কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ায় আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ত্রাণ কার্যক্রমে সেনাবাহিনী সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ প্রসঙ্গে রোহিঙ্গাদের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দেওয়া ত্রাণ গ্রহণ শেষে বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘রোহিঙ্গাদের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রমে সেনাবাহিনী যোগ দেবে, এটাই সরকারের সিদ্ধান্ত।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর ও চট্টগ্রামে ত্রাণ কার্যক্রমে জড়িত সেনা কর্মকর্তারা বলেন, মন্ত্রীর কথাই ঠিক। এরইমধ্যে সেনাবাহিনী ত্রাণ কার্যক্রমে সহায়তা শুরু করেছে। তবে রোহিঙ্গাদের মাঝে সরাসরি ত্রাণ বিতরণ নয়, ক্যাম্প এলাকায় অস্থায়ী কেন্দ্রীয় নির্মাণ ও বিদেশ থেকে আসা ত্রাণ স্থানীয় প্রশাসনের কাছে পৌঁছে দেবে সেনাবাহিনী।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর উইং কমান্ডার মো. জাহাঙ্গীর হোসেনকে প্রধান সমন্বয়ক করে একটি ত্রাণ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ঘাঁটি জহুরুল হকের সদস্যরা নিজস্ব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে সিভিল এভিয়েশনের সঙ্গে সমন্বয় করে বিমানবন্দরে ত্রাণ সামগ্রী আনলোড, আপলোড ও পরিবহনের কাজ করে যাচ্ছে।
চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর ত্রাণ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রের মুখপাত্র ক্যাপ্টেন রাকিবুল হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিদেশ থেকে ত্রাণ আসার শুরু থেকেই সেগুলো গ্রহণ করে সঠিকভাবে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে সেনাবাহিনী।’
আইএসপিআর-এর পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রাশিদুল হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সরাসরি রোহিঙ্গাদের হাতে ত্রাণ বিতরণের কোনও নির্দেশনা আমরা পাইনি। আমাদের কাছে যে নির্দেশনাটি রয়েছে, তা হলো, জেলা প্রশাসনকে সহায়তা-বিষয়ক নির্দেশনা। আর সেই সহায়তা হচ্ছে এয়ারপোর্ট থেকে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসনের কাছে বিদেশি সংস্থা বা বিদেশ থেকে আসা ত্রাণগুলো পৌঁছে দেওয়া। সেই কার্যক্রম চলমান রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ক্যাম্প এলাকায় যদি অস্থায়ী ক্যাম্প নির্মাণ করা হয়, সেক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ করা হবে বলে যেটা ভাবছেন, সেটা নয়।’
গত ১০ সেপ্টেম্বর থেকে বিভিন্ন দেশ থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ত্রাণসামগ্রী আসতে থাকে। এ পর্যন্ত মোট ১৪টি বিমানযোগে মোট ২২৮ দশমিক ৭ টন ত্রাণ সামগ্রী চট্টগ্রামে এসে পৌঁছেছে। সর্বশেষ সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সাহাযার্থে ইন্দোনেশিয়ার ২টি সি-১৩০ পরিবহন বিমানে প্রায় ২০ টন ত্রাণসামগ্রী নিয়ে চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমান বন্দর অবতরণ করে। ইন্দোনেশিয়ার এ দু’টি চালানসহ এখন পর্যন্ত পাঁচটি দেশ থেকে ত্রাণ সামগ্রী চট্টগ্রামে পৌঁছেছে। এরমধ্যে ভারত দু’টি বিমানে ১০৭ টন, ইন্দোনেশিয়া আটটি বিমানে ৭৭ টন, ইরান একটি বিমানে ৪০ টন, মরক্কো একটি বিমানে ১৪টন ও মালয়েশিয়া একটি বিমানে ১২ টন ত্রাণ পাঠিয়েছে।
আরও পড়ুন: রাখাইনের তমব্রু এখনও জ্বলছে (ভিডিও)