X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্ট: মুখোমুখি মন্ত্রণালয় ও বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী

রশিদ আল রুহানী
১৯ জুলাই ২০১৭, ১৪:৪৬আপডেট : ১৯ জুলাই ২০১৭, ১৪:৪৭

শিক্ষা মন্ত্রণালয় এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্টে ১০ শতাংশ হারে টাকা কেটে নেওয়ার ঘোষণায় মন্ত্রণালয় ও জাতীয় শিক্ষক কর্মচারী ফ্রন্ট মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে। মন্ত্রণালয় বলছে, সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হবে না। এর প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষক সংগঠনগুলোর নেতারা বলেছেন, ‘একের পর এক কর্মসূচি দিয়ে দাবি আদায় করা হবে।’

বিদ্যমান বিধি অনুযায়ী অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টে প্রতি মাসে মূল বেতনের মোট ৬ শতাংশ টাকা কেটে রাখা হয়। এর মধ্যে অবসর সুবিধার জন্য ৪ শতাংশ এবং কল্যাণ ট্রাস্টের জন্য ২ শতাংশ। সম্প্রতি ওই টাকা বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করে মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এর মধ্যে অবসর সুবিধা বোর্ডে মূল বেতনের ৬ শতাংশ এবং কল্যাণ ট্রাস্টের জন্য ৪ শতাংশ টাকা কেটে রাখা হবে।

দেশে বর্তমানে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ। অবসরের পরপরই টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও এখন তাদের চার বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। এ কারণেই শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রতি মাসের বেতন থেকে চাঁদার হার বাড়িয়ে এই সমস্যার সমাধান করতে চাইছে অবসর ও কল্যাণ বোর্ড। অন্যদিকে, অর্থমন্ত্রণালয় থেকেও বড় অঙ্কের থোক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

তবে মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। সম্প্রতি শিক্ষক কর্মচারীদের ১১ সংগঠনের জোট জাতীয় শিক্ষক-কর্মচারী ফ্রন্ট বেতন থেকে টাকা না কেটে বাজেটে বরাদ্দ দিয়ে আর্থিক সক্ষমতা বাড়ানোর দাবি জানায়। গত (১৬ জুলাই) সংবাদ সম্মেলন করেও এই দাবি জানান জোটের নেতারা।

শিক্ষক-কর্মচারী ফ্রন্টের প্রধান সমন্বয়কারী অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আর্থিক সুবিধা বাড়ানোর জন্য সুনির্দিষ্ট যুগোপযোগী কর্মসূচি নিতে হবে মন্ত্রণালয়কে। বন্ড চালুর মাধ্যমেও তা হতে পারে। বাজেটে আলাদা বরাদ্দ দিয়েও করা যেতে পারে। কিন্তু বেতন থেকে টাকা কেটে অবসরের টাকা পরিশোধ করা হবে, এটার প্রতিবাদ জানাই। মন্ত্রণালয়কে এমন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে হবে।’

অন্যদিকে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক) রুহী রহমান সোমবার (১৭ জুলাই) দুপুরে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের সুযোগ নেই। এছাড়া এটা তো শিক্ষক-কর্মচারীদের ভালোর জন্যই করা হয়েছে। এখন কোন মাস থেকে টাকা কাটা হবে, সেটা নিয়েই আলোচনা হচ্ছে।’ জুলাই থেকেই বাস্তবায়ন করা হবে বলেও তিনি জানান।

মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষক-কর্মচারী ফ্রন্টের প্রধান সমন্বয়কারী বলেন, ‘মন্ত্রণালয় কী বলছে, সেটা মন্ত্রণালয়ের ব্যাপার। আমাদের দাবি নিয়ে আমরা এগুবো। অবসর-কল্যাণের চাঁদার হার বাড়ানো নিয়ে দেশব্যাপী শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। যে বৈঠকে চাঁদা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, ওই বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে এ বিষয়ে কোনও প্রস্তাব ছিল না।’

ফ্রন্টের প্রধান সমন্বয়কারী আরও বলেন, ‘অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে শিক্ষকরা এখন যে সুবিধা পাচ্ছেন, চাঁদা বাড়ালেও একই সুবিধা পাবেন। তাহলে এই চাঁদা বাড়ানোর যৌক্তিকতা কোথায়? এরই পরিপ্রেক্ষিতে অবসর ও কল্যাণের চাঁদা কাটার হার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে হবে।’

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ-সুবিধা বোর্ডের সদস্যসচিব শাহজাহান আলম বলেন, ‘বর্তমানে দুই শতাংশ হারে প্রতি মাসে কল্যাণ বাবদ আয় হয় ১৭ কোটি টাকা। নতুন হারে টাকা কেটে রাখলে এই টাকা হবে মাসে ৩৪ কোটি টাকা। এ ছাড়া সরকারি বরাদ্দ মিলিয়ে নিয়মিত কল্যাণ-সুবিধা দেওয়া সম্ভব হবে।’

সরকারের এই সিদ্ধান্তের পর গত শুক্রবার (১৪ জুলাই) শিক্ষক-কর্মচারীদের ১১টি সংগঠনের জোট জাতীয় শিক্ষক কর্মচারী ফ্রন্ট সংবাদ সম্মেলন করে আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। ওই সংবাদ সম্মেলন থেকে তারা ১০ দিনব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করে। কর্মসুচি অনুযায়ী মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) প্রত্যেক জেলা সদরে সংবাদ সম্মেলন করবে সংগঠনগুলো। মানববন্ধন কর্মসূচি ২০ জুলাই, দাবির পক্ষে মিছিল ২৩ জুলাই এবং জেলা সদরে শিক্ষক-কর্মচারী সমাবেশ ও জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে শিক্ষামন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হবে ২৮ জুলাই। এ সময়ের মধ্যে অবসর ও কল্যাণের জন্য বর্ধিত চাঁদা প্রত্যাহার না হলে আগামী ৭ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবেন জোট নেতারা।

এর আগে, গত রবিবার (১৬ জুলাই) সরকারের কাছে ৬ দফা প্রস্তাব দেয় জাতীয় শিক্ষক কর্মচারী ফ্রন্ট। সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সরকারের কাছে এ দাবি জানানো হয়।

/এমও/এসএমএ/এমএনএইচ/

আরও পড়ুন- আ. লীগ আসলে পুরস্কার, বিএনপি থাকলে তিরস্কার

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৩০ মামলার বিচার শেষের অপেক্ষা
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৩০ মামলার বিচার শেষের অপেক্ষা
উপজেলা নির্বাচন: ওসির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ
উপজেলা নির্বাচন: ওসির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ
মেলায় জাদু খেলার নামে ‘অশ্লীল নৃত্য’, নারীসহ ৫ জন কারাগারে
মেলায় জাদু খেলার নামে ‘অশ্লীল নৃত্য’, নারীসহ ৫ জন কারাগারে
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা