X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

কমেছে বাঘের সংখ্যা, বন্ধ হয়নি শিকার

আমানুর রহমান রনি
২৯ জুলাই ২০১৭, ০৮:০৩আপডেট : ২৯ জুলাই ২০১৭, ২০:০৪

রয়েল বেঙ্গল টাইগার দেশে সামগ্রিকভাবে বাঘের সংখ্যা কমলেও বন্ধ হয়নি শিকার। বিশেষ করে পার্বত্য অঞ্চল ও সুন্দরবনের বাঘ মোটেও নিরাপদ নয়। বিভিন্ন কৌশলে বাঘ শিকার করে তা বিদেশে পাচার করা হয়। পাশ্ববর্তী ভারত ও নেপালে বাঘের সংখ্যা বাড়লেও বাংলাদেশে এ সংখ্যা দিন দিন কমছে।

বিশেষজ্ঞদের দাবি, বাঘের আবাস্থল নিরাপদ করতে না পারা, চোরাই শিকার ও খাদ্যের অভাবে বাঘের সংখ্যা কমছে। তাই বাঘের সংখ্যা বাড়াতে সরকারি ও বেসকারি প্রকল্পগুলো দীর্ঘমেয়াদি করতে হবে। তা না হলে প্রকল্প আসবে যাবে, বাঘ বাঁচানো যাবে না। তবে বৈদেশিক সাহায্যে চলমান প্রকল্পগুলো পাশাপাশি বাজেটেও বাঘ রক্ষার্থে অর্থ বরাদ্ধ দিতে হবে। এছাড়াও আইনের কঠোর বাস্তবায়ন, বনবিভাগে প্রাণিবান্ধব কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ করেও বাঘ রক্ষা সম্ভব।

এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোস্তফা ফিরোজ বাংলা ট্রিবিউকে বলেন, ‘আমাদের কাছে বাঘের সংখ্যা নিয়ে আপডেট কোনও তথ্য নেই। সর্বশেষ ২০১৫ সালে বাঘ গণনা করা হয়। গত দেড়বছরে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে না কমেছে তা আমাদের জানা নেই। তবে নিশ্চিত করে বলতে পারি, পরিস্থিতি আগের চেয়ে খারাপ হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাঘ রক্ষার্থে সরকারের পক্ষ থেকে কোনও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ দেখছি না। সরকার ২০১০ সালের বাঘ সম্মেলনে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে? তা দেখা দরকার। শুধু পরিকল্পনা করলে হবে না, তা বাস্তবায়ন করতে হবে। তা না হলে বাঘের সংখ্যা কমতেই থাকবে।’

বন বিভাগ ও বেসরকারি হিসাব অনুযায়ী, ২০১৫ সালে ক্যামেরা ট্রাপের মাধ্যমে সুন্দরবনে ১০৬টি বাঘের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এ পদ্ধতিতে বাঘ গণনা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য। তবে ২০০৪ সালে বাঘের পায়ের ছাপ চিহ্নিত করে সুন্দরবনে ৪৪০টি বাঘের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। তার মধ্যে পুরুষ ১২১টি, বাঘিনী ২৯৮টি ও বাচ্চা ২১টি। আর ২০০৭ সালে এ সংখ্যা কমে অর্ধেকে চলে আসে। চলতি বছর মাত্র  ২০০টি বাঘের অস্তিত্ব পেয়েছে বনবিভাগ।

র‌্যাবের তথ্যানুযায়ী, বাঘের চোরাই শিকার প্রতিরোধে সুন্দরবনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করে থাকে। ২০০৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মোট ১৬ জন বাঘ চোরাকারবারিকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৯টি বাঘ, ২৩টি বাঘের চামড়া এবং ৫৫টি দাঁত   উদ্ধার করা হয়। তবে চলতি বছরে কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি র‌্যাব।

জানা গেছে, বাঘ রক্ষার্থে ২০০৭ সাল থেকে কাজ করছে ‘ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিম (ভিটিআরটি)’। মূলত জনসচতেনতা বাড়ানো এবং সবাইকে বাঘের আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষার কৌশল শেখানোই এ সংস্থার কাজ। বর্তমানে ৪৯টি ভিটিআরটি টিম সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় কাজ করছে। এছাড়া বাংলাদেশভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা ‘ওয়াইল্ড টিম’ এবং ইউএসএআইড-এর একটি যৌথ উদ্যোগে ২০০৪ সালে ‘বাঘ প্রজেক্ট’ শুরু হয়।

