X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ১৬ হাজার অন্তঃসত্ত্বা রোহিঙ্গা নারী

জাকিয়া আহমেদ
১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২২:১৭আপডেট : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ০৯:০৮

একটি রোহিঙ্গা পরিবার (ফাইল ছবি) মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নারী ও শিশুরা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে ১৫ থেকে ১৬ হাজার নারী অন্তঃসত্ত্বা। তাদের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেশি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং কক্সবাজার সিভিল সার্জন অফিস জানিয়েছে, সন্তানসম্ভবা নারীদের জন্য বিনা খরচে অ্যাম্বুলেন্সসহ সব ধরনের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা হয়েছে। গত রবিবার পর্যন্ত কুতুপালং কমিউনিটি ক্লিনিকে ১১ জন রোহিঙ্গা নারী সন্তান জন্ম দিয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের ম্যাটারনাল, নিউনেটাল, চাইল্ড অ্যান্ড অ্যাডোলোসেন্স হেলথ প্রকল্পের পরিচালক ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অন্তঃসত্ত্বা, স্তন্যদায়ী মা ও শিশুরা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। স্তন্যদায়ী মায়েদের শরীরে পুষ্টি নেই, খাবার নেই, তারা শিশুদের খাওয়ানোর মতো পুষ্টি পাবে কোথায়? সন্তানকে ব্রেস্ট ফিড করানোর মতো পরিবেশও নেই। রোহিঙ্গা নারীরা এমনিতেও পরিপূর্ণ পুষ্টি নিয়ে কোনোদিন ছিল– তাও মনে হয় না। তারওপর এই পরিবেশে এসে তারা আরেক ধরনের হুমকিতে পড়েছে।’ 

কক্সবাজার জেলা সিভিল সার্জন শেখ আব্দুস সালাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘এখানে ১৫ থেকে ১৬ হাজার অন্তঃসত্ত্বা রোহিঙ্গা নারী রয়েছে। যেকোনও ধরনের ঝুঁকি তাদের জন্য হাসপাতালগুলোর সক্ষমতা আরও বাড়ানো হয়েছে। চিকিৎসক, নার্স ও মিডওয়াইফ দেওয়া হয়েছে স্বাভাবিকের সময়ের চেয়েও বেশি।’ তাদের নিরাপদে হাসপাতালে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করা হয়েছে জানিয়ে সিভিল সার্জন বলেন, ‘প্রসব সংক্রান্ত যে কোনও জটিলতা হলে বিনা খরচে অ্যাম্বুলেন্সে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল, উখিয়া এবং টেকনাফ উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই ব্যবস্থা কিভাবে আরও উন্নত করা যায় সে বিষয়ে ঢাকা থেকে আসা স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে। রোহিঙ্গা নারী-শিশুদের স্বাস্থ্যগত বিষয়ে যেন কোনও অসুবিধা না হয় সেদিকে সর্বোচ্চ নজর দিয়েছি।’

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডা. আয়েশা আক্তার জানান, মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে ডায়রিয়া ও শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি।

কন্ট্রোল রুম থেকে জানা যায়, ২৫ আগস্ট থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, কক্সবাজার সদর হাসপাতাল, উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে চার হাজার ৬০৯ জন রোহিঙ্গা। এরমধ্যে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত এক হাজার ৫৪১ জন, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছে তিন হাজার ২৯৩ জন। শ্বাসতন্ত্রে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে একজনের। চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছে ৯২৫ জন। এছাড়া, বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে ১৭ হাজার ৬৮৫ জন রোহিঙ্গা। ইপিআই টিকা দেওয়া হয়েছে ৫ হাজার ৯৫৪ রোহিঙ্গা শিশুকে।

ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেশন গ্রুপের (আইএসসিজি) প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে দুই লাখ ৯৯ হাজার ৯৫৬ জনের পুষ্টি সহায়তা প্রয়োজন। এর মধ্যে পাঁচ বছরের নিচে শিশুর সংখ্যা এক লাখ ৫৪ হাজার। এছাড়া, পুষ্টি সহায়তা দরকার এমন ৯১ হাজার ৫৫৬ জন কিশোরী ও রোহিঙ্গা নারীর মধ্যে ৫৪ হাজার ৬৩৩ জন অন্তঃসত্ত্বা ও স্তন্যদায়ী মা রয়েছেন। সিভিল সার্জন শেখ আব্দুস সালাম বলেন, ‘১৬ থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হামের টিকা দেওয়া হয়েছে এক লাখ ১৩ হাজার আর ওরাল পোলিও টিকা খাওয়ানো হয়েছে ৪৩ হাজার শিশুকে।’

বর্তমানে টেকনাফ, উখিয়াসহ কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে সেখানে রয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের একটি দল। এই দলে থাকা স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তহমিনা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমরা রয়েছি উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্পে। এখানে হাজার হাজার মানুষ খোলা আকাশের নিচে রয়েছে। মিয়ানমারের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া এই জনগোষ্ঠী স্বাস্থ্যগতভাবে কখনোই সচেতন ছিল না– এটা দেখেই বোঝা যায়। কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে দেখলাম, ডায়রিয়া হলো নাকি ম্যালেরিয়া হলো– এ নিয়ে তারা মোটেই চিন্তিত নয়।’

নিরাপদ প্রসব পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ডা.সানিয়া বলেন, ‘নিরাপদ পদ্ধতিই গ্রহণ করা হয়েছে, এদের চিকিৎসার জন্য উখিয়া, টেকনাফের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোকে গত কয়েকদিনে আগের চেয়ে নানা রকম ওষুধসহ নানা চিকিৎসা সরঞ্জাম দেওয়া হয়েছে, চিকিৎসকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের মধ্যে অসুস্থ মানুষ যে খুব একটা রয়েছে তা নয়, কিন্তু এখানে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে শিশু এবং অন্তঃসত্ত্বা নারীরা। একজন চিকিৎসক হিসেবে বলতে পারি, অন্তঃসত্ত্বা রোহিঙ্গা নারীরা অপুষ্টিতে রয়েছে, এতে কোনও সন্দেহ নেই।’ রবিবার পর্যন্ত কুতুপালং কমিউনিটি ক্লিনিকে ১১ জন নারী সন্তান প্রসব করেছে বলেও জানান তিনি। ডা. সানিয়া তাহমিনা বলেন, ‘আমরা যদি দ্রুত রোহিঙ্গাদের জন্য পানি এবং স্যানিটেশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না করতে পারি, তাহলে স্বাস্থ্য বিপর্যয় ঘটতে পারে।’

 

/এএম/
সম্পর্কিত
উখিয়া ক্যাম্পে রোহিঙ্গা যুবককে কুপিয়ে হত্যা
কক্সবাজার জেলার রোহিঙ্গা ভোটারদের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট
মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি
সর্বশেষ খবর
বিএনপি গণতন্ত্রে অকার্যকর ডামি রাজনৈতিক দল: ওবায়দুল কাদের
বিএনপি গণতন্ত্রে অকার্যকর ডামি রাজনৈতিক দল: ওবায়দুল কাদের
চারতলা ভবনের ছাদ থেকে পড়ে মাদ্রাসাছাত্রীর মৃত্যু
চারতলা ভবনের ছাদ থেকে পড়ে মাদ্রাসাছাত্রীর মৃত্যু
বাংলাদেশে চিকিৎসা খাতে থাইল্যান্ডের বিনিয়োগ চান প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশে চিকিৎসা খাতে থাইল্যান্ডের বিনিয়োগ চান প্রধানমন্ত্রী
এবার ঘুমটা ভালো হবে ডু প্লেসির
এবার ঘুমটা ভালো হবে ডু প্লেসির
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী