X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধ: কার কাজ কে করে?

জাকিয়া আহমেদ ও শাহেদ শফিক
২৯ জুন ২০১৭, ১৫:০৮আপডেট : ৩০ জুন ২০১৭, ০৭:০৭

চিকুনগুনিয়া

মশা নিধনের দায়িত্ব ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি ও ডিএনসিসি)। প্রতিবছর এ খাতে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হলেও মশার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাচ্ছে না নগরবাসী। এর ফলে বাড়ছে মশাবাহিত নানা রোগ। এডিশ মশার কারণে ডেঙ্গু রোগ বাড়লেও এ বছর সে রীতি ভেঙে চিকুনগুনিয়া রোগের পাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এরপরও টনক নড়ছে না সংস্থা দু’টির। ফলে বাধ্য হয়েই রাস্তায় নেমেছেন মেডিক্যাল শিক্ষার্থীরা। যদিও কাজটি তাদের নয়।

নিয়মিত মশা নিধন করা হচ্ছে দাবি করে প্রতিবছর সপ্তাহব্যাপী বাড়তি কর্মসূচি হাতে নেয় দুই সিটি করপোরেশন। তাও তেমন কাজে আসছে না। কেননা এডিস মশার প্রজনন স্থল কিউলেক্স মশার মতো ঝোপঝাড় বা পুকুর নর্দমা নয়। এর জন্ম ঘরের ভেতর বা আশপাশের অল্প স্বচ্ছ পানিতে।

সিটি করপোরেশনের ঘরের বাইরে স্প্রে ও ফগিং কর্মসূচি তেমন কোনও কাজে আসছে না। নিরাপত্তার কারণে সংস্থার মশক নিধনকর্মীরা কারও বাড়ির ভেতরে যেতে পারেন না। এদিকে, সিটি করপোরেশনের মশক নিধনকর্মীর সংখ্যাও অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন  স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ।

এ কারণে গত ১৭ জুন সরকারি-বেসরকারি মেডিক্যালের শিক্ষার্থীরা সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সচেনতনতামূলক কার্যক্রম চালান। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, সেন্ট্রাল কলেজ, বেসরকারি বিভিন্ন মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজসহ প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থী এ কাজ করছেন। ঢাকার অন্তত ১০০টি পয়েন্টে তারা সচেতনতামূলক কাজ করছেন।

তবে মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের এ সচেতনতামূলক কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে খোদ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মশা নিধনের কাজ কার, এটা সবাই জানেন। মশা নিধনের কাজ রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা, স্বাস্থ্য অধিদফতরের না। ঢাকা শহরের ৫০ লাখ বাসায় ঢোকা মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের পক্ষে সম্ভব না। কিন্তু এরপরও আমরা স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে একটি প্রতীকী সচেতনতামূলক কর্মসূচি দিয়েছি, যেখানে শিক্ষার্থীরা রাস্তার পাশের আবজর্না ধ্বংস করতে পারলেও বাসা–বাড়িতে ঢুকতে পারেননি।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা শহরে এভাবে কারও বাসায় ঢোকা আসলেই খুব কষ্টকর কাজ। কেউ কাউকে বিশ্বাস করেন না।

গত ১৭ জুন সরেজমিনে মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, তারা রাস্তার পাশের ডাবের খোসা, দোকানের পাশে ফেলে রাখা টায়ারসহ বিভিন্ন আবর্জনা ধ্বংস করেছেন। কিন্তু তারা বাড়ির ভেতরে ঢুকতে পারেননি। ধানমন্ডি ৩২ এর মাথায় অবস্থিত কয়েকটি বাড়িতে ঢুকতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েন মেডিক্যাল শিক্ষার্থীরা। অনেক বাড়ির প্রধান ফটক থেকেই তাদের ফেরত আসতে হয়েছেন।

রাজধানীর একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ শিক্ষার্থী তপতী জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যেভাবে ঘরের ভেতরের জমে থাকা পানির বিষয়ে সচেতন করতে চেয়েছিলাম, সেভাবে পারিনি। বেশিরভাগ বাড়ির ভেতরেই ঢুকতে পারিনি।’

স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তহমিনা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘উত্তর সিটি করপোরেশনের ৯টি ওয়ার্ড ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫টি জোনে সিটি করপোরেশনের সাহায্য নিয়ে মেডিক্যাল শিক্ষার্থীরা কাজ করেছেন। এখন আমাদের প্রত্যাশা সিটি করপোরেশন বাকি কাজ এগিয়ে নিয়ে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের কার্যক্রমের পর সিটি করপোরেশন দু’জন করে লোক নিয়োগ করেছে মশা নিধনের জন্য, এখন গণমাধ্যম ফলো করুক তারা কাজটিকে এগিয়ে নিচ্ছে কিনা।’

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বিষয়টি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, মশা নিধনের কাজ যাদের, তারা যদি ঠিকমতো তাদের কাজ করতেন, তাহলে মশা থাকতো না। যাদের কাজ তারা ঠিকমতো তাদের দায়িত্ব পালন করছেন না বলেই আজ ঘরে ঘরে চিকুনগুনিয়া ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু সরকারি পদে থেকে আরেকটি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে এভাবে বলতে পারি না বলেই মুখ বুজে থাকতে হচ্ছে।

এদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মশাবাহিত চিকুনগুনিয়া রোগের ঝুঁকি রয়েছে রাজধানীর প্রায় ২৩টি এলাকায়। এর সবকটিই উত্তর সিটি করপোরেশনে। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে গত ২১ জুন বিকেলে ডিএনসিসির নগর ভবনে বাজেট পেশ অনুষ্ঠানে মেয়র আনিসুল হক বলেন, ‘আমরা চাইলেও অনেক এলাকায় মশার ওষুধ ছিটাতে পারি না। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, উত্তরার কিছু এলাকা ও সেনানিবাস এলাকায় আমাদের ওষুধ ছিটানোর অনুমতি নেই। ওইসব এলাকায় মশা জন্মায়। সেখান থেকে ডিএনসিসির বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে যায়। তবু আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এছাড়া নগরবাসীর অসচেতনতাও অন্যতম কারণ।’

ওই দিন ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এসএমএম সালেহ ভূঁইয়া বলেন, ‘বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেও চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাসহ অন্যান্য দেশে এ বছর রোগটি ছড়িয়েছে। এ রোগ প্রতিরোধে প্রয়োজন সচেতনতা। সচেতন হলে এ রোগ এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব।’

এদিকে, চলতি বছর চিকুনগুনিয়া রোগের প্রাদুর্ভাবের শুরুতে প্রায় সপ্তাহ ধরে দক্ষিণ সিটি এলাকায় মানসম্পন্ন কোনও ওষুধ না থাকায় ওষুধ ছিটানো বন্ধ ছিল বলে ডিএসসিসির স্বাস্থ্য বিভাগের নির্ভর একটি যোগ্য সূত্র জানিয়েছে। সূত্রটি আরও জানায়, ১১ মে থেকে ১৭ মে পর্যন্ত এক সপ্তাহ ধরে সংস্থায় মশার ডিম মারার ওষুধ লার্ভিসাইড ছিল না। ওষুধ সরবরাহকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মানহীন ওষুধ সরবরাহ করায় ডিএসসিসি সেগুলো ফিরিয়ে দেয়। নতুন ওষুধ আসতে প্রায় এক সপ্তাহ লেগে যায়। যে কারণে সপ্তাহজুড়ে কর্মীরা নগরীতে সকালে লার্ভিসাইড ওষুধ ছিটাতে পারেননি। এতে মশা বেড়েছে। ছড়িয়ে পড়েছে নতুন রোগ চিকুনগুনিয়া।

সিটি করপোরেশন জানিয়েছে, দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় মশা নিধনের জন্য ৬ শতাধিক কর্মী রয়েছেন। এর মধ্যে দক্ষিণ সিটিতে ২৮৬ জন। করপোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডে আয়তন ভেদে ৩-৫ জন কর্মী রয়েছেন। এসব কর্মী সিটি করপোরেশনের প্রতিটি অঞ্চলের সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তার তদারকিতে কাজ করেন। গত ১৫-১৬ অর্থবছরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে মশা নিধনের জন্য ১১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। এ বছর (২০১৬-১৭) এর পরিমাণ বাড়িয়ে করা হয়েছে ১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। উত্তর সিটি করপোরেশনে গত অর্থবছরে (২০১৬-১৭) এ বাজেট ছিল ২৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা। কিন্তু এর মধ্যে ব্যয় করা হয়েছে ১৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। প্রায় ৬ কোটি টাকা খরচ করা হয়নি। এ বছর বরাদ্দ কমিয়ে রাখা হয়েছে ২০ কোটি টাকা। প্রয়োজন না হওয়ায় মশা নিধন খাতে বরাদ্দের বাকি টাকা খরচ করা হয়নি বলে দাবি করেছেন ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।

/এমএনএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!