X
মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪
৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রণব মুখার্জি ও বাংলাদেশ: বিদায়বেলায় ফিরে দেখা

রঞ্জন বসু, দিল্লি প্রতিনিধি
২৪ জুলাই ২০১৭, ১৬:৩৯আপডেট : ২৪ জুলাই ২০১৭, ১৭:৪০

 

প্রণব মুখার্জি (ছবি- অনলাইন থেকে সংগৃহীত)

স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে একমাত্র বাঙালি প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জির রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে বিদায়ের দিন ঘনিয়ে এলো। রবিবার (২৩ জুলাই) সন্ধ্যায় ভারতের এমপি’রা তাকে ‘ফেয়ারওয়েল ডিনার’ দিয়েছেন। মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) নতুন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের শপথ গ্রহণের পরপরই শেষবারের মতো প্রেসিডেন্ট’স লিমুজিনে চেপে নিজের নতুন ঠিকানা দিল্লির রাজাজি মার্গে চলে যাবেন প্রণব মুখার্জি।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ভারতে যতজন রাষ্ট্রপতি হয়েছেন, তাদের মধ্যে প্রণব মুখার্জির সঙ্গেই যে ঢাকার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। তার কার্যকালের পুরো সময়টাই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাদের হৃদ্যতা চার দশকেরও বেশি পুরনো। রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রণববাবুর প্রথম বিদেশ সফর ছিল বাংলাদেশে।

শেখ হাসিনার সবশেষ ভারত সফরে যাবতীয় প্রোটোকল ভেঙে তাকে রাষ্ট্রপতি ভবনেই আতিথ্য দিয়েছিলেন তার প্রিয় ‘কাকাবাবু’। একই জিনিস ঘটেছিল রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ভারত সফরের ক্ষেত্রেও। দিল্লির রাইসিনা হিলসে রাষ্ট্রপতি ভবনের গেস্টহাউস নতুন করে ঢেলে সাজার পর সেখানে প্রথম অতিথি ছিলেন আবদুল হামিদই।  

শুধু তাই নয়, তোফায়েল আহমেদ থেকে শুরু করে ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের প্রথম সারির নেতা-মন্ত্রীরা গত পাঁচ বছরে যখনই দিল্লিতে এসেছেন, একবার নিয়ম করে রাষ্ট্রপতি ভবনে ঘুরে যেতে ভোলেননি। আইয়ুব বাচ্চুর ব্যান্ড এলআরবি এবং চিত্রশিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদকেও রাষ্ট্রপতি ভবনে সসম্মানে আতিথেয়তা দিয়েছেন প্রণব মুখার্জি। এমন উদাহরণ আরও অজস্র।

কিন্তু প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশের জন্য প্রণব মুখার্জির এই ‘সফট কর্নার’ দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে কতটা প্রভাব ফেলতে পেরেছে? ভারতের ইতিহাসে একমাত্র বাঙালি রাষ্ট্রপতির বিদায়বেলায় এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে খুব ইতিবাচক কিছু পাওয়া যাচ্ছে না!

ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার দেব মুখার্জি যেমন বলছিলেন, “সত্যি বলতে ব্যক্তিগত সুসম্পর্কের একটা প্রভাব নিশ্চয় থাকে। কূটনীতির আবহে তা একটা আলাদা উষ্ণতার আমেজ যোগ করে। কিন্তু ঘটনা হলো, পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত সম্পর্ক কখনও ডিফাইনিং প্রিন্সিপাল হতে পারে না। অর্থাৎ আমার দেশের রাষ্ট্রপতি বা অন্য দেশের প্রধানমন্ত্রী দু’জনকে কতো ঘনিষ্ঠভাবে চেনেন তা দিয়ে কোনও দেশেরই কূটনৈতিক অবস্থান চূড়ান্ত হয় না।”

প্রণববাবুর কার্যকালের পুরো মেয়াদেও (বা এমনকি তার আগে যখন তিনি মনমোহন সিং সরকারের কেবিনেটে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ছিলেন তখনও) যে তিস্তা চুক্তি সই করা যায়নি, সেটি মাথায় রাখলেই সম্ভবত বোঝা যাবে বর্ষীয়ান কূটনীতিক দেব মুখার্জি কেন এমন কথা বলছেন।

অনেকটা একই সুরে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল এমপি ও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পার্লামেন্টারি স্ট্যান্ডিং কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য মমতাজ সঙ্ঘমিতাও। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বললেন, ‘দেখুন, এটা ভুললে চলবে না প্রণববাবুর কার্যকালের বেশিটা সময়ই কিন্তু দিল্লিতে এমন একটা সরকার ক্ষমতায় ছিল, যাদের পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে তার কোনও ভূমিকা ছিল না। আমাদের দেশের পররাষ্ট্রনীতি এমনিতেই রাষ্ট্রপতির সরাসরি নিয়ন্ত্রণে নয়, আর এক্ষেত্রে তো সরকারের সঙ্গে তার রাজনীতির ঘরানাটাই ছিল ভিন্ন!’

মমতাজ সঙ্ঘমিতার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এমনিতে খুবই নিবিড়। বছর দেড়েক আগে বাবা সৈয়দ মনসুর হবিবুল্লার হয়ে ‘ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ’ সম্মাননা গ্রহণ করতে তিনি ঢাকায় গিয়েছিলেন। বাংলাদেশের বামপন্থী রাজনীতিবিদ বদরুদ্দিন ওমর-ও তার নিকটাত্মীয়। কাজেই তিনি অবশ্য ‘ব্যক্তিগত সম্পর্ক’ আর ‘বাঙালি সেন্টিমেন্টে’র বিষয়টাকেও ছোট করে দেখছেন না।

“একটা জিনিস অবশ্য অস্বীকার করার উপায় নেই, সীমান্তের দু’পাড়ের বাঙালিরা মিলিত হলে তাদের মধ্যে একটা বাঙালি আবেগ কাজ করেই। প্রণববাবুর স্ত্রী ছিলেন নড়াইলের মেয়ে। আর তিনি যখন থেকে কংগ্রেসের রাজনীতি করছেন, প্রায় তখন থেকেই তার সঙ্গে শেখ হাসিনার পারিবারিক সম্পর্ক। এই ব্যাপারগুলোও একেবারে উপেক্ষা করা যায় না”— বলছিলেন মমতাজ।

শেখ হাসিনার সঙ্গে অতিরিক্ত ঘনিষ্ঠতাই সম্ভবত প্রণব মুখার্জিকে অপ্রিয় করে তুলেছিল বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী শক্তি বিএনপির কাছে। সাবেক হাইকমিশনার দেব মুখার্জি আবার আলোকপাত করছেন এই সীমাবদ্ধতার দিকেও। তার ভাষ্য, ‘সবাই জানে শেখ হাসিনা ও প্রণববাবুর পরিবারের মধ্যে ঘনিষ্ঠতার কথা। এই সম্পর্ক বহুদিনের পুরনো এবং এটা নতুন কোনও কথা নয়। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিতে যারা শেখ হাসিনার বিরোধী তারা যে এই সম্পর্ককে সুনজরে দেখবেন না তা খুব স্বাভাবিক। আমার ধারণা প্রণববাবুর ক্ষেত্রেও ঠিক সেটাই ঘটেছে।’

রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির বাংলাদেশ সফরের সময় ঢাকায় হরতালের যুক্তি দিয়ে তদানীন্তন বিরোধী নেত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যে তার সঙ্গে দেখা করতে যাননি, দেব মুখার্জির বক্তব্যে সম্ভবত সেই ঘটনারই ছায়া রয়েছে।

বাংলাদেশ নিয়ে অর্জনের ক্ষেত্রে তাই রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির বিদায়লগ্নে পর্যবেক্ষকদের মূল্যায়ন এটাই— ব্যক্তিগত হৃদ্যতায় হয়তো অনেকের মন জিততে পেরেছেন তিনি, কিন্তু বাংলাদেশের বিরোধী দলগুলো তাকে বিশ্বাস করতে পারেনি। আর ভারতের পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণেও তার ছিল একরকম হাত-পা বাঁধা!

/জেএইচ/  এপিএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সাম্প্রদায়িকতার মাধ্যমে ঐতিহ্যকে নষ্ট করতে দেবো না: নাছিম
সাম্প্রদায়িকতার মাধ্যমে ঐতিহ্যকে নষ্ট করতে দেবো না: নাছিম
চলতি মাসেই বঙ্গবাজারে বহুতল মার্কেটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন  
চলতি মাসেই বঙ্গবাজারে বহুতল মার্কেটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন  
টানা দাবদাহের পর রাজধানীতে স্বস্তির বৃষ্টি
টানা দাবদাহের পর রাজধানীতে স্বস্তির বৃষ্টি
বিশ্বকাপ নিয়ে বেশি মাতামাতি না করতে শান্তর অনুরোধ
বিশ্বকাপ নিয়ে বেশি মাতামাতি না করতে শান্তর অনুরোধ
সর্বাধিক পঠিত
শেখ হাসিনাকে নরেন্দ্র মোদির ‘ঈদের চিঠি’ ও ভারতে রেকর্ড পর্যটক
শেখ হাসিনাকে নরেন্দ্র মোদির ‘ঈদের চিঠি’ ও ভারতে রেকর্ড পর্যটক
৪ দিনেই হল থেকে নামলো ঈদের তিন সিনেমা!
৪ দিনেই হল থেকে নামলো ঈদের তিন সিনেমা!
বিসিএস পরীক্ষা দেবেন বলে ক্যাম্পাসে করলেন ঈদ, অবশেষে লাশ হয়ে ফিরলেন বাড়ি
বিসিএস পরীক্ষা দেবেন বলে ক্যাম্পাসে করলেন ঈদ, অবশেষে লাশ হয়ে ফিরলেন বাড়ি
চাসিভ ইয়ার দখল করতে চায় রাশিয়া: ইউক্রেনীয় সেনাপ্রধান
চাসিভ ইয়ার দখল করতে চায় রাশিয়া: ইউক্রেনীয় সেনাপ্রধান
বাজারে ক্রেতা নেই: তবু ব্রয়লারের কেজি ২৩৫, গরু ৮০০
বাজারে ক্রেতা নেই: তবু ব্রয়লারের কেজি ২৩৫, গরু ৮০০