ইদ্রিস আলী। বয়স ৭৫ বছর। বাড়ি নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায়। ৯ দিন ধরে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছেন। তার সঙ্গে রয়েছেন স্ত্রী এবং বড় ছেলে হযরত আলী। পরিবারের অভিভাবক হঠাৎ করে অসুস্থ হওয়ায় হাসপাতালেই এবারের ঈদ করতে হয়েছে তাদের। এই হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ডেই রয়েছে রোগী। তবে পুরুষ রোগীর তুলনায় নারী রোগীর সংখ্যা বেশি।
মঙ্গলবার বিকাল তিনটার দিকে মেডিসিন ওয়ার্ডে কথা হয় হযরত আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি নারায়ণগঞ্জের পাগলায় থাকি। আড়াইহাজারে বাবা-মা আর এক ছোট ভাই থাকেন। গত ২৫ রমজানে হঠাৎ করেই বাবার পেটে প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হয়।এরপর আড়াইহাজার থেকে সরাসরি সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে আসি। তার খাদ্যনালী পেঁচিয়ে আছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘চিকিৎসকরা বলেছেন অপারেশন করতে হবে। তবে বাবার হার্টের সমস্যা আছে বলে চিকিৎসকরা সময় নিচ্ছেন।’
হযরত আলী বলেন, ‘বাবা-মা অসুস্থ থাকলে পৃথিবীর কোনও কিছুই ভালো লাগে না। তারা সুস্থ থাকলে সবকিছু ঠিকভাবে চলে।’ ঈদ কেমন কাটালেন প্রশ্নে হযরত আলী বলেন,
‘সবার জন্য ঈদের পোশাক কিনেছি। মা-বাবার সঙ্গে রাতটা হাসপাতালেই কাটিয়েছি। আমার ছোটভাইও এখানে আছে। আমি সকালে বাসায় গিয়ে ঈদের নামাজ পড়ে স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে আবার হাসপাতালে এসেছি। এবার হাসপাতালেই বাবা-মায়ের সঙ্গে আমাদের ঈদ হয়েছে। তাদের হাসপাতালে রেখে কিভাবে বাড়িতে ঈদ করবো।’ হাসপাতালে রোগীদের সঙ্গে যারা থাকেন, তাদের কাছে প্রিয়জনের সুস্থতাই ঈদের আনন্দের মতো লাগে বলে জানান হযরত আলী।
ভোলা সদর উপজেলায় বাড়ি বাবুল বেপারীর। রাজধানীর মিরপুরে পরিবারের সঙ্গেই থাকেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার বাসায় সিলিং ফ্যান ঠিক করতে গিয়ে চেয়ার থেকে পড়ে যান পঞ্চাশোর্ধ বাবুল বেপারী। এতে তার হাতের কনুই ভেঙে যায়। ওই দিন থেকেই সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ট্রমা ও সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন তিনি। চিকিৎসক বলেছেন, তার অপারেশন লাগবে।কারণ কনুইয়ের হাড়ের একাংশ ভেঙে গেছে। আর একারণেই বাবুল বেপারীর এবারের ঈদ কেটেছে হাসপাতালে।
দেখা গেল,হাসপাতালে পরিবারের সবাই তাকে ঘিরে বসে আছেন। বাবুল বেপারী বলেন, ‘আমরা গবীর মানুষ। অন্য কোনও বেসরকারি হাসপাতালে যাইনি। ডাক্তার বলেছে অপারেশন লাগবে। আমরা তাই অপারেশনের জন্য অপেক্ষা করছি। এখানে কেবল ঈদের দিন ছাড়া প্রতিদিনই ডাক্তার আসেন। নার্সরাও সবসময় থাকেন। তারাই ওষুধ দিচ্ছেন। আমার সমস্যার কথাও তারাই শোনেন।’
বাবুল বেপারী আরও বলেন,‘আমার জন্য এবার পরিবারের ঈদ মাটি হয়ে গেছে। এজন্য আমার খারাপ লাগে। আমি পরিবারের সবাইকে নতুন কাপড়চোপড় পরতে বলছিলাম। কিন্তু কেউই নতুন পোশাক পরে নাই। সবাই হাসপাতালে আসছে। এখনতো ঈদ শেষ। অপারেশনের পর সবাই মিলে আনন্দ করবো।’
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ডেই কমবেশি রোগী রয়েছেন। জরুরি বিভাগ খোলা। সেখানে চিকিৎসক রয়েছেন। এছাড়া বহির্বিভাগ থেকে টিকিটও দেওয়া হচ্ছে। ঈদে হাসপাতাল থেকে রোগীদের জন্য বিশেষ খাবারও পরিবেশন করা হয়েছে।
পুরুষ রোগীর তুলনায় হাসপাতালের নারী ওয়ার্ডগুলোতে রোগীর সংখ্যা বেশি। সফুরা বেগম (৪৮) নামে এক নারী জ্বর নিয়ে নারী মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন। তার মেয়ে হাফসা জাহান জানান,তারা থাকেন রাজধানীর কাজীপাড়ায়। গত এক মাস ধরে তার মায়ের জ্বর। কমছে না দেখে তাকে গত বুধবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসক কিছু পরীক্ষানিরীক্ষা করতে দিয়েছেন। সেগুলোর রিপোর্ট এখনও পাননি।’
হাফসা বলেন, ‘মা অসুস্থ, তাই হাসপাতালে তার সঙ্গে আছি। ছোট দুই ভাইবোন বাসায়। তাদের দেখাশোনার জন্য বাবা বাসায় থাকেন। ওদের খাবারদাবার শেষে আবার হাসপাতালে আসেন।’ এবারের ঈদ হাসপাতালেই কেটেছে বলে জানালেন হাফসা।
/এআরআর/ এপিএইচ/