X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধুর ছবি ব্যবহার: নিয়ম কী বলে?

উদিসা ইসলাম
১৫ আগস্ট ২০১৭, ১২:৪৩আপডেট : ১৫ আগস্ট ২০১৭, ১৭:৫৪

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পঞ্চম শ্রেণির এক শিশুর আঁকা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি দিয়ে আমন্ত্রণপত্র প্রকাশের পর বরগুনার সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গাজী তারিক সালমনের বিরুদ্ধে মামলা ও তার জামিন আবেদন বাতিলের ঘটনার পর নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে, বঙ্গবন্ধুর ছবি ব্যবহারের নিয়ম কী। কিভাবে ছবি ব্যবহার করা যাবে বা যাবে না, এ ব্যাপারে কোনও আইন বা লিখিত কোনও নিয়ম আছে কিনা?— এসব প্রশ্ন এখন অনেকেরই। আইনজীবীরা বলছেন, সংবিধানে প্রতিকৃতি ব্যবহারের নিয়ম আছে। সেই অনুযায়ীই ব্যবহার করতে হবে ছবি। আর গবেষকরা বলছেন, ছবির ব্যবহার কিভাবে হবে, সেটা সামাজিক মূল্যবোধ দিয়েই বুঝতে হবে।

সংবিধানের ৪-এর ক অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার ও প্রধান বিচারপতির কার্যালয় এবং সকল সরকারি ও আধা-সরকারি অফিস, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষের প্রধান ও শাখা কার্যালয়, সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস ও মিশনসমূহে সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করতে হবে।

সংবিধানের এই বিধান অফিসের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কিন্তু একজন নাগরিক চাইলে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি আঁকতে পারবেন কিনা, সে নিয়ে কোনও নিয়ম নেই। শিশুর হাতে আঁকা বঙ্গবন্ধুর ছবিকে বিকৃত বলে মামলা করে দেওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে যখন আলোচনা হচ্ছে, তখন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার জবাব দিয়ে বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুর হুবহু ছবি আজ পর্যন্ত কেউ আঁকতে পারেনি। আমরাও যেসব ছবি ব্যবহার করি সেসব ছবিতেও কিছু খুঁত থাকে। হুবহু হয় না, সেটা আমি জানি।’

তবে জাতির পিতার ছবি নিয়ে অন্য কোনও আইন না থাকলেও বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে কোনও অবমাননাকর বক্তব্য প্রচার বা অপপ্রচারে লিপ্ত থাকলে বা এ ধরনের কাজে মদদ দিলে ব্যবস্থা নিতে আসছে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট-২০১৬। এর খসড়ার একটি অংশে জাতির পিতা এবং মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিকৃত তথ্য প্রকাশের বিরুদ্ধে ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে নেতিবাচক অপপ্রচারের জন্য শাস্তির প্রস্তাব রয়েছে।

খসড়া আইনের ১৫(৫) ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনও ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা বিদেশি নাগরিক যদি ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা আদালত কর্তৃক মীমাংসিত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বিষয়াবলী বা জাতির পিতার বিরুদ্ধে কোনও অবমাননাকর মন্তব্য, প্রচার বা অপপ্রচারে লিপ্ত হয় বা সেটাতে মদদ দেয়; তা হলে ওই ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা বিদেশি নাগরিক ডিজিটাল সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সংঘটনের অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হইবে।’ এ ধরনের অপরাধের জন্য তিন বছর থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা এক কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রাখা হয়েছে।

তবে এই আইন দিয়ে কোনও ছবিতে বঙ্গবন্ধুকে বিকৃতভাবে ‍উপস্থাপন করা হয়েছে—এমন অভিযোগে মামলা করার সুযোগ থাকলে বঙ্গবন্ধুকে অনুভবের প্রচেষ্টা থেমে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন গবেষকরা। শুধু তাই নয়, বঙ্গবন্ধুর ওপর প্রকৃত গবেষণা নিয়েও কোনও প্রশ্ন ওঠার কারণ নেই বলে মন্তব্য তাদের। ছবি ব্যবহার ও জাতির পিতাকে নিয়ে লেখালেখির ক্ষেত্রে শিগগিরই একটি সমন্বিত নিয়ম কিভাবে সামনে হাজির করা যায়, সে বিষয়েও কাজ করার কথা বলছেন তারা।

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কতগুলো জিনিস খুবই দৃষ্টিকটু। যথার্থ অর্থে এগুলো বন্ধ করা উচিত। বঙ্গবন্ধুর ছবি ছোট করে দিয়ে স্থানীয় নেতাদের ছবি বড় করে দেওয়ার মতো ঘটনাগুলো ঘটছে। এগুলো নিন্দনীয়। আত্মপ্রচারের জন্য বঙ্গবন্ধুর ছবি ব্যবহার করছে অনেকেই। যারা এসব করছে, তাদের উদ্দেশ্যটা আগে বুঝতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এগুলো আইন দিয়ে বন্ধ করা সম্ভব না। বরং আমাদের যে মূল্যবোধের জায়গাগুলো, সেগুলো নার্সিং জরুরি।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সভাপতি সোনিয়া নিশাত আমিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু মহান ব্যক্তিত্বের অধিকারী। গবেষণা যদি বস্তুনিষ্ঠ হয় ও মানসম্পন্ন তত্ত্বাবধায়কের অধীনে হয়, তাহলে আমরা আস্থা রাখতে পারি। জাতির জনক ও মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখেছেন যে নেতারা, তাদের বিষয়ে কখনও মানহানিকর মন্তব্য করা হলে মানহানি মামলা হওয়াই উচিত। কারণ সেগুলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সমালোচনা, গবেষণা নয়।’

আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ছবি কিভাবে ব্যবহার করা হবে বা হবে না বা কোনটা করলে অপরাধ হবে, সেটা আইন দিয়ে নির্ধারণ সম্ভব না। এই বিষয়টি বরং আইনের চেয়ে সামাজিক মূল্যবোধ থেকে আসতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের ফলে জনমনে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আলোচনায় ভীতি তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে এরকম বিধান না থাকাই শ্রেয়।’

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কোনও আইন নেই। তবে সংবিধানে জাতির জনকের প্রতিকৃতি ব্যবহারের নিয়ম যথাযথভাবে উল্লেখ আছে। সেটিই মানা হয়।’

/টিআর/টিএন/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক এমডিসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক এমডিসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
বঙ্গোপসাগরে ডুবলো জাহাজ, ভাসছেন ১২ নাবিক
বঙ্গোপসাগরে ডুবলো জাহাজ, ভাসছেন ১২ নাবিক
মাঠ প্রশাসনকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ ইসির
মাঠ প্রশাসনকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ ইসির
ভারতের একটি হোটেলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত ৬
ভারতের একটি হোটেলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত ৬
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের