X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রস্তুতি প্রতিবেশীদের চেয়ে ভালো : জয়

বাংলা ট্রিবিউন ডেস্ক
২৬ জুলাই ২০১৭, ১৮:৪৯আপডেট : ২৬ জুলাই ২০১৭, ১৯:০০

সজীব ওয়াজেদ জয় প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় এবং দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ব্যাপারে প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে বাংলাদেশের প্রস্তুতি ভালো।

‘দ্য ডিপ্লোমেট’ পত্রিকায় ২৪ জুলাই প্রকাশিত এক নিবন্ধে জয় বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। তবে সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে সমন্বিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। দূরবর্তী আবহাওয়া বিষয়ে এবং দুর্গত মানুষ ও প্রকৃতির পাশে দাঁড়ানোর ব্যাপারে প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে বাংলাদেশের প্রস্তুতি ভালো।’ টোকিওভিত্তিক অনলাইন ইন্টারন্যাশনাল নিউজ ম্যাগাজিন ‘দ্য ডিপ্লোমেট’ এ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার রাজনীতি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিষয় তুলে ধরা হয়।

প্রধানমন্ত্রীর পুত্র জয় আরও বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে জনগণের জান-মাল রক্ষায় বাংলাদেশের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।’ ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ বছরের ৩০ মে এই ঝড়ে বাংলাদেশে ভূমিধস হয়। প্রচণ্ড বাতাস ও ঝড়ে কৃষি জমি ও ভবন বিধ্বস্ত হয়। এতে ৯ জন নিহত হয়। প্রায় পাঁচ লাখ মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভৌগলিক কারণে বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশ। এদেশের অবস্থান বঙ্গোপসাগরের উষ্ণ পানি অভিমুখে। তাই প্রতিবছর এখানে প্রলয়ংকরী ঝড় বয়ে যায়।’ জয় আরও বলেন, ‘এছাড়া বাংলাদেশের অধিকাংশ ভূমি এবং এর ১৬ কোটি মানুষের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ সমুদ্রপৃষ্ঠের ৪০ ফুটের সামান্য ওপরে বসবাস করে। ফলে বাংলাদেশ ইতিহাসের সবচেয়ে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের বেশ কয়েকটির শিকার হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা বলেন, ‘১৯৭০ সালে এক প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে বাংলাদেশে আনুমানিক তিন লাখ লোক নিহত হয়। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ তার আগাম সতর্কীকরণ ব্যবস্থা আধুনিকায়ন করতে শুরু করে। আগের চেয়ে অধিক সংখ্যক আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ ও লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা উন্নত করা হয়। উপকূলে বাঁধ নির্মাণ ও অতিরিক্ত বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে ‘বনবেষ্টনী’ সৃষ্টি করা হয় এবং স্থানীয় পর্যায়ে ঘূর্ণিঝড়ের বিপদ সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানো হয়। ফলে বাংলাদেশ পরবর্তী ঘূর্ণিঝড়গুলো ক্ষয়ক্ষতি ব্যাপকভাবে কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়।’ নিবন্ধে জয়  লেখেন, ‘বাংলাদেশের দুর্যোগ প্রস্তুতি পরিকল্পনার অন্যতম স্তম্ভ হলো ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি, যা প্রণীত হয় বাংলাদেশ সরকার, জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক রেডক্রস ও বাংলাদেশের ক্রিসেন্ট সোসাইটির যৌথ উদ্যোগে।’

তিনি বলেন, ‘এই কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশ তার নাগরিকদের ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে অবহিত করে। সরকার ঘূর্ণিঝড় সতর্কীকরণ সংকেত সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে শুরু করে এবং সভা-সমিতি, আলোচনা, পোস্টার, লিফলেট, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ও ব্যক্তি পর্যায়ে তৎপরতাসহ তথ্য প্রচারে নতুন নতুন পন্থা চালু করে। এসব উদ্ভাবনী প্রচেষ্টা লাখো-কোটি মানুষকে শিক্ষিত করে তুলে এবং বিগত বছরগুলোতে বহু মানুষের জীবন বাঁচাতে সহায়ক হয়।’ জয় বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আগাম সতর্কীকরণ ব্যবস্থা, যা বেশ কয়েকটি সর্বাধুনিক আবহাওয়া রাডার স্টেশন দ্বারা চালিত হয়। ঢাকা, খেপুপাড়া ও কক্সবাজারে অবস্থিত এসব স্টেশন আঘাত হানার বহু আগেই সম্ভাব্য প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় শনাক্ত করে প্রতি মিনিটে আবহাওয়া সংক্রান্ত সর্বশেষ বুলেটিন প্রচার করে থাকে।’

ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’ এর প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘২০০৭ সালে বাংলাদেশের কয়েকটি উপকূলীয় নিম্নাঞ্চলের ওপর দিয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’ বয়ে যাওয়া পর এই আগাম সতর্কীকরণ ব্যবস্থাটি চূড়ান্তভাবে পরীক্ষা করা হয়। প্রচণ্ড গতিতে বয়ে যাওয়া এই ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় দ্রুত সাড়া দেওয়ার প্রয়োজন পড়েছিল। তাই বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলো ত্বরিত পদক্ষেপ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ৩০ লাখের বেশি মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয় এবং আরও হাজার হাজার মানুষকে জরুরি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় দেওয়া হয়। আগাম প্রস্তুতি ও ঝুঁকি প্রশমন কার্যক্রমের কারণে লাখ লাখ মানুষের জীবন বাঁচানো সম্ভব হয়।’

জয় লেখেন, ‘ব্যাপক হারে আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ ঘূর্ণিঝড়ে হতাহতের সংখ্যা হ্রাসে সহায়ক হয়েছে। ২০০৭ সালের আগে বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র ছিল দেড় হাজারটি, যার প্রত্যেকটির ধারণক্ষমতা ছিল পাঁচ হাজার লোক। এরপর বাংলাদেশ আরও দুই হাজার আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করেছে।’ ম্যানগ্রোভ বনায়নের কথা উল্লেখ করে জয় বলেন, ‘উপকূলীয় অঞ্চলে পরিকল্পিত ও সতর্ক বনায়নের ফলেও ঘূর্ণিঝড়ের বিরূপ প্রভাব ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। সাইক্লোন সিডরের সময় বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল (বাদাবন) জান-মালের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সহায়ক হয়েছে। তাই বাংলাদেশের কর্মকর্তারা আরও ১২শ’ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ম্যানগ্রোভ বনায়নের মাধ্যমে ঘূর্ণিঝড় ‘সুরক্ষা প্রাচীর’ গড়ে তোলার জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।’

জয় বলেন, ‘২০০৮ সালে নির্বাচনে বিজয়ের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার উপকূলীয় বাংলাদেশের টিকে থাকা ও জলবায়ুর মধ্যে সম্পর্কের কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করেছে। প্রধানমন্ত্রী ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ব্যুরোকে একটি পূর্ণ মন্ত্রণালয়ে রূপান্তরিত করেন। এই মন্ত্রণালয়ের ওপর মানবিক সহায়তা কর্মসূচি পরিচালনা এবং জরুরি সাড়া দিতে সরকার ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর গৃহীত কর্মসূচির সমন্বয়সহ ঝুঁকি হ্রাসমূলক কর্মকাণ্ড চালানোর দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে।’

তা সত্ত্বেও দুর্যোগ সংক্রান্ত পরিকল্পনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে এখনও কিছু অপূর্ণতা রয়ে গেছে মন্তব্য করে  উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘গত জুনে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে মৌসুমী বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট ভূমিধসে ১৬০ জনের বেশি লোকের প্রাণহানি ঘটেছে। যে অঞ্চলে এই দুর্যোগ ঘটেছে সেটি ‘পার্বত্য অঞ্চল’ হিসেবে পরিচিত। এখানে অতি উন্নয়ন হয়েছে এবং এখানকার গাছপালা উজাড় করে ফেলা হয়েছে।’ বাসস।

/এএম/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু
চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু
রাজশাহীতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো বিভাগীয় সর্বজনীন পেনশন মেলা
রাজশাহীতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো বিভাগীয় সর্বজনীন পেনশন মেলা
রুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
নাটোরে উপজেলা নির্বাচনরুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া