X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা যুবকরা কোথায়?

আমানুর রহমান রনি, উখিয়া, কক্সবাজার থেকে
১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২০:৫৫আপডেট : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১২:০৪

রোহিঙ্গা নারী

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে যে হারে রোহিঙ্গা নারী, শিশু ও বৃদ্ধ বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে, সে তুলনায় যুবকদের সংখ্যা কম। হাতেগোনা যে ক’জন এসেছে, তাদের অনেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী ও অসুস্থ। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের পরিবারের যুবকদের মধ্যে বেশিরভাগকেই মিয়ানমার সেনাবাহিনী হত্যা করেছে, বাকিরা নিখোঁজ। 

উল্লেখ্য, গত ২৪ আগস্ট দিবাগত রাতে মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর ২৯টি চৌকিতে হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। এরপর থেকেই দেশটির সেনাবাহিনী রাখাইন রাজ্যে কথিত ক্লিয়ারেন্স অপারেশন চালায়। একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থার অভিযোগ রয়েছে, অভিযানের সময় মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়িতে আগুন দেওয়াসহ গণহত্যা চালিয়ে আসছে। প্রাণ বাঁচাতে ২৫ আগস্ট থেকে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। ইতোমধ্যে চার লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশের টেকনাফ, উখিয়ায় আশ্রয় নিয়েছে।

টেকনাফ, উখিয়ায় সরেজমিনে দেখা গেছে, পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। কোনও কোনও পরিবারে বৃদ্ধও রয়েছেন। একেকটি পরিবারে গড়ে  ৫টি করে শিশু রয়েছে। প্রত্যেক নারীর কোলে এক থেকে দুই বছরের শিশু রয়েছে। কিন্তু তাদের পরিবারের তরুণদের দেখা যাচ্ছে না। রবিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে টেকনাফের ভাঙ্গা ঘাটে কথা হয় মো. সিদ্দিক (৬০) নামে এক রোহিঙ্গার সঙ্গে। তিনি নাফ নদী পার হয়ে বাংলাদেশে এসেছেন। মংডুর সেরাপাড়া এলাকায় তার বাড়ি। স্ত্রীর নাম হাবিবা খাতুন। তাদের চার ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলেরা হলেন, মো. রশিদ, রবি আলম, শামসুল আলম, মো. আলম ও মেয়ে নুসরাত। তার সঙ্গে শুধু স্ত্রী, মেয়ে নুসরাত ও ছোট ছেলে আলম ছিলেন। বাকি ছেলেরা কোথায়, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তারা সবাই বড়। পরিবারের সঙ্গে আসেনি, পরে আসবে।’ না আসার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘পরে আসবে।’

রাখাইন থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন সেলিম উল্লাহ (৪৫)। তার স্ত্রী তাসমিন পক্ষঘাতগ্রস্ত। একমাস ধরে বিছানায়। তাদের দুই মেয়ে ও ছয় ছেলে। ছেলেমেয়ের মধ্যে কেবল দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে তার সঙ্গে দেখা গেছে। বাকিরা  আসেননি।

টেকনাফ ও উখিয়ায় আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের পরিবারের যুবকদের বেশিরভাগকেই হত্যা করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী।  বাকিদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এই বিষয়ে কথা হয় রোহিঙ্গা নারী হাসিনা খাতুনের (৪০) সঙ্গে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার বাড়ি মংডুর হাওয়ার বিল। স্বামীর নাম সৈয়দ করিম (৪৫)। তিনি কাঠুরে ছিলেন। তাকে মিলিটারিরা মেরে ফেলেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার তিন ছেলে, এক মেয়ে। এর মধ্যে মিয়ানমার থেকে আসার সময় এক ছেলে বমি করতে করতে মারা গেছে।’

রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোয় ঘুরে ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ পরিবারেই পুরুষ নেই। তারা হয় মারা গেছেন, না হয় নিখোঁজ। অনেক নারী তাদের পরিবারের পুরুষ সদস্যদের মৃত্যুর খবর পেয়েছেন, তবে লাশ দেখেননি বলে জানান।

অনুসন্ধানে জানা গেছে কোনও কোনও পুরুষ সদস্যকে ‘জঙ্গি’ সংগঠন রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও আলকিনের সঙ্গে সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। অনেককেই হত্যা করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী।

উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী, ও পালংখালী এবং টেকনাফের হোয়াইক্যং, নয়াপাড়া, উনছিপ্রায় ও দমদম এলাকায় যেসব ক্যাম্প রয়েছে, সেখানে নারীরাই ত্রাণ সংগ্রহ করছেন। রাস্তায় বসে আছেন। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পরিবারে চার জন সদস্য থাকলে এর একজন তাদের সঙ্গে আছেন, বাকি তিনজন নেই। কেউ মারা গেছেন, কারও কারও খোঁজ নেই। এমনই একজন নারী অনিকা ধর (১৮)। তার স্বামীর নাম মিলন। মংডুর ফকিরা বাজার এলকায় তার স্বামী স্যালুনে কাজ করতেন। গত ২৭ আগস্ট তার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে বলে তিনি জানান। অনিকা ধর অন্তঃসত্ত্বা। পশ্চিম কুতুপালংয়ের হিন্দু ক্যাম্পে তার আশ্রয় হয়েছে। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘আমরা স্বামীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, আমি মুসলমানদের সঙ্গে পালিয়ে এসেছি।’

তার সঙ্গে কথা বলার সময় প্রমীলা শীল (২৫) নামে আরেক নারী জানান তার স্বামীকেও হত্যা করা হয়েছে। হিন্দু ক্যাম্পে এ রকম আটজন নারী রয়েছেন, যাদের স্বামীদের হত্যা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে দুই জন অন্তঃসত্ত্বা।

এদিকে অনেক রোহিঙ্গা পুরুষকে অভিযানের আগে থেকেই গ্রেফতার করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। মংডুর মরিকং এলাকার চেয়ারম্যান জাফর আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি দশ বছর ধরে চেয়ারম্যান। আমার বাবার নাম জাকির হোসেন। আমাদের পার্শ্ববর্তী এলাকার ১২ রোহিঙ্গা চেয়ারম্যানকে গ্রেফতার করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এর মধ্যে রয়েছেন, বুসিডং থানার মন্দমার চেয়ারম্যান মো. আবু, জীবন খালীর চেয়ারম্যান আয়ুব, সিংড়িপাড়া চেয়ারম্যান মো. সিদ্দিক ও হাওয়ার বিলের চেয়ারম্যান মো জাকারিয়া।’ তিনি বলেন, ‘যুবকদের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায় সেনা বাহিনী। অনেকেই পালিয়ে পালিয়ে থাকে। কিন্তু মগরা তাদের সেনাবাহিনীর হাতে ধরিয়ে দেয়।’

মংডুর বলিবাজারের তুলাতলীর বাসিন্দা রাবেয়া খাতুন (২৩)। তার স্বামীর নাম হারুন আমিন। তাকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী গুলি করে হত্যা করেছে। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামীকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করেছে। আমি সবার সঙ্গে পালিয়ে এসেছি।’ তার বোন মাবিয়া খাতুন (১৮)। স্বামীর নাম নজরুল ইসলামকেও হত্যা করা হয়েছে বলে জানান রাবেয়া খাতুন।

 

/এআরআর/এমএনএইচ/
সম্পর্কিত
কক্সবাজার জেলার রোহিঙ্গা ভোটারদের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট
মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি
মিয়ানমার ও রোহিঙ্গা সমস্যা: নিরাপত্তা পরিষদে নিজের অবস্থান তুলে ধরলো বাংলাদেশ
সর্বশেষ খবর
ঢামেকে কারাবন্দি হাজতির মৃত্যু
ঢামেকে কারাবন্দি হাজতির মৃত্যু
ফটোগ্রাফারদের ওপর খেপলেন নোরা ফাতেহি!
ফটোগ্রাফারদের ওপর খেপলেন নোরা ফাতেহি!
রানা প্লাজায় নিহতদের ফুলেল শ্রদ্ধায় স্মরণ
রানা প্লাজায় নিহতদের ফুলেল শ্রদ্ধায় স্মরণ
ভাসানটেকে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনায় মৃত্যু বেড়ে ৫
ভাসানটেকে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনায় মৃত্যু বেড়ে ৫
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…