X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীতে উল্টো পথে গাড়ি চালানোয় প্রতিদিন ১৬২ মামলা

রাফসান জানি
১৮ জুলাই ২০১৭, ২৩:০০আপডেট : ১৮ জুলাই ২০১৭, ২৩:০৩

উল্টো পথে গাড়ি (ফাইল ফটো)

রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে উল্টো পথে গাড়ি চালানোর কারণে গড়ে প্রতিদিন ১৬২টি মামলা হয়ে থাকে। উল্টো পথে গাড়ি চালানোয় গত জুন মাসে মোট চার হাজার ৮৭১টি মামলা হয়েছে। একই কারণে ১৭ জুলাই পর্যন্ত মামলা হয়েছে প্রায় তিন হাজার। মূলত ধৈর্যহীন ক্ষমতাবানরাই ট্রাফিক আইন ভেঙে উল্টো পথে চলেন। ট্রাফিক বিভাগ ও ট্রাফিক পুলিশ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

ট্রাফিক বিভাগের অ্যাডিশনাল ডেপুটি কমিশনার (ট্রাফিক অ্যাডমিন অ্যান্ড রিসার্চ) মো. জাহিদুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউন বলেন, ‘উল্টো পথে গাড়ি চালানোর জন্য গত জুন মাসেই কেবল ডিএমপিতে মামলা হয়েছে চার হাজার ৮৭১টি। প্রতি মাসেই এ সংখ্যা বাড়ছে। আমরা আইন প্রয়োগ করছি। কিন্তু তাতেও আইন অমান্যকারীদের সংখ্যা কমছে না। জনগণের মধ্যে যতদিন আইনের প্রতি শ্রদ্ধা ও আইন মেনে চলার অভ্যাস তৈরি না হবে, ততদিন এই অবস্থার উন্নতি হবে না।’

কোন ধরনের মানুষ বেশি উল্টো পথে চলেন, এমন প্রশ্নে ট্রাফিক পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘ধৈর্যহীন ক্ষমতাবানরা উল্টো পথে বেশি চলেন। এদের মধ্যে রয়েছেন- এমপি, মন্ত্রী, সচিব, বিচারপতি, পুলিশ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, সাংবাদিক। এছাড়া সাধারণ মানুষও রয়েছেন, যারা হরহামেশাই ট্রাফিক আইন ভাঙছেন।’

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘যখন ধৈর্যহীন ক্ষমতাবানরা ট্রাফিক আইন না মেনে উল্টো পথে চলেন, তখন সাধারণ মানুষ তাদের দেখে উদ্বুদ্ধ হন।’

কলাবাগান সিগন্যাল থেকে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের সিগন্যালের দিকে উল্টো পথে আসছিলেন এক মোটরসাইকেল আরোহী। কেন উল্টো পথে আসলেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বামের রাস্তায় জ্যাম, তাই উল্টো পথে এসেছি। একটু দ্রুত যেতে হবে বলে এই পথে আসা।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বাসের ড্রাইভার বলেন, ‘আমরা তো আর স্বেচ্ছায় উল্টো পথে যাই না। ছাত্ররা আমাদের উল্টো পথে নিয়ে যেতে বলে, তাই যাই। বলা যায়, ছাত্ররা অনেকটা আমাদের উল্টোপথে যেতে বাধ্য করে। কিন্তু এখন আগের তুলনায় কমই যাই।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উল্টো পথে গাড়ি চালানোয় কেবল আইন অমান্য করাই হয় না, এ কারণে ঘটে দুর্ঘটনাও। গত ২ জুলাই সন্ধ্যায় রাজধানীর হোটেল রূপসী বাংলা মোড়ে উল্টো পথে চলা একজন বিচারপতির গাড়ির ধাক্কায় আহত হন এক মোটরসাইকেল আরোহী। হাইকোর্টের একজন বিচারপতির গাড়ি উল্টো পথে মিন্টু রোড থেকে রূপসী বাংলা মোড় হয়ে বাংলা মোটরের দিকে যাচ্ছিল। এসময় স্বাভাবিক পথে মোটরসাইকেলে চড়ে আসছিলেন জেবিন ফয়সাল। কিন্তু উল্টো পথে আসা গাড়ি হঠাৎ সামনে চলে আসায় ওই দুর্ঘটনা ঘটে। তবে বিচারপতি তখন গাড়িতে ছিলেন না, তার গাড়িচালক কামাল হোসেনকে আটক করে পুলিশ। তবে দুর্ঘটনার শিকার যুবকের পরিবারের সঙ্গে আপস হওয়ায় গাড়িচালক কামালকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পুলিশ ছেড়ে দিলেও উল্টো পথে গাড়ি চালিয়ে দুর্ঘটনা ঘটানোর অভিযোগে কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার শহীদুল আলম ঝিনুক।

ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ক্ষমতাবানদের উল্টো পথে গাড়ি চালিয়ে যাওয়া ঠেকাতে গিয়ে আক্রমণের শিকার হয়ে থাকেন তারা। সার্জেন্ট কাওসার হামিদ জানান, গত ১৭ জুলাই বাংলামোটর সিগন্যালে দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। এসময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি ডাবল ডেকার বাসের উল্টো পথে চলা ঠেকাতে গিয়ে তিনি শিক্ষার্থীদের মারধরের শিকার হন। এ ঘটনায় আজ (১৮ জুলাই) রমনা থানায় সার্জেন্ট কাওসার হামিদ বাদী হয়ে মামলা করেছেন।

সার্জেন্ট কাওসার হামিদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি যথারীতি সিগন্যাল আটকে দাঁড়িয়েছিলাম। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়িগুলো পেছনে ছিল। বেশ কয়েকজন ছাত্র নেমে এসে আমাকে বলে, আমি যেন সিগন্যাল ছেড়ে দিয়ে তাদের উল্লো পথে যেতে দিই। আমি এ কাজ করতে পারবো না বলে জানালে তারা আমার সঙ্গে তর্ক জুড়ে দেয়। একপর্যায়ে তারা আমার গায়ে হাত তোলে।’

পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আহত হলেও অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারায় আমি খুশি। নিজের অবস্থান থেকে আমি অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি। অন্যায়কে সহ্য করা আরেক অন্যায়। আমি আইনের লোক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলাম। তারা আমাকে এসে বলে, আইন ভেঙ্গে তাদের উল্টো পথে যেতে দিতে!’

উল্টো মানসিকতার লোকেরাই উল্টোপথে গাড়ি চালায় বলে মন্তব্য করেন ডিএমপির ট্রাফিক উত্তর বিভাগের ডেপুটি কমিশনার প্রবীর কুমার। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘উল্টো মানসিকতা যাদের, তারাই সোজা রাস্তায় না গিয়ে উল্টো রাস্তায় চলে। নিয়ম অনুযায়ী সবার সোজা পথে যাওয়ার কথা। কিন্তু আইনের প্রতি শ্রদ্ধা না থাকায় তারা উলটো পথে গিয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘উল্টো পথে চললে আমরা ব্যবস্থা নিই। স্কুল-কলেজ, টার্মিনালসহ নানা স্থানে ট্রাফিক আইনের ব্যাপারে সচেতনতা বাড়াতেও কাজ করে যাচ্ছি। আমরা লিফলেট বিলি, মাইকিং করছি। সচেতনা বৃদ্ধিতে স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েদের নিয়ে প্ল্যাকার্ড বহন করছি। মূল কথা হলো- মানুষকে সচেতন হতে হবে। সাধারণ মানুষ সচেতন হলে এই সমস্যা থাকবে না।’

/আরজে/এমএ/টিএন/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বিয়ে না করানোয় মাকে হত্যা
বিয়ে না করানোয় মাকে হত্যা
ব্রাজিলের জার্সিতে এই বছরই শেষ মার্তার
ব্রাজিলের জার্সিতে এই বছরই শেষ মার্তার
৩ মে ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ ডেকেছে ইসলামী আন্দোলন
৩ মে ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ ডেকেছে ইসলামী আন্দোলন
ইসলামী ব্যাংকের নোয়াখালী জোনের কর্মকর্তা সম্মেলন
ইসলামী ব্যাংকের নোয়াখালী জোনের কর্মকর্তা সম্মেলন
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী