X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

কোরবানির পশুর সংকট নেই, দাম নিয়ে সংশয়

হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম
২১ আগস্ট ২০১৭, ১৪:২৩আপডেট : ২১ আগস্ট ২০১৭, ১৮:৩৯

হাটে এরই মধ্যে আনা হয়েছে কোরবানির পশু, ছবি: ফোকাস বাংলা আসন্ন ঈদুল আযহায় চট্টগ্রামে কোরবানির পশুর সংকট হবে না বলে জানিয়েছে জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস। চাহিদার প্রায় ৮৫ শতাংশ কোরবানির পশু এবার স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয়েছে বলে দাবি তাদের। তবে বন্যায় উত্তর বঙ্গসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অনেক পশু মারা যাওয়াসহ নানা অজুহাতে এবার কোরবানির পশুর দাম বেশি আদায় করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টরা।

চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এবার চট্টগ্রামে কোরবানির পশুর প্রয়োজন ৫ লাখ ৯১ হাজার। যার মধ্যে ৫ লাখ ২ হাজার পশু ( প্রায় ৮৫ শতাংশ) স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয়েছে। অবশিষ্ট ১৫ শতাংশ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আনা পশুর মাধ্যমে পূরণ করা হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘কোরবানিকে সামনে রেখে শুক্রবার (১৮ জুলাই) পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পশু এসেছে ৫০ হাজার। বাকি ৪০ হাজারের মতো পশুর ঘাটতি রয়েছে। ওগুলো বেচা-কেনা শুরুর আগেই বাজারে সরবরাহ করা হবে।’

গত বছর চট্টগ্রামে ৫ লাখ ৪৭ হাজার পশু কোরবানি করা হয়। এর মধ্যে গরু ও মহিষ কোরবানি করা হয় ৩ লাখ ৬৫ হাজার। বাকি এক লাখ ৮২ হাজার ছাগল ও ভেড়া কোরবানি করা হয়। 

কোরবানির পশুর সংকট নেই, দাম নিয়ে সংশয়

জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্র জানায়, গরুর দাম বেড়ে যাওয়ায় গত কয়েক বছর সারা দেশের মতো চট্টগ্রামেও প্রচুর গরুর খামার গড়ে উঠেছে। লাভজনক হওয়ায় এখন গরু পালনের দিকে ঝুঁকছেন গ্রামীণ বাসিন্দারা। জেলার বাঁশখালী, আনোয়ারা, পশ্চিম পটিয়া, সাতকানিয়া, রাঙ্গুনীয়ায় ব্যক্তি উদ্যোগে গরুর খামার ও গরু পালন করা হচ্ছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম জেলায় ২ হাজার ৯৩টি খামার রয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস। এর মধ্যে ৪০ শতাংশ খামারে বাণিজ্যিকভাবে পশু প্রতিপালন করা হচ্ছে। বাকি ৬০ শতাংশ পারিবারিক খামারের। প্রতিটি পারিবারিক খামারে দুই/তিনটি করে পশু পালন করা হয় বলে তারা জানান।

এদিকে কোরবানির পশু বেচাকোনার জন্য চট্টগ্রাম নগরীর হাটগুলোতে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছেন ইজারাদাররা। কোরবানির দিন যতই ঘনিয়ে আসছে হাটগুলোতে পশুর সংখ্যা ততই বাড়ছে। তবে চাঁদ উঠার পর থেকে কোরবানির পশু বেচাকেনা শুরু হবে বলে জানিয়েছেন তারা।

গত ১০ জুলাই নিজস্ব মালিকানার ছয়টি বাজার ইজারা দেওয়ার অনুমতি পায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। ওই দিন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে চিঠি পাঠিয়ে ৮ কোটি ১৯ লাখ ২৩ হাজার ৩৫৮ টাকায় এই ছয়টি পশুর হাট ইজারা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

কোরবানির পশুর সংকট নেই, দাম নিয়ে সংশয়

পরে স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী ৬ কোটি ২৫ লাখ টাকায় নগরীর ‘সাগরিকা গরু বাজার’, ১ কোটি ৫২ লাখ ৭৮৬ টাকায় ‘বিবির হাট গরু বাজার’, ১২ লাখ ১২ হাজার ৭৮৬ টাকায় ‘কর্নেল হাট’, ১১ লাখ ৫৫ হাজার ৭৮৬ টাকায় ‘ফইল্যাতলী বাজার’, ১৪ লাখ ৫৩ হাজার টাকায় ‘বকশির হাট’ এবং ৪ লাখ ১ হাজার টাকায় ‘দেওয়ান হাট’ বাজার ইজারা দেয় সিটি করপোরেশন।

এদিকে সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও এবার নানা অজুহাতে অসাধু ব্যবসায়ীরা কোরবানির পশুর বাড়তি দাম আদায় করতে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা জানিয়েছেন, এবার কোরবানির পশুর সংকট না থাকলেও গতবারের তুনলায় এবার ক্রেতাদের বেশি দামে পশু কিনতে হতে পারে। বন্যায় উত্তর বঙ্গ ও বিভিন্ন এলাকায় অনেক পশু মারা যাওয়াসহ নানা অজুহাতে এবার ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের কাছ থেকে বেশি দাম নিতে চাইবেন। তবে ব্যবসায়ীদের এসব অজুহাতে কান না দিতে ক্রেতাদের পরামর্শ দিয়েছেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রেয়াজুল হক। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এবার বন্যার অজুহাত তুলে এক শ্রেণির মধ্যস্বত্বভোগী পশুর বাজার অস্থির করার চেষ্টা করছেন। তাই গুজবে কান না দিয়ে ক্রেতাদের স্বাভাবিক নিয়মে পশু কেনার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’  

দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরাও। তারা গোখাদ্যের দাম বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে পশু প্রতিপালনে অতিরিক্ত টাকা খরচ হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে চট্টগ্রামে গরু এনে বিক্রি করেন মো. আমির হোসেন। এই গরুর বেপারি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গতবারের তুলনায় এবার আমাদের এলাকায় প্রচুর গরু প্রতিপালন করা হয়েছে। তাই গরুর সংকট হবে না। তবে এইবার গরুর দাম কিছুটা বাড়বে। এই বছর গো খাদ্যের দাম শুরু থেকে অনেক বেশি ছিল। পাশাপাশি গত দুই সপ্তাহের বন্যায় বিভিন্ন এলাকায় অনেক পশু মারা গেছে। যার প্রভাব কোরবানির পশুর হাটে পড়বে।’

একই কথা জানালেন কুষ্টিয়ার গরু বেপারি রেজাউল হক। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এবার কোরবানির পশুর দাম গত বছরের চেয়ে তুলনায় কিছুটা বাড়বে। বন্যায় দেশের অধিকাংশ সড়ক নষ্ট হয়ে গেছে। তাই এবার পশু পরিবহনে বাড়তি খরচ হবে, যার প্রভাব কোরবানির পশুর ওপর পড়েবে। এছাড়া বন্যায় পশুমৃত্যুর কারণে হাটে পশুর সংকটও দেখা দিতে পারে।’

/এফএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
দিল্লিকে ভয় ধরিয়ে হারলো গুজরাট
দিল্লিকে ভয় ধরিয়ে হারলো গুজরাট
ডিইউজে নির্বাচনে সভাপতি পদের মীমাংসা মামলার শুনানি ২৫ এপ্রিল
ডিইউজে নির্বাচনে সভাপতি পদের মীমাংসা মামলার শুনানি ২৫ এপ্রিল
জুড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে মারধরের অভিযোগ
জুড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে মারধরের অভিযোগ
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী