X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

বন্যাকবলিত এলাকায় কলা গাছের ভেলায় ভাসমান বীজতলা

এমরান হোসাইন শেখ
২৭ জুলাই ২০১৭, ২১:৩৩আপডেট : ২৭ জুলাই ২০১৭, ২২:০৪

 

মৌলভীবাজারে বন্যা বন্যাকবলিত এলাকায় কলা গাছের ভেলায় ভাসমান বীজতলা তৈরির কাজ করছে সরকার। অতিবৃষ্টি ও বন্যায় বীজতলা ডুবে যাওয়ার কারণে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মাধ্যমে দেশের ১৪ জেলার ৫৬টি উপজেলায় ৭২০টি ভাসমান আমনের বীজতলা তৈরি করা হচ্ছে। এসব বীজতলায় উৎপাদিত আমন চারা কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে। এছাড়া ব্যক্তিগত উদ্যোগে কলার ভেলা বা পচা কচুরিপানার ওপর ভাসমান বীজ তলা তৈরিতেও কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বন্যা ও অতিবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষি পুনর্বাসনের লক্ষ্যে নেওয়া উদ্যোগ প্রসঙ্গে এসব কথা বলা হয়েছে। 

বৈঠক শেষে কমিটির সদস্য নূরুল ইসলাম ওমর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বন্যা এলাকার কৃষকেরা যেন রোপা আমনের চাষ করতে পারে, এ জন্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে চারা বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বন্য ও বৃষ্টির জন্য যেসব এলাকার বীজতলা পানিতে ডুবে গেছে, সেসব জায়গায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর নিজেদের উদ্যোগে কলাগাছের ভেলায় ভাসমন বীজতলা তৈরি করে চারা উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছে। এই চারা কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে।’

সংসদীয় কমিটি মন্ত্রণালয়ের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে উল্লেখ করে নুরুল ইসলাম ওমর বলেন, ‘বাংলাদেশ বন্যাপ্রবণ এলাকা। এ জন্য কৃষকরা যেন নিজস্ব উদ্যোগে কলার ভেলা বা কচুরিপানার ওপর ভাসমান বীজতলা তৈরিতে উৎসাহিত হয়, সে জন্য এর ব্যাপক প্রচার-প্রসারে মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।’

সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও বলা হয়েছে, সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকে ভাসমান বীজতলা তৈরির বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করতে মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

এদিকে কার্যপত্রে জানা গেছে, আগাম বন্যা, অতি বৃষ্টি এবং উজানের পানিতে হাওর অঞ্চলের বোরো ফসল ও দেশের বিভিন্ন স্থানে আউশ নষ্ট হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পুনর্বাসনে ১৬৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকার প্রয়োজন হবে বলে সংসদীয় কমিটিকে জানিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এছাড়া চলতি বর্ষা মৌসুমে ৩০ জেলায় বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে বলে কার্যপত্রে উল্লেখ করা হয়।

কার্যপত্রে বলা হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা বন্যা পরিস্থিতি সর্বদা মনিটরিং করছেন। পানি নেমে যাওয়ার পরপরই ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা ও  ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ নির্ধারণ করে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সারাদেশে চলমান বন্যা পরিস্থিতিতে ফসলের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ ও বন্যা পরবর্তী সময়ে কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর সম্ভাব্য কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করা হয়।

বৈঠকে উত্থাপিত মন্ত্রণালয়ের পুনর্বাসন কর্মপরিকল্পনায় বলা হয়,  চলতি বছরে এপ্রিল থেকে মে মাসে হাওরের ৬ জেলায় আগাম বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে প্রায় দুই লাখ ৫০ হাজার হেক্টর বোরোর ক্ষতি হয়। এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আউশ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ১০ লাখ ২৫ হাজার হেক্টর থেকে বাড়িয়ে ১০ লাখ ৯২ হাজার হেক্টর করা হয়। কিন্তু পুনরায় অতি বৃষ্টি ও উজানের পানিতে সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, মৌলভীবাজার, বান্দরবান, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলায় ১০ হাজার ৬৪১ হেক্টর আউশ ধানের জমি এবং এক হাজার ১১৮ হেক্টর আমনের বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, তিস্তা বেসিনে পানি বেড়ে যাওয়ায় কুড়িগ্রাম, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া জেলারও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে।

কৃষিসম্প্রসারণ অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে ১০০ একর জমিতে উফশী রোপা আমনের বীজতলা তৈরির কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এতে মোট ৩০ মেট্রিক টন বীজ সরবরাহ করা হবে। এতে প্রত্যেক কৃষকের এক বিঘা জমির আমন ধান রোপনের উপযোগী হিসেবে ৬ হাজার ৬০ জন কৃষককে আমনের চারা দেওয়া হবে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত জেলায় সরাসরি রোপনের জন্য একজন কৃষককে বিঘা প্রতি ৫ কেজি উফশী রোপা আমনের বীজ বিনামূল্যে দেওয়া হবে। এর আওতায় ২০ হাজার কৃষকের জন্য ১০০ মেট্রিক টন উফশী বীজ সরবরাহ করা হবে।

মন্ত্রণালয়ের কর্মপরিকল্পনায় আরও বলা হয়েছে, হাওর এলাকার জেলাগুলোতে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন পরিকল্পনায় ৭৪ কোটি ২৩ লাখ ৬১ হাজার ৭০০ টাকার প্রয়োজন হবে। এছাড়া আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী চলতি বর্ষা মৌসুমে দেশের প্রায় ৩০ জেলায় বন্যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এসব এলাকার দেড় লাখ কৃষককে গমের বীজ, দুই লাখ ১৫ হাজার কৃষককে ভুট্টার বীজ, তিন লাখ ৩০ হাজার কৃষককে সরিষার বীজ, ৬৪ হাজার কৃষককে গ্রীষ্মসকালীন মুগের বীজ ও রাসয়নিক সারসহ অন্যান্য বীজ সরবরাহ করা হবে। এ কর্মসূচির মাধ্যমে মোট ৮ লাখ ৪০ হাজার ৫০০ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষককে এক বিঘা জমির জন্য বিনামূল্যে বীজ ও সার সরবরাহ করা হবে। এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নে মোট ১৬৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকার প্রয়োজন হবে।

বৈঠকে বাংলাদেশে উৎপাদিত দেশীয় ফলের খাদ্যাভাস তৈরিতে নতুন প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।

কমিটির সভাপতি মকবুল হোসেনের সভাপতিত্বে বৈঠকে আরও অংশ নেন কমিটি সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, আব্দুল মান্নান, মামুনুর রশীদ কিরন, নূরুল ইসলাম ওমর ও অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি।

/এমএনএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
গোপনে ইউক্রেনকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র
গোপনে ইউক্রেনকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র
টিপু-প্রীতি হত্যা মামলার অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশ ২৯ এপ্রিল
টিপু-প্রীতি হত্যা মামলার অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশ ২৯ এপ্রিল
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ক্যাসিনো কাণ্ডের ৫ বছর পর আলো দেখছে ইয়ংমেন্স ও ওয়ান্ডারার্স
ক্যাসিনো কাণ্ডের ৫ বছর পর আলো দেখছে ইয়ংমেন্স ও ওয়ান্ডারার্স
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি
আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি