X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

উত্তরের পানি থমকে গেছে মধ্যাঞ্চলে

শফিকুল ইসলাম
১৮ আগস্ট ২০১৭, ২০:৪১আপডেট : ১৮ আগস্ট ২০১৭, ২৩:০৫

উত্তরের পানি থমকে গেছে মধ্যাঞ্চলে দেশের উত্তরাঞ্চলের বন্যার পানি কিছুটা নামতে শুরু করলেও নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে দেশের মধ্যাঞ্চল। এর মধ্যে আছে ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও মাদারীপুরের নিম্নাঞ্চল। অমাবস্যার প্রভাবে আসা অতিমাত্রার জোয়ার উত্তরাঞ্চলের বন্যার পানি বঙ্গোপসাগরের দিকে নেমে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করছে। এ কারণেই প্লাবিত হচ্ছে দেশের মধ্যাঞ্চল হিসেবে পরিচিত জেলাগুলো।
অবশ্য এসব জেলার নদীতীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হলেও তা ভয়াবহ আকার ধারণ করেনি বলে জানিয়েছেন বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের কর্মকর্তারা। তাদের মতে, অতিমাত্রায় বৃষ্টি না হলে ভয়াবহ রূপ নেবে না বন্যা। তবে সামনে যেহেতু অমাবস্যা রয়েছে সেক্ষেত্রে সাগরে উঁচুমাত্রার জোয়ার হওয়ার আশঙ্কা আছে। এই বন্যা সর্বোচ্চ ১৫ দিন থাকতে পারে বলেও সতর্ক করেছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। এর কর্মকর্তারা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে শুক্রবারও (১৮ আগস্ট) পানি কিছুটা বেড়েছে।
এই মুহূর্তে দেশের ছোটবড় ২৯টি নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ব্রহ্মপুত্র নদীর পানিও বেড়েছে কিছুটা। এ চিত্র আরও ৩-৪ দিন অব্যাহত থাকবে বলে জানায় বোর্ড। যেহেতু প্রবল আকারের ভারী বৃষ্টি হচ্ছে না সেহেতু এই পানিবৃদ্ধি মানুষকে নতুন করে আতঙ্কিত করবে না বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও আশঙ্কা হচ্ছিল, এই সময়ে ২০ লাখ কিউসেক অতিরিক্ত পানি আসবে ব্রহ্মপুত্র নদীতে। যা ১০টি বুড়িগঙ্গা নদীর পানির সমান। এটি হতে পারতো ইতিহাসের সবচেয়ে বড় রেকর্ড।
বাংলাদেশ সচিবালয়ে স্থাপিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেল থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, এ পর্যন্ত বন্যায় সারাদেশে ২০ জন মারা গেছে। তবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাবে এ সংখ্যা ১০৭ জন। এর মধ্যে ৯২ জনই মারা গেছেন বন্যার পানিতে ডুবে। সাপের কামড়ে মৃতের সংখ্যা ১০। বজ্রপাতে মারা গেছেন দুই জন। আর অন্যান্য কারণে মৃত্যু হয়েছে আরও তিন জনের।

বন্যা পরিস্থিতির সর্বশেষ তথ্য বাংলা ট্রিবিউনের কাছে উপস্থাপন করেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব গোলাম মোস্তফা। তিনি জানান, এ মুহূর্তে বন্যায় দেশের ২১টি জেলার ৯৬ উপজেলা প্লাবিত। নতুন করে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মধ্যাঞ্চলের কয়েকটি জেলার কিছু উপজেলা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রায় ৩৩ লাখ মানুষ। এ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা ৯ লাখ ৭৩ হাজার। আর কমবেশি নষ্ট হয়েছে ১ লাখ ৭২ হাজার ২৭০ হেক্টর জমির ফসল।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ভারপাপ্ত সচিব গোলাম মোস্তফা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, প্রতিদিনই বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণ পাঠানো হচ্ছে। নিজস্ব মজুদও রয়েছে প্রতিটি জেলায়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় মন্ত্রণালয়ে ২৪ ঘণ্টা খোলা রয়েছে কন্ট্রোল রুম। বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি জেলায় মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো হয়েছে যুগ্ম-সচিব পদমর্যাদার একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে। জেলা পর্যায়ে বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, সমন্বয় ও ত্রাণ কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় সহযোগিতা করছেন তিনি।

এছাড়া চলতি অর্থবছরে বন্যাপ্রবণ জেলাগুলোতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৩ হাজার ৭৮২ মেট্রিক টন চাল ৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা ও ৭২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার। এর মধ্যে বন্যাপ্লাবিত জেলাগুলোতে গত কয়েকদিনে দেওয়া হয় ১ হাজার ৩৬৫ মেট্রিক টন চাল ও ৬৯ লাখ টাকা।

বন্যা মোকাবিলায় সরকার আন্তরিকতার সঙ্গে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করেছেন এই ভারপ্রাপ্ত সচিব। তার দাবি, এই মুহূর্তে ত্রাণের কোনও অভাব নেই। এরপরও প্রয়োজন হলে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে জেলা প্রশাসকদের চাহিদা অনুযায়ী। তারপরও যদি কোনও এলাকায় ত্রাণ না পৌঁছায় বা সংকট থাকে তাহলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জেলা প্রশাসন ও মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, প্রধানমন্ত্রী প্রতিটি জেলার বন্যা পরিস্থিতি নজরে রাখছেন ও প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। সেই নির্দেশনার আলোকে কাজ করছে মন্ত্রণালয়। তিনি বলেন, ‘আমরা সব জেলার বন্যা পরিস্থিতি সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছি। বন্যা মোকাবিলায় সরকার ঘরে বসে নেই। জেলা প্রশাসকদের চাহিদামতো প্রয়োজনীয় খাদ্যশস্য ও আর্থিক বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। একটি লোকও যেন খাবারের কারণে কষ্ট না পায় সেজন্য সব জেলা প্রশাসনকে সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা চালাতে বলা হয়েছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী নিজেও বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শনে যাচ্ছেন।’

এদিকে মাঠ প্রশাসনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব ছুটি বাতিল করে কর্মক্ষেত্রে থাকার জন্য জরুরি নির্দেশ দিয়েছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংস্থা বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড। এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বন্যা কবলিত জেলাগুলোতে ১ হাজার ৮২৪টি মেডিক্যাল টিম কাজ করছে।

/এসআই/জেএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
শিশু হাসপাতালে আগুন: পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন
শিশু হাসপাতালে আগুন: পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন
অটোরিকশায় বাসের ধাক্কা, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা নিহত
অটোরিকশায় বাসের ধাক্কা, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা নিহত
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় উদ্যোগ নিতে হবে: জাতিসংঘ
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় উদ্যোগ নিতে হবে: জাতিসংঘ
ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধে কোন কোন খাবার এড়িয়ে চলবেন?
বিশ্ব যকৃৎ দিবসফ্যাটি লিভার প্রতিরোধে কোন কোন খাবার এড়িয়ে চলবেন?
সর্বাধিক পঠিত
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!