প্রস্তুতি সম্পন্ন: আজ বোধন, কাল শুরু দুর্গা পূজা

হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গা পূজা উপলক্ষে রাজধানীসহ সারাদেশের মণ্ডপে মণ্ডপে পূজার সব প্রস্তুতি এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। আজ সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় দেবীর বোধন অনুষ্ঠিত হবে। আগামীকাল মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে এর আনুষ্ঠানিকতা।
সোমবার সকালে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গিয়ে দেখা যায়, মঞ্চ তৈরি ও প্রতিমার শরীরে কাপড় পরানোর কাজে ব্যস্ত মৃৎশিল্পীরা। প্রতিমাকে শেষবারের জন্য সুন্দর করে সাজিয়ে নিচ্ছেন তারা। মন্দিরের চারপাশও সাজানো হয়েছে বাহারি নকশায়। মন্দিরের প্রধান গেটসহ অন্যান্য জায়গাগুলোও বর্ণিল হয়ে সেজে উঠেছে।
ধানমন্ডি সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির উদ্যোগে কলাবাগান মাঠের পূজা মণ্ডপে গিয়ে দেখা যায়, অস্থায়ী এ মন্দিরের সাজসজ্জার কাজ শেষ পর্যায়ে। পূজারি ও দর্শনার্থীরা প্রতিমা দেখতে আসছেন। তবে প্রতিমাকে সুন্দর করে সাজিয়ে কালো কাপড়ে ঢেকে রাখা হয়েছে।
প্রতিমা ঢেকে রাখা হয়েছে কেন— জানতে চাইলে আয়োজক কমিটির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘প্রতিমা সাজানোর কাজ শেষ। এখনই তা উন্মুক্ত করে দিলে সবাই ভিড় করবে। কিন্তু এখনও মাঠের সাজসজ্জার কাজ চলছে। মানুষ ভিড় করলে কাজে ব্যাঘাত ঘটবে বলেই প্রতিমা ঢেকে রাখা হয়েছে।’
বিভিন্ন পূজা মণ্ডপের আয়োজন কমিটির সদস্য ও পূজারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সোমবার সন্ধ্যায় দেবীর বোধন অনুষ্ঠিত হবে। অর্থাৎ দেবীকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। এরপর মঙ্গলবার সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে কল্পারম্ভের মাধ্যমে শুরু হবে দুর্গোৎসবের প্রথম দিন ষষ্ঠী পূজার আনুষ্ঠানিকতা। বিকাল ৪টায় সম্পন্ন হবে ষষ্ঠী পূজা। বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা অনুযায়ী, শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৭টায় শুরু হবে বিজয়া দশমীর আয়োজন। সকাল ৯টা ৩১ মিনিটে পূজা সমাপন ও দর্পণ বিসর্জনের পর প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনের এ উৎসব।
এদিকে, ঢাকেশ্বরী মন্দিরে মণ্ডপের সামনে খোলা স্থানে চেয়ার রেখে বসার জায়গা তৈরি করা হয়েছে। যারা পূজা দেখতে আসবেন, তাদের বসার জন্যও আলাদা জায়গা রাখা হয়েছে। ঢাকেশ্বরী মন্দির ও কলাবাগান মেলা প্রাঙ্গণে খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। প্রধান ফটকসহ গোটা মন্দির ঘিরে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মন্দিরের বিভিন্ন স্থাসে বসানো হয়েছে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। নিরাপত্তা বাহিনীকে তৎপর থাকতেও দেখা গেছে মন্দির এলাকাজুড়ে।
মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি ডি এন চ্যাটার্জি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পঞ্জিকা অনুযায়ী, মঙ্গলবার সকাল ৯টা ৫৮ মিনিট পর্যন্ত পূজার লগ্ন। সকাল ৬টা থেকে ৯টা ৫৮ মিনিটের মধ্যেই পূজা শুরু করতে হবে। তবে এদিন সকাল থেকে চণ্ডিপাঠে মুখরিত থাকবে পূজা মণ্ডপগুলো। এরপর ২৭ সেপ্টেম্বর মহাসপ্তমী, ২৮ সেপ্টেম্বর মহাঅষ্টমী ও কুমারী পূজা, ২৯ সেপ্টেম্বর মহানবমী বিহিত পূজা এবং ৩০ সেপ্টেম্বর থাকবে বিজয়া দশমী ও দর্পণ বিসর্জন।’ তিনি বলেন, ‘৩০ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টা ৫৮ মিনিটের মধ্যে পূজা ও পূজা শেষে দর্পণ বিসর্জন দিতে হবে। জগতের মঙ্গল কামনায় এবার দেবীর আগমন হয়েছে নৌকায় চড়ে, দেবী বিদায় নেবেন ঘোড়ায় চড়ে।’
কলাবাগান মাঠের মন্দিরে আসা এক পূজারি মলয় চন্দ্র পাল বলেন, ‘আমাদের এটিই সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান। এই উৎসব আমাদের জন্য আনন্দের একটি উপলক্ষ। কাল থেকে পূজা শুরু হচ্ছে। তবে আমাদের মধ্যে উৎসবের আমেজ চলে এসেছে। তাই আজই আমরা প্রতিমা দেখতে এসেছি।’
দুর্গোৎসব উপলক্ষে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা হিন্দু সম্প্রদায়সহ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশের সব নাগরিককে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন-
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বাংলাদেশ: এরশাদ