বন ও বণ্য প্রাণী নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা আরণ্যকের নির্বাহী পরিচালক মো. ফরিদ উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখনও দেশে বাঘ শিকার বন্ধ হয়নি। তবে শিকার কমেছে। কারণ, বনে বাঘ না থাকলে শিকার এমনিতেই কমবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাঘ শিকার করে চোরকারবারীরা ভারত হয়ে চীন, ইন্দোশিয়া ও থাইল্যান্ডে পাচার করে। অর্থাৎ দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে বাঘ পাচার করা হয়। সুন্দরবনে অস্ত্র ব্যবহার করে, ফাঁদ পেতে ও বিষটোপ ব্যবহার করে বাঘ ও হরিণ শিকার করা হয়। পরে এসব বাঘ চীনে পাচার করা হয়। চীনে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা ও টোটকায় বাঘের হাড় ব্যবহৃত হয়।’

এ সময় তিনি বাঘ শিকার প্রতিরোধে সামাজিক সচেনতা সৃষ্টি করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘একসময় বাঘ হত্যা করতে পারলে টাকা দেওয়া হতো। তাকে গাজী উপাধি দেওয়া হতো। তাই দীর্ঘদিন ধরে আমাদের মনে এই শিকারি মনোভাব রয়েছে। এখন মানুষ বুঝতে শিখেছে। তাই বাঘ শিকার কমে যাচ্ছে।’

বন বিভাগের তথ্য মতে, ২০১১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সারাদেশ থেকে ৩০টি বাঘের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে ২২টি চামড়া। তবে চামড়ায় কোনও ক্ষত না থাকায় বিশেষজ্ঞদের ধারণা বিষের টোপ ব্যবহার করে বাঘগুলো হত্যা করা হয়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মনিরুল হক খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাঘ হরিণের মাংস খেতে পছন্দ করে। তাই হরিণের মাংসে বিষ মিশিয়ে ফাঁদ পাতা হয়। যা খেয়ে বাঘের মৃত্যু হয়। এভাবে বাঘ হত্যা চলতে থাকলে এক সময় দেশ থেকে বাঘ বিপন্ন হয়ে যাবে। তাই বাঘ রক্ষায় সরকারকে ভারত ও নেপালের মতো দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নিতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাঘের জন্য গহীন অরণ্য দরকার হয় না। তারা মানুষের সঙ্গেও বাস করতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশের বাঘ ও মানুষ একে অপরকে নিরাপদ মনে করছে না। সবারই শিকারি মনোভাব দেখা যায়। এই মনোভাব থেকে বের হয়ে আসতে হবে।’

এ বিষয়ে বনবিভাগের খুলনা সার্কেলের বন সংরক্ষক আমির হোসাইন চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চোরা শিকারিদের দৌরাত্ম্যে সুন্দরবনের বাঘ কমে গেছে। তবে এটা থামাতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। এছাড়া বাঘ রক্ষায় সরকারও নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বাড়াতে সর্বশেষ পরিসংখ্যানকে ভিত্তি ধরে সমন্বিতভাবে কাজ করা হবে। ফলে ভবিষ্যতে বাঘের সংখ্যা বাড়বে কলে আশা করছি।’

/এআরআর/এসএনএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জিমি নেই, তারপরও খেলতে নামছে মোহামেডান
জিমি নেই, তারপরও খেলতে নামছে মোহামেডান
বায়ার্নের কোচ হওয়া থেকে এক ধাপ দূরে জিদান
বায়ার্নের কোচ হওয়া থেকে এক ধাপ দূরে জিদান
সিরীয় আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ইসরায়েলের হামলা
সিরীয় আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ইসরায়েলের হামলা
পিছিয়ে থেকেও ব্রাজিলিয়ান-গ্রানাডিয়ানের গোলে আবাহনীর দারুণ জয়
পিছিয়ে থেকেও ব্রাজিলিয়ান-গ্রানাডিয়ানের গোলে আবাহনীর দারুণ জয়
সর্বাধিক পঠিত
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!