X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা ইস্যু: নেতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতিতে

গোলাম মওলা
১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১২:১৪আপডেট : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৮:১৫

রোহিঙ্গা সংকট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনী জাতিগত সহিংসতা শুরু করার পর থেকে লাখ-লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে থাকে। সরকারি হিসেবে এখন পর্যন্ত পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা সাত লাখেরও বেশি। বিপুল পরিমাণ এই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর থাকা, খাওয়া ও চিকিৎসাসেবা দিতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। এই ব্যয়ভার ভার  বাংলাদেশকেই আপাতত বহন করতে হবে। ফলে এর চাপ পড়বে জাতীয় বাজেটের ওপর। এই চাপ কমাতে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা—ইউএনএইচসিআর ছাড়াও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন দাতা সংস্থাকে রোহিঙ্গাদের  থাকা-খাওয়ার ব্যয় নির্বাহের জন্য সম্পৃক্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন দেশের কয়েকজন অর্থনীতিবিদ। তারা বলছেন, এই রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা লাখ-লাখ রোহিঙ্গাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করতে গিয়ে ইতোমধ্যেই চালের দামের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এর ফলে দেশজুড়ে চালের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে।

এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বর্তমানে চালের দাম বাড়ার পেছনে রোহিঙ্গা সমস্যার সম্পর্ক রয়েছে। ব্যবসায়ীরা যখন শুনছেন, সাত লাখ রোহিঙ্গা এসেছে, সেখানে চালের চাহিদা বাড়বে। এ সুযোগে ব্যবসায়ীরাও চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘সাত লাখ রোহিঙ্গার খাওয়া ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে গিয়ে জাতীয় বাজেটে বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি হবে।’

মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘ত্রাণ ও বাসস্থান নির্মাণে মন্ত্রণালয়ে এই ধরনের হয়ত একটা বাজেট আছে। তবে সেটা খুবই অপ্রতুল। কারণ, বাজেট প্রণয়নের সময় রোহিঙ্গা ইস্যুটি ছিল না। সংশোধিত বাজেটে এই খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। সেক্ষেত্রে অন্যান্য প্রকল্প কাটছাঁট করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘বর্তমানে খাদ্য ছাড়াও রোহিঙ্গাদের বাসস্থান, চিকিৎসা ও পয়ঃনিষ্কাশন সমস্যাও প্রকট। এক্ষেত্রে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর ছাড়াও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন দাতা সংস্থাকে সম্পৃক্ত করা গেলে ভালো হতো। রোহিঙ্গাদের জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে যে সাহায্য আসছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় কম।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘এই সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে কতদিন থাকবে, তার কোনও ঠিক নেই। ভবিষ্যতে তারা যে স্বদেশে ফিরবে, এরও কোনও নিশ্চয়তা নেই। ফলে সরকারের বাজেটের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বেই।’

রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করে চালের দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,  ‘বর্তমানে দেশে চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী। এমন অবস্থায় নতুন করে সাত লাখ রোহিঙ্গার খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করতে গেলে চালের চাহিদা আরও বাড়বে। এতে চালের বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।’ তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুটি হঠাৎ করে যুক্ত হয়েছে। একইসঙ্গে দেশে বিভিন্ন অঞ্চলে বড় ধরনের বন্যা হয়েছে। ফলে রোহিঙ্গাদের জন্য অবকাঠামো নির্মাণ, রাস্তাঘাট তৈরি, বন্যায় নষ্ট হওয়া অবকাঠামো ঠিক করা, সেখানকার রাস্তাঘাট তৈরি করতে সরকারের জাতীয় বাজেটে বড় ধরনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।’

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘সাত লাখ রোহিঙ্গার জীবন-যাপনে যে অর্থের প্রয়োজন পড়বে, তার একটা অংশ বাজেট থেকেই বরাদ্দ দিতে হবে।’ আগের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দুই লাখ ৩৩ হাজার রোহিঙ্গার দৈনন্দিন খরচের জন্য জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরে পক্ষ থেকে বছরে ১৩ দশমিক ৮ মিলিন ডলার বরাদ্দ থাকলেও তারা ৪ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলারের বেশি পেতোই না। অর্থাৎ বরাদ্দেরও প্রায় ১০ মিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি ঘাটতি থাকতো। এখন রোহিঙ্গার সংখ্যা বাড়ছে। বলা হচ্ছে সাত লাখ। এই হিসাবে এখন রোহিঙ্গাদের জন্য দৈনন্দিক খরচ মেটাতে লাগবে ৩৭ মিলিয়ন ডলারের মতো। এছাড়া অবকাঠামো নির্মাণসহ অন্যান্য প্রয়োজনে আরও অর্থ লাগবে।’  

সিপিডির গবেষণা পরিচালক বলেন, ‘বর্তমানে রোহিঙ্গাদের জন্য সবচেয়ে বেশি জরুরি দীর্ঘ মেয়াদে বাসস্থান, তাদের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, খাবার পানি ও চিকিৎসাসেবা। রোহিঙ্গাদের স্থায়ী বসবাসের জন্য বড় অঙ্কের খরচ লাগবে। এর সঙ্গে দৈনন্দিন খরচও লাগবে। এই অর্থ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো থেকেই আসতে হবে।’  

এ প্রসঙ্গে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী, যে সব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে, তাদের থাকা-খাওয়া চিকিৎসাসহ সব ধরনের প্রয়োজন মেটাতে অর্থের জোগান দেবে আন্তর্জাতিক অরগানাইজেনশন। জাতিসংঘ এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেবে। ইউনিসেফও আছে।’  তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার তাদের সব খরচ মেটাবে না। তবে সরকার ইচ্ছে করলে কিছুটা ভার নিতে পারে। বিশ্বব্যাংক ইচ্ছে করলে বাংলাদেশকে এক্ষেত্রে অবকাঠামো নির্মাণসহ বিভিন্নভাবে সহায়তা দিতে পারে।’

সাত লাখ রোহিঙ্গার জীবন যাপনে বছরে কী পরিমাণ অর্থ লাগতে পারে, এমন প্রশ্নে আহসান এইচ মনসুর বলেন,  ‘বছরে ৬ শ থেকে ৭শ বিলিয়ন ডলার অর্থের প্রয়োজন হবে। যা বাংলাদেশি টাকায় ৪ হাজার ৮০০ থেকে ৬ হাজার কোটি টাকা।’ তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তার পাশাপাশি  সরকারের বাজেট থেকে সামান্য কিছু দেওয়া লাগতে পারে। বড় রকমের না হলেও কিছুটা চাপ পড়বে জাতীয় বাজেটে।’

আরও পড়ুন: মাটি আঁকড়েও থাকতে পারছে না রোহিঙ্গারা

/এমএনএইচ/আপ-এসটি
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মেলায় জাদু খেলার নামে ‘অশ্লীল নৃত্য’, নারীসহ ৫ জন কারাগারে
মেলায় জাদু খেলার নামে ‘অশ্লীল নৃত্য’, নারীসহ ৫ জন কারাগারে
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
টিভিতে আজকের খেলা (২৫ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৫ এপ্রিল, ২০২৪)
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা