X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

জলাবদ্ধতার দায় নগরবাসীর!

শাহেদ শফিক
২৭ জুলাই ২০১৭, ০৮:০০আপডেট : ২৭ জুলাই ২০১৭, ১১:৩৪

রাজধানীর জলাবদ্ধতা পরিদর্শনে রাজপথে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির দুই মেয়র সামান্য বৃষ্টি হলেই রাজধানীর সড়ক গুলোতে তীব্র জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এই জলাবদ্ধতা নিয়ে নির্বাচনের আগে দুই মেয়রের প্রতিশ্রুতি থাকলেও এখন যেন ভুলে গেছেন তারা। জলাবদ্ধতা নিরসনের মূল প্রতিষ্ঠান ঢাকা ওয়াসাও তার দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছে। এখন নগরীতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলে একে অপরকে দোষারোপের সংস্কৃতিই দেখে যাচ্ছেন নগরবাসী।
বুধবার ধানমণ্ডির জলাবদ্ধতাপ্রবণ সড়ক পরিদর্শন করতে এসে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন আবারও বলেন, এই জলাবদ্ধতার দায় ঢাকা ওয়াসার। আর উত্তর সিটির মেয়র অনিসুল হক বলছেন, তার হাতে কোনো ক্ষমতা বা জাদু নেই।
এদিকে, ঢাকা ওয়াসার সাফ জবাব, পৃথিবীর কোনও দেশে যারা বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করে, ময়লা পানি তাদের দায়িত্বে থাকে না। এমন কি দেশের ভেতরে চট্টগ্রাম শহরেও এই দায়িত্ব চট্টগ্রাম ওয়াসার কাঁধে নেই। শুধু ঢাকা শহরই ব্যতিক্রম।
রাজধানীর রাজপথে পানি, পরিদর্শনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক তিনটি সংস্থার এমন চাপান-উতোড়ের মধ্যে সামান্য থেকে ভারী বৃষ্টিতে প্রতিনিয়ত নাকাল হচ্ছে রাজধানীবাসী। নগরীর জলাবদ্ধতার যখন এমন অবস্থা তখন এর জন্য সমস্যার গভীরে না গিয়ে বিভিন্ন সময়ে উল্টো নাগরিকদেরও দায়ী করেছেন দুই মেয়র। বিভিন্ন সময়ে ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক বলেছেন, মেয়র কিংবা তার গুটি কয়েক কর্মকর্তাকে দিয়ে এই শহরের সমস্যাগুলো সমাধাণ করা সম্ভব না। আর দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন প্রত্যেক নগরবাসীকে মেয়রের ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানিয়েছেন।
জলাবদ্ধতার দায়িত্ব কোনও সংস্থা নিতে না চাইলেও আইনেই বিষয়টি স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। ১৯৮৯ সালে শহরের পানি নিষ্কাশনের মূল দায়িত্ব দেওয়া হয় ঢাকা ওয়াসাকে। পাশাপাশি এ কাজে যুক্ত হয় ঢাকা সিটি করপোরেশনসহ আরও কয়েকটি সংস্থা। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো দায়িত্ব পালন করলেও ঢাকা ওয়াসা তার মূল দায়িত্ব থেকে সরে গিয়ে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের নামে এখন কোটি কোটি টাকার প্রকল্প নিয়ে ব্যস্ত। ফলে ওয়াসার এই ব্যর্থতার দায় যাচ্ছে সিটি করপোরেশনের ঘাড়ে। তাই দুই সিটি করপোরেশন ওয়াসার ড্রেনেজ ব্যবস্থা নিয়ে নিতে চায়।
ধানমন্ডি এলাকার জলবদ্ধতা পরিদর্শন করছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন ঢাকার জলাবদ্ধতা নিয়ে যখন তিনটি সংস্থা একে অপরকে দোষারোপ করছে ঠিক তখন জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য আন্তঃবিভাগীয় সমন্বয় সভা করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি মেয়র আনিসুল হক। চলতি মাসের ১৬ তারিখে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে ছিলেন, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, পানি সম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও ঢাকা ওয়াসা এমডি ইঞ্জিনিয়ার তাকসিম এ খানসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা। ওই বৈঠকে জলাবদ্ধতা নিরসনে ঢাকা ওয়াসাকে ব্যর্থ আখ্যা দিয়ে তার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনকে নেওয়ার সিদ্ধান্ত দেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী। তবে সিদ্ধান্ত হলেও তা পুরোপুরি কার্যকর হতে আরও অনেক সময় লাগবে বলে মনে করেন আনিসুল হক। অবশ্যই সেদিনই ওয়াসার এই ড্রেনেজ ব্যবস্থাকে বিকলাঙ্গ শিশুতুল্য আখ্যা দিয়ে তাকে সুস্থ করে দেওয়ার দাবিও জানিয়েছিলেন আনিসুল হক।
বুধবার রাজধানীর মিরপুর এলাকার সাংবাদিক আবাসিক এলাকার খাল পরিদর্শনে গিয়ে আনিসুল হক বলেন, ‘গত সপ্তাহে আমরা কো-অর্ডিনেশন মিটিং করেছি। ওয়াসা বলেছে, মেয়রকে দায়িত্ব দিয়ে দাও। আমরা বলেছি, আমরা দায়িত্ব নিতে চাই। কিন্তু কিভাবে? টোটাল শহরই বন্ধ হয়ে গেছে। কাল-পরশুর মধ্যে সমাধান হবে না। আমরা আশা করি বৃষ্টি আরও কম হোক। মেয়রের হাতে আসলে কোনও জাদু নেই। কারও হাতেই কোনও জাদু নেই। যেভাবে আমরা খাল বন্ধ করে রেখেছি সেখানে মেয়র কী করবে? মেয়রের হাতে তো ক্ষমতা নেই দখলকারীদের তুলে দেওয়ার।’
রাজধানীর রাজপথে ভ্যানে করে পানি পারাপার সেবা তবে মেয়রের এমন বক্তব্যে ক্ষুব্ধ নগরবাসী। বনশ্রীর বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম জানান, মেয়র আনিসুল হকের এমন বক্তব্য তিনি গণমাধ্যমে শুনেছেন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মেয়রের যদি ক্ষমতা বা জাদু না থাকে তাহলে তিনি নগরপিতা হলেন কেন? জাদু তার থাকতেই হবে। তা না হলে প্রতিশ্রুতি দিলেন কেন?
ঢাকার বৃষ্টি মানেই জলাবদ্ধতা। আর জলাবদ্ধতার দায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট তিন সংস্থার কাদা ছোড়াছুড়িতে অতিষ্ঠ নগরবাসী। নির্বাচনের সময় আনিসুল হক সব সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধান যাত্রা ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু তিনিই এখন বলছেন, আমার হাতে কোনও ক্ষমতা নেই। অপরদিকে সাঈদ খোকন এই জলাবদ্ধতাকে সবার আগে প্রাধান্য দিবেন বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন।
তিন সংস্থার প্রধানদের এমন অবস্থানে নগরবাসীর প্রশ্ন, জলাবদ্ধতার দায় যদি তারা কেউ নিতে না চায়, তাহলে এই দায় কার? সম্প্রতি জলাবদ্ধতা নিয়ে অনুষ্ঠিত ডিএনসিসির এক অনুষ্ঠানে নগর পরিকল্পনাবিদ মোবাশ্বের আলী মেয়র আনিসুল হককে উদ্দেশ করে বলেন, ‘কোনও সংস্থাই যখন এর দায় নিবে না। তাহলে জনগণই এর জন্য দায়ী!’
রাজধানীর রাস্তায় পানি তার মতে, খুব দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এই রাজধানী ঢাকা চট্টগ্রামের মতো পরিণতির দিকে যাবে। তিনি বলেন, ‘জলাবদ্ধতা দূর করতে হলে আগে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে একটি মাস্টার প্ল্যান তৈরি করতে হবে। এরপর কাজ শুরু করতে হবে।
অপরদিকে স্থপতি ইকবাল হাবিবের মতে, হাঁটু পানি কিংবা কোমর পানিতে দাঁড়িয়ে শুধু প্রতিশ্রুতি দিলেই হবে না। এ জন্য জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে।
জলাবদ্ধতার কারণ উল্লেখ করে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পানি নিষ্কাশনের দুটি পথ রয়েছে। প্রথমত ভূ-গর্ভে পানি শোষণ করে নেওয়া এবং অন্যটি খাল বিল ও ড্রেন দিয়ে নদীতে চলে যাওয়া। রাজধানী ঢাকায় এই দুটি পথের একটিও কার্যকর নেই। যে কারণে জলাবদ্ধতা বাড়ছে। এ থেকে মুক্তি পেতে হলে জনগণকে সম্পৃক্ত করে পরিকল্পিত উপায়ে খাল উদ্ধার করতে হবে।’

আরও পড়ুন-

লন্ডনে দুই বাঙালি তরুণের ওপর এসিড হামলা

শাহজালালে বসানো হচ্ছে এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন সিস্টেম

‘নিশ্চিত থাকেন, আগামী বছর রাজধানীতে জলাবদ্ধতা থাকবে না’

/টিএন/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা