X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

নবায়নযোগ্য শক্তির বিদ্যুতের বিকল্প প্রস্তাব আনছে জাতীয় কমিটি

উদিসা ইসলাম
২১ জুলাই ২০১৭, ০৮:৩৫আপডেট : ২১ জুলাই ২০১৭, ০৯:০৭

নবায়নযোগ্য শক্তি উৎস হিসেবে সৌর বিদ্যুতের ব্যবহার সাম্প্রতিক সময়ে বেড়েছে বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে (ছবি- সংগৃহীত) সরকারের ‘পাওয়ার সিস্টেম মাস্টারপ্ল্যান-২০১৬’ এর সমস্যা চিহ্নিত করে এর বিকল্প হিসেবে কেবল নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারের প্রস্তাব নিয়ে আসছে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি। একটি গবেষক দল দীর্ঘ প্রস্তুতি শেষে আগামী শনিবার (২২ জুলাই) সেটি জনসম্মুখে উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যেখানে বলা হচ্ছে, আগামী ১৫ বছরে দেশের ৫০ শতাংশ বিদ্যুতের চাহিদা নবায়নযোগ্য শক্তি দিয়ে পূরণ করা সম্ভব। সেই বিদ্যুতের দাম এখনকার তুলনায় অনেক কম হবে। কারণ, সরকারের পুরো মাস্টারপ্ল্যান আমদানি নির্ভর জ্বালানি নীতির ওপর নির্ভরশীল আর জাতীয় কমিটির আসন্ন প্রস্তাব পরিবেশবান্ধব। অবশ্য নবায়নযোগ্য শক্তির সম্ভাবনা থাকলেও কার্যকর করার বাস্তবতা উড়িয়েই দিচ্ছেন কেউ কেউ।
নবায়নযোগ্য শক্তি বলতে যে শক্তিকে বারবার ব্যবহার করা যায় এবং ব্যবহারের পর নিঃশেষ হয়ে যায় না, তাকে বোঝানো হয়ে থাকে। এ শক্তি একবার ব্যবহারের পর ফের ব্যবহারের সুযোগ থাকে।
সরকার যৌক্তিক আলোচনায় উৎসাহী নয় অভিযোগ করে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি গত ১৩ জুলাই বিদ্যুৎ উৎপাদনে জনবান্ধব ও পরিবেশবান্ধব যে বিকল্প প্রস্তাব উপস্থাপনের ঘোষণা দিয়েছে তার প্রধান হাতিয়ার এই নবায়নযোগ্য শক্তি। প্রস্তাব তৈরির কারণ হিসেবে কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিকল্প উপায় নিয়ে জাতীয় কমিটি অনেক দিন ধরেই বলে আসছে। বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা ও গবেষণা করে তারা ইতোমধ্যে প্রস্তাব তৈরিও করেছেন। আগামী ২২ জুলাই এটি জনগণের সামনে তুলে ধরা হবে।
জাতীয় কমিটির এ প্রস্তাব পরিকল্পনার একজন প্রকৌশলী মাহবুব সুমন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সরকারের পরিকল্পনার সংকট হলো জ্বালানি নীতিটি সম্পূর্ণভাবে আমদানি নির্ভর এবং এটা পরিবেশগত সংকট তৈরির জন্য যথেষ্ট। আমরা চেষ্টা করেছি বিকল্প জ্বালানি নিয়ে নতুন করে ভাবতে, যার বেশিরভাগই নবায়নযোগ্য শক্তিকেন্দ্রিক। আমাদের দেশে যেগুলো অ্যাভেইলেবল (সহজলভ্য), সেগুলো দিয়ে এনার্জি মিক্স তৈরি করে এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০৪১ সাল পর্যন্ত একটা পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর ফলে আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ কমে আসবে।
সরকারের পরিকল্পনার সঙ্গে পার্থক্যের জায়গা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা যে বিকল্প জ্বালানি ব্যবহার করছি তার বেশির ভাগই দেশীয় উৎস। আর যেটা সরকার করছে সেটার পুরোটাই আমদানি নির্ভর। যেমন-তেল আমদানি, কয়লা, পারমাণবিক বিদ্যুৎ সেটাও আমদানি করা। আমাদের যে মিক্স সেটার মধ্যে আছে নিজেদের গ্যাস, সৌরবিদ্যুৎ, বর্জ্য বিদ্যুৎ এবং অল্প কিছু তেল। তেলটা নিয়ে আমরা কাজ করছি, এটি কিভাবে রিপ্লেস করা যায় অন্য কোনও ‘ডমেস্টিক সোর্স’ দিয়ে তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা চলছে।
কেন এটি জরুরি তার ব্যাখ্যায় মাহবুব সুমন বলেন, ‘সরকার যে পরিকল্পনা করছে তার ফলে দক্ষিণে যে সবুজ বেষ্টনি আছে সেটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিপরীতে আমরা চেষ্টা করেছি এনার্জি মিক্স তৈরি করতে, যেটা পরিবেশের জন্য হুমকি হবে না।’ পানির ব্যবহারও কমে আসবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের যেহেতু পানির সংকট আছে, শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট হয়, সেহেতু এ ধরনের উদ্যোগে কম ব্যবহার করে বেশি উৎপাদনের দিকে মনোযোগ থাকা জরুরি।’ উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘কয়লা বা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রতি মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে তিন থেকে পাঁচ হাজার লিটার পানি লাগে। অন্যদিকে, নবায়নযোগ্য শক্তিতে পানি খরচ হবে ৭০ থেকে ৭৫ লিটার।’
আমাদের এত বিদ্যুৎ লাগে, এই পদ্ধতিতে পূরণ করা সম্ভব হবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘একইসঙ্গে হবে এবং হবেও না-বলতে হয়। হবে না বলছি কারণ ‘যে পরিমাণ বিদ্যুৎ লাগে’ কথাটির মধ্যে টাইমফ্রেম আছে। এ মুহূর্তে যে প্রযুক্তি তা দিয়ে চাহিদার একশ’ ভাগ বিদ্যুৎ পাওয়া সম্ভব নয়। নবায়নযোগ্য শক্তির বাজারে অ্যাভেইলেভল যে প্রযুক্তি তা দিয়ে সম্ভব নয়। কিন্তু ২০/৩০ ভাগ এখনই সম্ভব। ১০ থেকে ১৫ বছর সময় দিলে ৫০ ভাগই সম্ভব।’
ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. সুব্রত কুমার আদিত্য বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এটি আসলেই সম্ভব নয়। মূল বিদ্যুৎ পরিকল্পনার সহকারী হিসেবে থাকতে পারে কিন্তু এটিকেই প্রধান ধরে পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা আমাদের জন্য অসম্ভব।’ তিনি আরও বলেন, ‘সরকার বলছে আগামী ২০২০ সালে ৪ শতাংশ ও ২০৩০ সাল নাগাদ ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে আসবে। সেটিই বাস্তবায়ন কঠিন; কারণ যে বিশাল বিনিয়োগ দরকার হবে, সেটি বহন করা কঠিন। আমাদের দেশে একেবারেই বাতাসের বেগ নেই, ফলে কেবল সোলারের ওপর নির্ভর করতে হয়। সেটির প্যানেলের জন্য যে জায়গা ও বিনিয়োগ লাগে তা আমরা বহন করতে পারি কিনা সেসব প্রশ্ন করা জরুরি। জাতীয় কমিটি যে কাজটি করছে সেটির বিস্তারিত জানা গেলে মন্তব্য করা যেতে পারে।’
আর জাতীয় কমিটি বলছে, পাওয়ার সিস্টেম মাস্টারপ্ল্যান-২০১৬’ তে নবায়নযোগ্য শক্তিকে ভীষণভাবে খাটো করে বিবেচনা করা হয়েছে। বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ নবায়নযোগ্য শক্তির মাধ্যমে ৩ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম। যদিও ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া বার্কলেতে বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য শক্তি, বিশেষত সৌরবিদ্যুৎ নিয়ে একটা গবেষণা করে দেখিয়েছে, দেশে সোলারের সম্ভাবনা ১ লাখ ২০ হাজার মেগাওয়াট। এমনকি কিছুদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের নবায়নযোগ্য শক্তি গবেষণা কর্তৃপক্ষ এনআরইএল তাদের এক স্টাডিতে দেখিয়েছে আমাদের দেশে সোলার থেকে সক্ষমতা কম করে ২ লাখ ৪০ হাজার মেগাওয়াট।

আরও পড়ুন-

গৃহঋণের টাকাও চলে যাচ্ছে সেকেন্ড হোমে

আমার বিশ্বাস, প্রধানমন্ত্রী নিজেই ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন: ইউএনও সালমান

/ইউআই/এএম/টিএন/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন