X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘বিদেশে যাওয়া মানেই স্বপ্ন পূরণ নয়’

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৭ জুলাই ২০১৭, ২০:৪৮আপডেট : ২৭ জুলাই ২০১৭, ২৩:৩১

 

‘কেন কমছে প্রবাস থেকে আয়’ শীর্ষক বৈঠকি স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশের শ্রমিকরা বিদেশে কাজ করতে গিয়ে বিভিন্নভাবে নিগৃহীত হচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলা ট্রিবিউন আয়োজিত ‘কেন কমছে প্রবাস থেকে আয়’ শীর্ষক বৈঠকির আলোচকরা। তারা বলছেন, ‘অনেকে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অনেকে বিভিন্ন দেশের জেলে থাকছেন। কেউ কেউ মারাও যাচ্ছেন। কিন্তু কোনও প্রতিবাদ হচ্ছে না। একদিকে নিগৃহীতরা চোখ বুজে সহ্য করছেন, অন্যদিকে লাখ লাখ টাকা খরচ করে অনেকে ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। ফলে লাখ লাখ শ্রমিকের বিদেশে যাওয়ার স্বপ্নটা স্বপ্নই থেকে যাচ্ছে। বিদেশে যাওয়া মানেই স্বপ্ন পুরণ নয়, বিদেশ মানেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জায়গা নয়।’  বৈঠকিতে শুধু প্রবাসী শ্রমিকদের ওপর নির্ভর না করে দেশে বিনিয়োগ পরিস্থিতি তৈরির জন্য নীতি নির্ধারকদের প্রতি আহ্বান জানান আলোচকরা।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাংলা ট্রিবিউন আয়োজিত ‘কেন কমছে প্রবাস থেকে আয়?’ শীর্ষক বৈঠকি সঞ্চালনা করেন  সাংবাদিক মুন্নী সাহা। এতে অংশ নেন বাংলা ট্রিবিউনের সম্পাদক জুলফিকার রাসেল, এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি সালাম মুর্শেদী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. বিরূপাক্ষ পাল, ব্র্যাক-এর মাইগ্রেশন বিষয়ক প্রোগ্রাম হেড শরীফুল হাসান, সৌদি প্রবাসী মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন, সৌদি আরবের বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হামদুর রহমান ও বাংলা ট্রিবিউনের সিনিয়র রিপোর্টার গোলাম মওলা।

বিরূপাক্ষ পাল

ড. বিরূপাক্ষ পাল বলেন, ‘বিদেশে কাজের জন্য নারী শ্রমিকদের না পাঠানোই ভালো। অদক্ষ শ্রমিক পাঠানো বন্ধ করতে হবে।’  তিনি উল্লেখ করেন, ‘কেবল রেমিটেন্সের ওপর নির্ভর না করে দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে হবে। দেশি বিনিয়োগ না বাড়লে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে না। এ জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি করতে হবে।’

সালাম মুর্শেদী

সালাম মুর্শেদী বলেন, ‘প্রবাসী আয় ও রফতানি আয় বাড়াতে হলে এই দুই সেক্টরের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। রফতানি খাতের জন্য নীতি সহায়তা দিতে হবে। এ খাতের উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি নীতির একটি ঘোষণা থাকতে হবে। দেশে বিনিয়োগ না বাড়লে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে না। প্রবাসী আয়ও কাজে আসবে না। এ কারণে দেশে বিনিয়োগ বাড়ানো জরুরি।’ তিনি ইকোনমিক জোনগুলোর কাজ দ্রুত শেষ করার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, বিনিয়োগের জন্য ওয়ান স্টপ সার্ভিস কার্যকর করা জরুরি।’

জুলফিকার রাসেল

জুলফিকার রাসেল বলেন, ‘উন্নত দেশগুলোতে কেউ নিগৃহীত হলে স্থানীয় পুলিশকে জানানো হয়। তখন এর প্রতিকার পাওয়া যায়, কিন্তু বাংলাদেশ থেকে মাধ্যপ্রাচ্যে যাওয়া শ্রমিকরা বিভিন্নভাবে নিগৃহীত হচ্ছেন। অনেকে স্বপ্ন পূরণ করতে গিয়ে আত্মসম্মান হারাচ্ছেন।’ তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের ওইসব দেশের সরকাররা এর প্রতিকারে কোনও উদ্যোগ নেয় না কেন?  শ্রমিকরা একদিকে বিদেশে নিগৃহীত হচ্ছেন, অন্যদিকে ফেরার সময় দেশের বিমানবন্দরেও নিগৃহীত হতে হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘বিদেশে যাওয়া মানেই স্বপ্ন পূরণ নয়, বিদেশ মানেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জায়গা নয়।’

শরীফুল হাসান

শরীফুল হাসান বলেন, ‘বিদেশে গিয়ে নারী শ্রমিকরা যেমন নিগৃহীত হচ্ছেন, তেমনি পুরষ শ্রমিকরাও মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এছাড়া প্রতিদিন ৮/১০ জন শ্রমিক লাশ হয়ে দেশে ফিরছেন।’ তিনি বলেন, ‘যারা বিদেশে কাজের আশায় যাচ্ছেন, তাদের মধ্যে মাত্র ১০ ভাগ শ্রমিকের ভাগ্যের উন্নয়ন হচ্ছে। বাকি ৯০ ভাগই হয় মানবতের জীবনযাপন করছেন, না হয় নিগৃহীত হচ্ছেন।’ এ কারণে অদক্ষ শ্রমিক পাঠানোর প্রতিযোগিতা বন্ধ করার পরামর্শ দেন তিনি।

হামদুর রহমান

হামদুর রহমান বলেন, ‘কেবল প্রবাসীদের ওপর নির্ভর করা ঠিক নয়, শ্রমিকদের নিগৃহীত হওয়া থেকে পরিত্রাণ পেতে দেশে কর্মসংস্থানের জায়গা করতে হবে। বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।’

মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন

মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন বলেন, ‘ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন বা শ্রীলঙ্কার সরকার সে সব দেশের নারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে সৌদি আরবে পাঠালেও বাংলাদেশ থেকে যে সব নারী সৌদিতে গেছেন, তারা হয়ত কেউই প্রশিক্ষিত নন। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে যেসব নারী সৌদি আরবে যান, তাদের বড় দুর্বলতা হলো, তারা কমিউনিকেশন গ্যাপ করে ফেলেন। দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ থাকে না। ফলে নিগৃহীত হলেও অনেক সময় জানা যায় না।’

গোলাম মওলা

গোলাম মওলা বলেন, ‘সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট ছাড়াও নানা কারণে প্রবাসী আয় কমেছে। বিকাশসহ হুন্ডি চক্রের আধিপত্য বাড়ায় প্রবাসীদের একটা বড় অংশ ব্যাংকিং চ্যানেল এড়িয়ে চলছে। এর ফলে শুধু সৌদি আরব থেকে গত এক বছরে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার রেমিটেন্স কম এসেছে। একইভাবে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকেও প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার রেমিটেন্স কম এসেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ ব্যাংক থেকে তুলতে গিয়ে আরেক ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয়। সময়ক্ষেপণ হয়। ব্যাংকের রেট কম হওয়া ও মাসুল কাটার কারণেও টাকার পরিমাণ কমে যায়।’

ছবি: নাসিরুল ইসলাম ও সাজ্জাদ হোসেন


/জিএম/এমএনএইচ/ 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বিএসএফের গুলিতে নিহত যুবকের মরদেহ হস্তান্তর
বিএসএফের গুলিতে নিহত যুবকের মরদেহ হস্তান্তর
এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপের সভায় সভাপতিত্ব করা ছিল অসাধারণ অভিজ্ঞতা: স্পিকার
এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপের সভায় সভাপতিত্ব করা ছিল অসাধারণ অভিজ্ঞতা: স্পিকার
বিএসএমএমইউ’র দায়িত্ব নিয়ে যা বললেন নতুন ভিসি
বিএসএমএমইউ’র দায়িত্ব নিয়ে যা বললেন নতুন ভিসি
বাজেটে শিক্ষা খাতে ১৫ শতাংশ বরাদ্দের দাবি
বাজেটে শিক্ষা খাতে ১৫ শতাংশ বরাদ্দের দাবি
সর্বাধিক পঠিত
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
রাজধানীর ৫ জায়গায় তরমুজ বিক্রি হবে কৃষকের দামে
রাজধানীর ৫ জায়গায় তরমুজ বিক্রি হবে কৃষকের দামে