X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

শুধু আইন নয়, গৃহকর্মী নির্যাতন বন্ধে দরকার মানসিকতার পরিবর্তন

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২৩:০৫আপডেট : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২৩:০৫

গৃহশ্রমিক শিশুদের অধিকার বিষয়ক সেমিনারে বক্তারা গৃহকর্মী নির্যাতন বন্ধ ও তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ২০১৫ সালে নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। এই নীতিমালা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে সঠিক আইন প্রণয়ন প্রয়োজন। তবে আইন প্রণয়ন করলেই যে নির্যাতন পুরোপুরি বন্ধ করা যাবে, তা নয়। এক্ষেত্রে গৃহকর্তা-গৃহকর্ত্রীদের দৃষ্টিভঙ্গি ও মানসিকতার পরিবর্তন সবচেয়ে বেশি জরুরি।

রবিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিকালে বাংলা ট্রিবিউন কার্যালয়ে ‘গৃহকর্মী শিশুর অধিকার প্রতিষ্ঠায় গৃহশ্রমিক সুরক্ষা ও কল্যাণনীতির আলোকে আইন প্রণয়ন’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। সেমিনারটির আয়োজক ছিল অনলাইন নিউজপেপার বাংলা ট্রিবিউন। সহযোগিতায় ছিল ঢাকা ট্রিবিউন,অস্ট্রেলিয়ান এইড, সিএসআইডি, ওয়ার্ড ভিশন ও শাপলা নীড়।

শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু সিএসআইডির নির্বাহী পরিচালক খন্দকার জহুরুল আলমের সঞ্চালনায় সেমিনারে বক্তব্য রাখেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক চুন্নু, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ড.আবুল হোসেন,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মো. আবু ইউসুফ,ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্সের পরিচালক চন্দন জেড গোমেজ, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন সার্বক্ষণিক সদস্য মো. নজরুল ইসলাম,শাপলা নীড়ের অ্যাডভোকেসি অফিসার আতিকা বিনতে বাকী এবং সিএসআইডির প্রজেক্ট ম্যানেজার মো. আকরাম হোসাইন।

খন্দকার জহুরুল আলম শ্রম প্রতিমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘অনেক চেষ্টার পর ২০১৫ সালে গৃহকর্মী শিশুর অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমরা একটি নীতিমালা প্রণয়ন করেছি।এখন প্রয়োজন একটি আইন প্রণয়ন করা। কিন্তু আইন দিয়েই যে সবসময় কাজ হয়, তা কিন্তু নয়। আমি মাঝে মাঝে হতাশা হয়ে যাই যখন শুনতে পাই সমাজের উচ্চশ্রেণি ও শিক্ষিত মানুষরাই গৃহকর্মী বেশি নির্যাতন করেন। কিন্তু তাদের আইন শেখাবেন কিভাবে? তারা কি বোঝেন না কোনটি ন্যায় কোনটি অন্যায়? খেয়াল করে দেখবেন শিক্ষিত মানুষ, রাজনীতিবিদ,ব্যবসায়ী যারা মানবাধিকারের কথা বলেন, যারা নীতির কথা বলেন তারা তো জানেন দেশে লেবার ল’ নামে একটি আইন আছে কিন্তু তারা কি মানেন? ফলে সমাজের এমন পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসতে হলে শুধুমাত্র আইন দিয়ে কিছু হবে না, মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। তবে আইন অবশ্যই হবে বলে আমি আশা করি।’

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘পথশিশুসহ সব শিশুর জন্মনিবন্ধন বাধ্যতামূলক। এটা শিশুর জন্মগত অধিকার ও মানবাধিকার। এ বিষয়ে অবশ্যই সরকারসহ অন্যান্য সংস্থাকে এগিয়ে আসতে হবে।’

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ড.আবুল হোসেন বলেন, ‘মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে নারী শিশুদের চিকিৎসাসহ অন্যান্য সহযোগিতা দেওয়ার জন্য যে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার রয়েছে সেখানে দেখেছি বেশিরভাগ ভিকটিমই আসে শিশু। আবার এদের মধ্যে ৯৯ শতাংশই গৃহকর্মী। যখন এ বিষয়ে মামলা করা হয় তখন আদালতে গিয়ে ভিকটিমের পরিবার বলে তাদের সন্তান নাকি সিঁড়ি থেকে পড়ে গেছে। তাকে তার গৃহকর্তা খুব আদর করতো। এইসব কথা যখন আদালতে গিয়ে বলে তখন আদালতও অসহায় হয়ে পড়েন। আর এসব কারণেই নির্যাতনকারীরা পার পেয়ে যাচ্ছে। ফলে আইন থাকলেও মানসিকতা পরিবর্তন না হলে কিছুই করার থাকে না।’

গৃহকর্মীদের মজুরি বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ারম্যান ড. আবু ইউসুফ বলেন, ‘গৃহকর্মীদের বয়স ও অভিজ্ঞতাভেদে সর্বনিম্ন একটি মজুরি থাকা উচিত। যদি কারও কাজ ফুলটাইম হয় তাহলে তাদেরও সপ্তাহে একদিন ছুটি থাকতে হবে। কর্মঘণ্টাও থাকতে হবে নির্দিষ্ট নিয়মে। আবার জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী তাদের অভিজ্ঞতা ও কাজের দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে বেতন স্কেল ঠিক করতে হবে। কিন্তু অনেকেই আছেন গৃহকর্মীদের ইচ্ছামতো মজুরিতে নিয়োগ দেন। আবার গৃহকর্মীদের দিয়ে কাজ করান ১২ থেকে ১৬ ঘন্টা।’

ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্সের পরিচালক চন্দন জেড গোমেজ বলেন, ‘গৃহকর্মীদের শ্রমকে ঝুঁকিপূর্ণ কাজের যে তালিকা আছে সেই তালিকায় রাখা যায় কিনা তা বিবেচনার জন্য মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এছাড়া, রাজধানীতে বেশিরভাগ গৃহকর্মী আসে গ্রাম থেকে। ফলে ওই গৃহকর্মীকে কোথায় কার বাড়িতে কোন কাজের জন্য আনা হলো তা যদি নিবন্ধন করা যায়, তাহলে গৃহকর্মী নির্যাতনের বিষয়ে মনিটরিং করা সম্ভব হবে। আর নির্যাতন বন্ধে মনিটরিংটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

শাপলা নীড়ের অ্যাডভোকেসি অফিসার আতিকা বিনতে বাকী বলেন,‘গৃহকর্মী নিয়োগের নীতিমালায় নিয়োগের সময় চুক্তি করার বিষয়ে বলা রয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিয়োগে লিখিত চুক্তি হয় না। ফলে আমরা আমাদের জায়গা থেকে চেষ্টা করছি অন্তত মৌখিক চুক্তির মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া। পরে আমরা নিয়মিত ফলোআপ করি সেখানে শিশুটি কোন অবস্থায় আছে। তবে গৃহকর্মীর অধিকার বিষয়ে গণমাধ্যমের মাধ্যমে প্রচারটা খুবই দরকারি। তাহলেই দ্রুতগতিতে গৃহকর্মী নির্যাতন কমবে।’

এসডিজি বাস্তবায়নে ২০১৫ সালের মধ্যে সব ধরনের শিশুশ্রম নিরসনের বিষয়ে আগামী পাঁচ বছরের কর্মপরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে সিএসআইডির প্রজেক্ট ম্যানেজার মো. আকরাম হোসাইন বলেন,‘২০২৫ সালের মধ্যে শিশুশ্রম নিরসনের কথা বলা হয়েছে। সেটি করতে হলে এখন আমাদের প্রয়োজন একটি আইন। আইনটি হলে আমরা এটি বাস্তবায়নের কথা বলবো। ওই আইনে কী কী ধারা থাকবে,এর অধীনে কী কী ধাপ থাকবে, কী কী কমিটি থাকবে, মনিটরিং সেল থাকবে– এসব দেখে বিবেচনা করেই আমরা এগুবো। অবশ্যই ২০২৫ সালের মধ্যে আমরা এই গোল বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবো।’

ছবি: সাজ্জাদ হোসেন

 

 

/আরএআর/এএম/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৩০ মামলার বিচার শেষের অপেক্ষা
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৩০ মামলার বিচার শেষের অপেক্ষা
উপজেলা নির্বাচন: ওসির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ
উপজেলা নির্বাচন: ওসির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ
মেলায় জাদু খেলার নামে ‘অশ্লীল নৃত্য’, নারীসহ ৫ জন কারাগারে
মেলায় জাদু খেলার নামে ‘অশ্লীল নৃত্য’, নারীসহ ৫ জন কারাগারে
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা