুশীলন
চট্টগ্রামে ক্রিকেটারদের ‘ক্লোজড ডোর’ অনুশীলন
হাসপাতালের ৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ১০ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
হাসপাতালের ৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ১০ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
রাঙামাটিতে ডাম্প ট্রাক খাদে পড়ে ৬ শ্রমিক নিহত
রাঙামাটিতে ডাম্প ট্রাক খাদে পড়ে ৬ শ্রমিক নিহত
আরও বিস্তৃত হবে তাপপ্রবাহ, তবে সিলেটে হতে পারে বৃষ্টি
আরও বিস্তৃত হবে তাপপ্রবাহ, তবে সিলেটে হতে পারে বৃষ্টি
সর্বাধিক পঠিত
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?