X
বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪
২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের কৌশলগত কূটনীতির সুফল মিলছে

শেখ শাহরিয়ার জামান
১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২৩:০৫আপডেট : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২৩:৫৮

টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের নিষ্পেষিত জাতিগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার, তাদের সেখানে নিরাপদ অবস্থান ও বাংলাদেশে বসবাসরত রেহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দীর্ঘদিন কূটনৈতিক প্রয়াস চালিয়ে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন অবর্ণনীয় হয়ে উঠলে এই কূটনৈতিক প্রচেষ্টাও আরও জোরদার হয়। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ও দেশের সাম্প্রতিক বিবৃতিতে মিয়ানমারের প্রতি নিন্দা ও বাংলাদেশের প্রশংসায় এই প্রচেষ্টার সুফল ফুটে উঠেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক রীতিনীতির মধ্যে থেকে এ ধরনের সমস্যা মোকাবিলার জন্য যে ধরনের কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়ার দরকার, সেটিই আমরা নিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘কূটনীতি কোনও হঠকারী বা সাময়িক ব্যবস্থা নয়। বরং অনেক হিসাব-নিকাশ করে কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়ে থাকে। বাংলাদেশও এর ব্যাতিক্রম নয়।’
গত তিন দশক ধরে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক। তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা ইস্যুটি কৌশলগত ও পরিকল্পিতভাবে বিবেচনা করেই বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এসব উদ্যোগ নিয়েছে।’ সঙ্গত কারণেই এসব উদ্যোগের কিছু অংশ দৃশ্যমান হলেও বেশিরভাগ অংশই দৃশ্যমান নয় বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশের নেওয়া এসব কূটনৈতিক উদ্যোগের ফল কিছুটা দৃশ্যমান হয়েছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে রোহিঙ্গা বিষয়ে দুইবার আলোচনা ও দ্বিতীয়বার বিবৃতি প্রকাশের মধ্য দিয়েছে। এছাড়া, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন পার্লামেন্টে এ বিষয়ে রেজ্যুলেশন গ্রহণ, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগের মাধ্যমে তাদের রোহিঙ্গা বিষয়ে সংবেদনশীল করে তোলার মতো বিষয়গুলোও এসব কূটনৈতিক উদ্যোগেরই ফল।
এম শহীদুল হক বলেন, ‘দীর্ঘ ৯ বছর পর নিরাপত্তা পরিষদে সর্বসম্মতিক্রমে মিয়ানমার ইস্যুতে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের রেজ্যুলেশনের ভাষাও যথেষ্ট কঠোর।’ তিনি বলেন, ‘এই সমস্যা মিয়ানমারে উদ্ভূত হয়েছে এবং এর সমাধান মিয়ানমারকেই করতে হবে। আমরা আশা করি, বাংলাদেশকে সঙ্গে নিয়ে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হবে।’
রোহিঙ্গাদের মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে চলছে ত্রাণ বিতরণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রোহিঙ্গাদের অবশ্যই মিয়ানমারের নাগরিকত্ব দিতে হবে এবং এবারের জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশ জোরালোভাবে বিষয়টি উত্থাপন করবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এ অঞ্চলের বড় বড় দেশগুলোর পাশাপাশি বিশ্বের অন্য শক্তিশালী দেশগুলোর সঙ্গেও বাংলাদেশ নিবিড় যোগাযোগ রাখছে।’ তিনি বলেন, ‘প্রথম অবস্থায় অনেকে ভারত ও চীনের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা করলেও তারা এখন বাংলাদেশের অবস্থানের প্রতি সহানুভূতিশীল।’
চীন নিরাপত্তা পরিষদের একজন স্থায়ী সদস্য ও ভেটো ক্ষমতার অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও নিরাপত্তা পরিষদে সর্বসম্মতিক্রমে বিবৃতি প্রকাশে বাধা না দেওয়াই প্রমাণ করে, তারা এ বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। এছাড়া, নিরাপত্তা পরিষদের প্রভাবশালী আরও দুই সদস্য যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যও প্রথম থেকেই রোহিঙ্গা ইস্যুতে তাদের উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়ে আসছে।
কয়েকদিন আগে চীনের রাষ্ট্রদূতসহ ৪০ জনেরও বেশি রাষ্ট্রদূত কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের অবস্থা সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। তারা স্বচক্ষে রোহিঙ্গাদের দুঃখ-দুর্দশা দেখেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতদের উপস্থিতিতেই মিয়ানমার সীমান্তে আগুন ও ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে। চীন ও ভারতের রাষ্ট্রদূতসহ সব দেশের রাষ্ট্রদূতেরাই বিষয়টি দেখেছেন।’
ভারত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দেশটি এরই মধ্যে আমাদের জানিয়ে দিয়েছে, তারা এই সংকটের সময়ে আমাদের পাশে থাকবে।’ এবারের জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের একাধিক বৈঠক হবে বলেও তিনি জানান।
এদিকে, সরকারের আরেকটি সূত্র জানায়, যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে রোহিঙ্গা ইস্যুতে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীকে সেখানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এছাড়া, আরেক পরাশক্তি রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সঙ্গে আগামী সপ্তাহেই মাহমুদ আলীর বৈঠকের কথা আছে বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন-
‘কাপড় নয়, খাবার চাই’
পুলিশি পাহারা থাকলেও আতঙ্কে বৌদ্ধ সম্প্রদায়

ফের আকাশসীমা লঙ্ঘন, মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে প্রতিবাদ

বিদেশি ত্রাণ কক্সবাজার পৌঁছে দিচ্ছে সেনাবাহিনী, বণ্টনে থাকছে না জনপ্রতিনিধি

/টিআর/
সম্পর্কিত
ক্যাম্পকে ‘যুদ্ধক্ষেত্র’ ভেবে বড় হচ্ছে যে শিশুরা
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এনজিওগুলোর গতিবিধিতে নজরদারি বাড়ছে
পাহাড় থেকে আরসা কমান্ডার গ্রেফতার, অস্ত্র-গোলাবারুদ উদ্ধার
সর্বশেষ খবর
নোয়াখালীতে ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধাকে ধর্ষণের অভিযোগ
নোয়াখালীতে ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধাকে ধর্ষণের অভিযোগ
গাজা নিয়ে নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভার ঐক্যে ফাটল
গাজা নিয়ে নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভার ঐক্যে ফাটল
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি বিতর্ক
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি বিতর্ক
অজ্ঞান করে সর্বস্ব কেড়ে নিতো বিশ্বজিত
অজ্ঞান করে সর্বস্ব কেড়ে নিতো বিশ্বজিত
সর্বাধিক পঠিত
১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের প্রিলির ফল প্রকাশ
১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের প্রিলির ফল প্রকাশ
শিক্ষার্থী ভর্তির টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার নির্দেশ
শিক্ষার্থী ভর্তির টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার নির্দেশ
রণক্ষেত্রে রুশ অগ্রগতি পাল্টে দিতে পারে ইউক্রেন যুদ্ধের গতিপথ
উদ্বিগ্ন হোয়াইট হাউজরণক্ষেত্রে রুশ অগ্রগতি পাল্টে দিতে পারে ইউক্রেন যুদ্ধের গতিপথ
বাবার নির্বাচনি প্রচারণায় নামা মেয়ের গাড়ির ধাক্কায় শিশু নিহত
বাবার নির্বাচনি প্রচারণায় নামা মেয়ের গাড়ির ধাক্কায় শিশু নিহত
সৌরবিদ্যুতের দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় সরকার
সৌরবিদ্যুতের দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় সরকার