X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা সংকট: রাশিয়া, চীন ও ভারতে দূত পাঠানোর পরামর্শ নাগরিক সমাজের

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২২:৩৮আপডেট : ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২৩:৫৮

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বি চৌধুরীর আহ্বানে অনুষ্ঠিত সমাবেশে মঞ্চে উপস্থিত অতিথিরা মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট মোকাবিলায় খুব শিগগিরই মিয়ানমারের সমর্থনে থাকা তিন প্রভাবশালী দেশে দূত পাঠাতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দেশের জ্যেষ্ঠ কয়েকজন নাগরিক। তবে এর আগে, এই তিনটি রাষ্ট্রের ঢাকাস্থ দূতাবাসে তারা নিজেরাই যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই উদ্যোগে কোনও রাজনৈতিক-দলীয় বা ব্যক্তিস্বার্থ নেই বলেও জানিয়েছেন তারা। এক সমাবেশে তাদের এই ঘোষণার সময় উপস্থিত নাগরিকরা হাত তুলে এসব উদ্যোগে সম্মতি জানান।
বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে এসব সিদ্ধান্তের কথা জানান সমাবেশ আহ্বানকারী সাবেক রাষ্ট্রপতি ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। তার সঙ্গে উদ্যোক্তা হিসেবে আরও ছিলেন ড. কামাল হোসেন। সমাবেশে কয়েকটি ছোট রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাবেক আমলাসহ পেশাজীবীরা উপস্থিত ছিলেন। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না সমাবেশে অংশ নেননি।
বিকাল ৪টার দিকে সমাবেশ শুরু হয়ে চলে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। শুরুতেই বি চৌধুরী ও কামাল হোসেনের লিখিত বক্তব্য পাঠ করে শোনান গণফোরাম নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী।
সিদ্ধান্ত ও প্রস্তাব
সমাবেশে সর্বশেষ দেওয়া বক্তব্যে সমাবেশের সিদ্ধান্তগুলো তুলে ধরেন বিকল্প ধারা বাংলাদেশের সভাপতি ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে— ঢাকাস্থ রাশিয়া, চীন ও ভারতের দূতাবাসে যাওয়া; জাতীয় পর্যায়ে নাগরিক কমিটি গঠন করে দেশের পাঁচটি প্রধান শহরে সমাবেশ করা এবং ভারত, চীন ও রাশিয়ায় বাংলাদেশের দূত পাঠানো।
পাঁচ শহরে সমাবেশের বিষয়টি উল্লেখ করে ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, ‘জাতীয় পর্যায়ে নাগরিক কমিটি গঠন করে দেশের পাঁচটি প্রধান শহরে সমাবেশ করা হবে। সর্বশেষ সমাবেশ হবে কক্সবাজার বা চট্টগ্রামে। শেষ সমাবেশে আমরা ১০ লাখ লোককে জড়ো করতে চাই। এর মাধ্যমে আমরা নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের জানাতে চাই, আমরা তাদের পাশে আছি।’
বি চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় সরকার যদি কোনও উদ্যোগ নেয়, তাহলে সেই উদ্যোগে পাশে থাকব এবং সহযোগিতা করব। আলোচনায় মিয়ামানারের সঙ্গে সামরিক প্রশিক্ষণ স্থগিত করায় যুক্তরাজ্য সরকারকে ধন্যবাদ জানান বাংলাদেশের সাবেক এই রাষ্ট্রপতি।
ঐক্যের বিষয়ে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘দল-মত নির্বিশেষে ঐকমত্য করে জাতীয় কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় ঐক্যের কোনও বিকল্প নেই। তবে কারও ডাকের অপেক্ষায় থাকলে চলবে না।’
সমাবেশে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী প্রস্তাব করেন, বি চৌধুরীকে আসিয়ান দেশগুলোতে, ড. কামাল হোসেনকে জাতিসংঘসহ পশ্চিমা দেশগুলো এবং কাদের সিদ্দিকীকে ভারতে দূত হিসেবে পাঠানো যেতে পারে।
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে দ্রুতগতিতে কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করতে হবে। তিনি আবুল হাসান চৌধুরীকে মিয়ানমারে পাঠানোর প্রস্তাব করেন। এছাড়া, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে কাজে লাগানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
সমাবেশে মঞ্চে উপস্থিত অতিথিদের একাংশ কারও ডাকের অপেক্ষা নয়, কাজ শুরু করতে হবে: ড. কামাল হোসেন
দেশে ফিরে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেন দ্রুত রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতীয় ঐক্যের জন্য কাজ শুরু করেন, বক্তব্যে সে আহ্বান জানান কাদের সিদ্দিকী। এ বিষয়ে ড. কামাল হোসেন তার আলোচনায় দীর্ঘ বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘কারও ডাক বা আমন্ত্রণের জন্য কোনও অপেক্ষা করব কেন?’ কাদের সিদ্দিকীর দিকে তাকিয়ে তিনি বলেন, ’৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের সময় বা ৭৫-এ বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর কি কারও ডাকের অপেক্ষা করেছিলেন?’ ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে তিনটি রাষ্ট্রে প্রতিনিধি পাঠানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘আমলা নয়, নাগরিকদের পাঠাতে হবে।’
রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরকারের প্রশংসার বিষয়ে গণফোরাম সভাপতি বলেন, ‘জনগণ হচ্ছে রাষ্ট্রের মালিক। মালিকের কাজ সোচ্চার হওয়া, আদেশ করা; কেবল সরকারের প্রশংসা করা নয়। কে, কখন বিদেশ থেকে ফিরে আসে দাওয়াত দেবে; কার অনুমতি লাগবে— এসব করে রোহিঙ্গা সংকট কাটবে না। নাগরিকরাই শক্তিশালী। তাদেরই উদ্যোগ নিয়ে কাজ করতে হবে।’
বিদেশে দূত পাঠাতে সময় নষ্ট না করার পরামর্শ দিয়ে কামাল হোসেন বলেন, ‘বার্মার সঙ্গে বসে দ্রুত স্থায়ী একটি সমাধান করতে হবে। এর জন্য এখনই শুরু করতে হবে তৎপরতা। এর জন্য সরকারের দাওয়াতের অপেক্ষা করবো না।’ তিনি বলেন, ‘গোটা মানবজাতিই দায়িত্ব নিয়েছিল যে মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটবে না। কিন্তু এখন মিয়ানমারে যা ঘটছে, তা অকল্পনীয়। আমার বিশ্বাস, রাশিয়া ও চীনের কাছে মিয়ামানারের রোহিঙ্গা নির্যাতনের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরলে তার নিশ্চুপ থাকবে না।’
সমাবেশে আরও আলোচনা করেন বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, আ ব ম মোস্তফা আমীন, রোববার সম্পাদক সৈয়দ তোশাররফ হোসেন, জেএসডি সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা জাফরুল্লাহ খান প্রমুখ।

/এসটিএস/টিআর/
সম্পর্কিত
মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি
মিয়ানমার ও রোহিঙ্গা সমস্যা: নিরাপত্তা পরিষদে নিজের অবস্থান তুলে ধরলো বাংলাদেশ
রোহিঙ্গাদের বাসা ভাড়া দিলে নেওয়া হবে আইনি ব্যবস্থা
সর্বশেষ খবর
সরকারি প্রতিষ্ঠানে একাধিক পদে চাকরি
সরকারি প্রতিষ্ঠানে একাধিক পদে চাকরি
এখনই হচ্ছে না হকির শিরোপা নিষ্পত্তি, তাহলে কবে?
এখনই হচ্ছে না হকির শিরোপা নিষ্পত্তি, তাহলে কবে?
রবিবার গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়
রবিবার গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়
চুয়াডাঙ্গায় ৪২ পেরোলো তাপমাত্রা, জনজীবনে হাঁসফাঁস
চুয়াডাঙ্গায় ৪২ পেরোলো তাপমাত্রা, জনজীবনে হাঁসফাঁস
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি