X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

কবে ভাঙা হবে বিজিএমইএ ভবন

উদিসা ইসলাম
১২ আগস্ট ২০১৭, ১৮:৩৯আপডেট : ১২ আগস্ট ২০১৭, ২৩:৩৭

বিজিএমইএ ভবনের সামনে লাগানো আলোকচিত্রীশিল্পীদের বিলবোর্ড

হাতিরঝিল থেকে সোনারগাঁও মোড়ের দিকে রওনা হলেই হাতের বামে ফুটপাথের ওপর পথচারীর চোখ আটকে যাবে নতুন একটা বিলবোর্ডে। ঝিলের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)-এর অবৈধ ভবনটির সামনে লাগানো প্রায় ২০ ফুট বাই ৭ ফুট আকৃতির বিলবোর্ডটিতে লেখা ‘মেয়র সাহেব কবে?’ গণসচেতনতা উদ্যোগ ‘আর নয়’ এর ব্যানারে শুক্রবার স্থাপন করা এই বিলবোর্ডের ছবি স্পষ্ট বলে দিচ্ছে দখল থেকে হাতিরঝিলকে উদ্ধারের দাবি আর তার মূল ফোকাস বিজিএমইএ-র ভবনটি, আদালত যেটি রায়ের কপি হাতে পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন।

আদালতের রায়ে, বিজিএমইএ-কে ৯০ দিনের মধ্যে নিজ খরচে এই ভবনটি ভাঙার কথা বলা হয়েছে ঠিকই, তবে এ বিষয়ে সংগঠনটির পক্ষ থেকে কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। উল্টো বিজিএমইএ দাবি করছে, এটি ভাঙা তাদের দায়িত্ব নয়। অন্যদিকে, রাজউক বলছে, বিজিএমইএ কী করে তা দেখার পর তারা সিদ্ধান্ত নেবে।

এদিকে, বিলবোর্ডটি লাগানোর বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, গণসচেতনতা উদ্যোগ ‘আর নয়’ এর ব্যানারে শুক্রবার বিজিএমইএ-এর অবৈধভাবে গড়ে তোলা বহুতল ভবন ‘বিজিএমইএ কমপ্লেক্স’ ভাঙার দাবিতে একটি প্রতিবাদী ফটো ক্যাম্পেইনের আয়োজন করা হয়। এসময় সেখানে ওই বিলবোর্ডটি স্থাপন করা হয়। ওই প্রতিবাদী ফটো ক্যাম্পেইনের অংশ নেওয়া নতুন আলোকচিত্রীদের উদ্দেশে দৃকের প্রতিষ্ঠাতা শহিদুল আলম বলেন, ‘শুধু একটি আলোকচিত্র তুললেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না, বরং এই শক্তিশালী মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে সমাজ পরিবর্তন করাও সম্ভব, সমাজের অসঙ্গতিগুলোকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে সকলের সামনে তুলে ধরাও এই ক্যাম্পেইনের লক্ষ্য।’

সে লক্ষ্যে সফল হয়েছেন তারা। আবারও আলোচনায় এসেছে আদালতে অবৈধ হিসেবে ঘোষিত ভবনটি। তবে ঢাকার মেয়রকে উদ্দেশ করা হলেও এটি ভাঙার ক্ষেত্রে প্রকৃত দায় আসলে বিজিএমইএ’রই।

বিজিএমইএ ভবন (ছবি- নাসিরুল ইসলাম)    

কবে ভাঙা হতে পারে বিজিএমইএ ভবন?

গত ৫ মার্চ বিজিএমইএ ভবন অবিলম্বে ভেঙে ফেলতে সর্বোচ্চ আদালতের দেওয়া রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে (রিভিউ) করা আবেদন খারিজ করেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে কতদিন লাগবে সেই সময় আবেদন করতেও বলা হয় বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষকে। পরবর্তীতে ভবন সরাতে প্রতিষ্ঠানটি তিন বছর সময় চাইলে আদালত ৬ মাস সময় দেন। সর্বোচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী এই ভবন বিজিএমইএ-কে নিজ খরচে ভাঙতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এটি আমরা ভাঙবো কেন? আমরা উত্তরায় ভবন বানাচ্ছি সেটা শেষ হলে সেখানে চলে যাবো। ভবনের সামনে যে আলোকচিত্র লাগানো হয়েছে সেবিষয়ে তিনি বলেন, শুক্রবারে কেউ লাগিয়ে গেলে আমরা অফিস শুরু হলে ভেঙে দেবো।’ উত্তরার নতুন ভবনটির স্থানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এরপর আমরা যেখানে যাবো সেটি জনাকীর্ণ জায়গা হবে। শ্রমিকরা এসে সেসব স্থান নোংরা করবে, ভাঙচুর করবে, তখন দেখা যাবে কিভাবে সহ্য করেন?

‘এটি (বিজিএমইএ ভবন) আমরা ভাঙবো না’ উল্লেখ করে তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, ‘আমাদেরতো ভাঙার কথা না।’ তক্ষুণি আদালতের রায়ে বিজিএমইএ-কেই ভবনটি ভাঙতে বলা হয়েছে উল্লেখ করা হলে তিনি সুর পাল্টে বলেন,‘ উত্তরায় আমাদের ভবনের কাজ চলছে। শেষ হলেই যাবো। কবে শেষ হবে জানতে চাইলে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলতে চাননি তিনি।’

এদিকে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) বলছে, বিজিএমইএ-কেই ভবনটি ভাঙার নির্দেশ দেওয়া আছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তারা না ভাঙলে রাজউক উদ্যোগ নেবে। তবে সংস্থাটির কর্মকর্তা আশিস কুমার সাহা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চেয়ারম্যান দেশের বাইরে, এ বিষয়ে কী হবে সেই সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি ।’

রায়ে যা বলা হয়েছে

বিজিএমইএ ভবনটি সংগঠনের নিজ খরচায় ভেঙে ফেলতে দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায় গত বছরের ৮ নভেম্বর প্রকাশিত হয়। ৮ ডিসেম্বর রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করেন বিজিএমইএর সভাপতি। এর আগে বিজিএমইএ ভবন ভাঙার নির্দেশ দিয়ে ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল হাইকোর্ট ওই ভবনটিকে ‘হাতিরঝিল প্রকল্পে একটি ক্যানসারের মতো’ উল্লেখ করে রায় প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দিয়েছিল। পরবর্তীতে লিভ টু আপিল করে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ। এই লিভ টু আপিল খারিজ করে রায় ঘোষণা করেন আপিল বিভাগ।

পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, ‘বিজিএমইএ কমপ্লেক্স’ নামের ভবনটি নিজ খরচে অবিলম্বে ভাঙতে আবেদনকারীকে (বিজিএমইএ) নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে। এতে ব্যর্থ হলে রায়ের কপি হাতে পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে ভবনটি ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেওয়া হলো। এ ক্ষেত্রে ভবন ভাঙার খরচা আবেদনকারীর (বিজিএমইএ) কাছ থেকে আদায় করবে তারা।

/টিএন/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে
শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে
দেয়ালের দেশ: মন খারাপ করা সিনেমা
সিনেমা সমালোচনাদেয়ালের দেশ: মন খারাপ করা সিনেমা
দুবাই হয়ে ট্রানজিট ফ্লাইট স্থগিত করলো এমিরেটস
দুবাই হয়ে ট্রানজিট ফ্লাইট স্থগিত করলো এমিরেটস
ঢাকা শিশু হাসপাতালে আগুন
ঢাকা শিশু হাসপাতালে আগুন
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