X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

রোহিঙ্গাদের জঙ্গি দলে ভেড়ানো নিয়ে সতর্ক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

নুরুজ্জামান লাবু
২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ০১:৫১আপডেট : ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ০১:৫৪

নো-ম্যানস ল্যান্ডে রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ (ফাইল ছবি)

অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে কেউ যাতে রোহিঙ্গাদের কোনও জঙ্গি দলে ভেড়াতে না পারে, সেজন্য সতর্ক রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দাবি, রোহিঙ্গাদের দলে ভেড়াতে জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে তৎপরতা বেড়েছে এবং এর তথ্য-প্রমাণও তারা ইতোমধ্যে পেয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশঙ্কা, সামনের দিনগুলোতে এ ধরণের তৎপরতা আরও বাড়তে পারে। আর সেজন্য কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে নজরদারি বৃদ্ধির পাশাপাশি জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোকে নজরদারির মধ্যে রাখা হচ্ছে।

রবিবার ও সোমবার ঢাকার পুলিশ সদর দফতর এবং গাজীপুরে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক বলেছেন, ‘রোহিঙ্গাদের যেন কেউ মোটিভেটেড করতে না পারে, সেজন্য গোয়েন্দা নজরদারি করা হচ্ছে।’ বাংলাদেশের মাটিতে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে প্রতিবেশী দেশে হামলা করার ঘটনা বরদাশত করা হবে না বলেও তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘রিলিফ দেওয়ার নামে কারও অন্য কোনও উদ্দেশ্য থাকতে পারে। তাই যারাই রিলিফ দিতে যাক না কেন, তাদের স্থানীয় জেলা প্রশাসনকে জানাতে হবে।’

ঢাকার কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘অনেক আগে থেকেই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী জঙ্গিদের টার্গেটে রয়েছে। কারণ, রোহিঙ্গারা অনেক বছর ধরেই বঞ্চনার শিকার হয়ে আসছে। বঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে আর্থিক ও বাসস্থানের সুবিধা দিয়ে ধর্মীয় অপব্যখ্যার মাধ্যমে মোটিভেটেড করা তুলনামূলক সহজ। নতুন করে শরণার্থী হিসেবে আসা রোহিঙ্গাদেরও সহজেই মোটিভেটেড করা যাবে। তাই জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো রোহিঙ্গাদের টার্গেট করে নিজেদের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।’

সিটিটিসির অন্য এক কর্মকর্তা জানান, আল-কায়েদা ইন ইন্ডিয়ান সাব-কন্টিনেন্ট বা আইকিউএস এবং তাদের বাংলাদেশি অনুসারী আনসার আল ইসলাম অনেক আগেই রাখাইনে গিয়ে রোহিঙ্গাদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করেছিল। এমনকি, তারা রোহিঙ্গাদের নিয়ে সেখানে যুদ্ধ করারও ঘোষণা দিয়েছিল। সেই অনুযায়ী কিছু কর্মকাণ্ডও চালিয়েছিল তারা। সাম্প্রতিক রোহিঙ্গা ইস্যুতে তারা আবারও সরব হয়েছে। তারা রোহিঙ্গাদের নিজেদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিটিটিসির আরও এক সূত্র জানায়, রোহিঙ্গাদের জঙ্গি দলে ভেড়ানোর তৎপরতা কিভাবে রোধ করা যায়, তা নিয়ে সিটিটিসির কার্যালয়ে মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ওই বৈঠকে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোসহ জঙ্গিদের কর্মকাণ্ডে আরও বেশি নজরদারি বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। একইসঙ্গে ভবিষ্যতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় কী ধরণের সমস্যা তৈরি করতে পারে, তা নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন পাঠানোরও সিদ্ধান্ত হয়েছে।

জঙ্গি প্রতিরোধ নিয়ে কাজ করেছেন, এমন কর্মকর্তারা বলছেন, জঙ্গিরা এখন আর আগের মতো ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে মোটিভেটেড করার কাজ করে না। এখন অনলাইনেই তাদের তৎপরতা বেশি। তবে রোহিঙ্গাদের মোটিভেটেড করতে অনলাইনের পাশাপাশি সশরীরেও জঙ্গিদের তৎপরতা চালাতে হবে। তাই শরণার্থী শিবিরগুলোতে কারা কী উদ্দেশ্যে যাচ্ছে, কোনও জঙ্গি দলের ছদ্মবেশী সদস্য ত্রাণ সহযোগীতার আড়ালে দিনের পর দিন শরণার্থী শিবিরগুলোতে থাকছে কি না, তা নজরদারি করতে হবে। এছাড়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে আগে থেকেই যারা মোটিভেটেড হয়ে আছে তাদের মাধ্যমে বা নিপীড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নতুন সংগঠন রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) কোনও শীর্ষ নেতাদের মাধ্যমেও জঙ্গিরা তাদের সংগঠিত করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, এর আগেও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ও কক্সবাজারের টেকনাফ-উখিয়ায় থাকা রোহিঙ্গাদের জঙ্গি দলে যোগদানের নজির রয়েছে। বিশেষ করে, নব্য জেএমবি ও আনসার আল ইসলাম রোহিঙ্গাদের সংগঠিত করতে পারে। এছাড়া হিযবুত তাহরীরও রোহিঙ্গাদের নিজেদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করবে। পুলিশের গোয়েন্দা শাখার এক কর্মকর্তা জানান, তারা সবচেয়ে বেশি সতর্ক রয়েছেন আনসার আল ইসলামকে নিয়ে। আনসার আল ইসলামের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন সংগঠন ও আরকানের বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের যোগাযোগ রয়েছে বলে তারা ধারণা করছেন। এমনকি, আনসার আল ইসলামের বর্তমান সামরিক কমান্ডার বহিষ্কৃত মেজর জিয়াউল ইসলাম বিভিন্ন সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় আত্মগোপন করে ছিল।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ধারণা, জিয়াউল ইসলামের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন সংগঠনের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের আশঙ্কা, রোহিঙ্গাদের জঙ্গি দলে ভেড়াতে জিয়া বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তার ভাষ্য, জিয়ার সামরিক দক্ষতার পাশাপাশি মোটিভেশন করার ক্ষমতাও অনেক বেশি। এমনকি, দিনের পর দিন সে পাহাড়ি অঞ্চলে নানারকম বাধাবিঘ্ন পেরিয়ে অবস্থান করার সক্ষমতাও রয়েছে তার।

 

/এমএ/
সম্পর্কিত
জাতিসংঘের রোহিঙ্গা ডাটাবেজ ব্যবহার করতে চায় সরকার
ইন্দোনেশিয়ার উপকূল থেকে তিন রোহিঙ্গা শরণার্থীর লাশ উদ্ধার
ইন্দোনেশীয় উপকূলে নৌকাডুবি: ৭০ রোহিঙ্গা নিহতের আশঙ্কা
সর্বশেষ খবর
ধাক্কা মেরে ফেলে চাপা দিলো কাভার্ডভ্যান, মোটরসাইকেলচালক নিহত
ধাক্কা মেরে ফেলে চাপা দিলো কাভার্ডভ্যান, মোটরসাইকেলচালক নিহত
ডিভোর্স দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্বামী
ডিভোর্স দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্বামী
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!