X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

বন্যাকবলিত ৩ জেলায় পানীয় জলের সংকট, ছড়াচ্ছে রোগবালাই

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০৫ জুলাই ২০১৭, ১৯:৩৬আপডেট : ০৬ জুলাই ২০১৭, ০৫:২২

সিলেট, মৌলভীবাজার ও কক্সবাজারের বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে এসব এলাকার মানুষজন নানা পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। বুধবার (৫ জুলাই) সিলেট আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, জেলায় আরও এক সপ্তাহ বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সিলেটের আটটি উপজেলারও বন্যা পরিস্থিতির কোনও উন্নতি হয়নি। তবে মৌলভীবাজারে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতির দিকে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

(বাঁ থেকে) মৌলভীবাজার, সিলেট ও কক্সবাজারের বন্যার চিত্র (ছবি: বাংলা ট্রিবিউন) এদিকে, টানা চারদিনের বৃষ্টিতে কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সড়ক ডুবে যাওয়ায় বন্ধ রয়েছে কক্সবাজার-টেকনাফ যোগাযোগ। মেরিন ড্রাইভ সড়ক হয়ে কক্সবাজারের সঙ্গে উখিয়া ও টেকনাফের যানবাহনগুলো চলাচল করছে।

বুধবার বিকালে ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শাহ কামাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কয়েক জেলায় সাম্প্রতিক বন্যার প্রেক্ষাপটে মন্ত্রণালয়ে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। সেখান থেকে সার্বক্ষণিক জেলাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। জেলা প্রশাসকরা কেন্দ্রের সঙ্গে জেলার সমন্বয় করছেন।’

জেলাগুলোতে পর্যাপ্ত ত্রাণ পাঠানো হয়েছে জানিয়ে সচিব বলেন, ‘জেলা প্রশাসকদের চাহিদার ভিত্তিতে প্রয়োজনে আরও ত্রাণ পাঠানো হবে। সিলেট জেলার জন্য ৮০০ মেট্রিক টন চাল, ১২ লাখ টাকা ও ২০০ প্যাকেট শুকনো খাবার পাঠানো হয়েছে। মৌলভীবাজারের জন্য ৫০০ টন চাল ও ১০ লাখ টাকা এবং কক্সবাজারের জন্য ১০০ টন চাল ও দুই লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে।’

মৌলভীবাজারে বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ সিলেট : জেলার ১৩ উপজেলার মধ্যে ৮টিতে বন্যা পরিস্থিতির কোনও উন্নতি দেখা যায়নি বুধবার। তবে কিছু কিছু প্লাবিত এলাকায় পানি নামতে শুরু করেছে। সাম্প্রতিক বন্যায় জেলার ৫৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার ৪৬৬ গ্রাম প্লাবিত হয়। বন্যাকবলিত এলাকাগুলোয় বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
পাশাপাশি পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন পানিবন্দি মানুষজন। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাও। সব মিলিয়ে নারী, শিশু ও বয়স্কদের পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ।
বাংলা ট্রিবিউনের সিলেট প্রতিনিধি তুহিনুল হক তুহিনকে সিলেটের জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার বলেছেন, ‘রোগ বালাই মোকাবিলায় প্রতি উপজেলায় মেডিক্যাল টিম কাজ করছে। পাশাপাশি প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যার্দুগত এলাকায় ত্রাণ ও অন্যান্য সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে।’
সিলেট আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা সাঈদ আহমদ বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, জেলায় বুধবার সকাল ৬টা র্পযন্ত ১৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আরও এক সপ্তাহ বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
মঙ্গলবার সিলেটে ৯৫ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়। বন্যাকবলিত গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, জকিগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর, কোম্পানীগঞ্জ, দক্ষিণ সুরমায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বুধবার বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। ত্রাণ নিয়ে কোনও সমস্যা নেই বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার। 

কক্সবাজারের বন্যার চিত্র মৌলভীবাজার : এই জেলার পাঁচ উপজেলায় পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন অন্তত তিন লাখ মানুষ। বন্যাকবলিত এলাকায় টিউবওয়েল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। খাবার পানি সংগ্রহ করতে পানিবন্দি মানুষজনকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এদিকে কুশিয়ারা নদী এবং হাকালুকি, কাউয়াদীঘি ও হাইল হাওরের পানি কমতে শুরু করায় মৌলভীবাজারে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে বলে জানা গেছে। মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ইন্দ্র বিজয় শংকর চক্রবর্তী বাংলা ট্রিবিউনকে বুধবার বিকালে বলেন, ‘কুশিয়ারা নদীর পানি কমতে শুরু করায় হাকালুকি হাওর পাড়েও পানি কমতে শুরু করেছে। আশা করি ২-১ দিনের মধ্যে পানি কমে যাবে।’
বাংলা ট্রিবিউনের মৌলভীবাজার প্রতিনিধি সাইফুল ইসলামকে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মো. তোফায়েল ইসলাম বলেন, ‘কুশিয়ারার পানি কমায় জুড়ী, বড়লেখা ও কুলাউড়ার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করেছে। তাছাড়া সিলেট ও মৌলভীবাজারে আজ (বুধবার) ভারী বৃষ্টি হওয়ার পূর্বাভাস থাকলেও অত বৃষ্টি হয়নি।’
বুধবার মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আখাইলকুড়া ইউনিয়নের ৩৪০ পরিবারে মধ্যে ১৩ কেজি করে গম ও ৫০ পরিবারের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে বলে জানান মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক।
মৌলভীবাজার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস জানিয়েছে, বন্যার পানি কারণে ১৪২টি প্রাথমিক ও ৪১টি মাধ্যমিক স্কুলে পাঠদান স্থগিত রয়েছে। 

কক্সবাজার : বাংলা ট্রিবিউনের কক্সবাজার প্রতিনিধি আব্দুল আজিজ জানিয়েছেন, ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের কারণে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে চকরিয়ার পৌরসভারসহ একাধিক এলাকা। চকরিয়া ছাড়াও জেলার পেকুয়া, ঈদগাঁও, রামু, উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এসব উপজেলার বিভিন্ন স্থানে কিছু কিছু বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। টানা চারদিনের ভারী বর্ষণে এ বন্যা দেখা দেয়। এতে এসব এলাকার অন্তত সাড়ে পাঁচ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জেলার বাঁকখালী ও মাতামুহুরী নদীতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
পানিতে তলিয়ে গেছে আন্তঃসড়কগুলো। ভেঙে গেছে বেড়িবাঁধসহ অধিকাংশ গ্রামীণ সড়ক ও কালভার্ট। এভাবে ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকলে জেলায় বন্যা পরিস্থিতি মারাত্মক অবনতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। বন্যার পানিতে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক ডুবে যাওয়ায় যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। তবে বিকল্পভাবে মেরিন ড্রাইভ সড়ক হয়ে কক্সবাজার, উখিয়া ও টেকনাফের মধ্যে যানচলাচল করছে বলে জানা যায়। গত ২৮ ঘণ্টায় কক্সবাজারে ১৯৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানায় আবহাওয়া অফিস।
/এএম/জেএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
হাজারীবাগে নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে শ্রমিকের মৃত্যু
হাজারীবাগে নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে শ্রমিকের মৃত্যু
ব্রাজিলিয়ান মিগেলের গোলে কষ্টে জিতলো কিংস
ব্রাজিলিয়ান মিগেলের গোলে কষ্টে জিতলো কিংস
তীব্র গরমে সুপার লিগে দুই দিন করে বিরতি
ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগতীব্র গরমে সুপার লিগে দুই দিন করে বিরতি
ড্রিমলাইনারের কারিগরি বিষয়ে বোয়িংয়ের সঙ্গে কথা বলতে বিমানকে মন্ত্রীর নির্দেশ
ড্রিমলাইনারের কারিগরি বিষয়ে বোয়িংয়ের সঙ্গে কথা বলতে বিমানকে মন্ত্রীর নির্দেশ
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া