X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

বালু দিয়ে প্লট ভরাট: পানিবন্দি নন্দীপাড়ার ৩০ পরিবার

শাহেদ শফিক
২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৮:০৩আপডেট : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২৩:৪০

পানিতে তলিয়ে আছে নন্দীপাড়া বালু দিয়ে ভরাট করে প্লট নির্মাণের কারণে রাজধানী ঢাকার নন্দীপাড়া এলাকার অন্তত ৩০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। স্থানীয় সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আজিজুল হকসহ এলাকার কয়েকজন প্রভাবশালী বালু ভরাটের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকায় কেউ প্রতিবাদ করতে পারছেন না। গত দুই মাস ধরে এলাকার বাসিন্দাদের পানিবন্দি জীবন কাটাতে হচ্ছে। প্রতিদিন তাদের  হাঁটুপানি মাড়িয়ে যাতায়াত করতে হয়। বিশেষ করে স্কুলগামী শিশুদের নিয়ে বিপাকে পড়েছেন অভিভাবকরা।

পুরো এলাকা তলিয়ে আছে পানিতে স্থানীয়রা জানান, নন্দীপাড়া ব্রিজ হয়ে দক্ষিণ বনশ্রীর কাজী বাড়ির সঙ্গে নন্দীপাড়ার এক নম্বর সড়কটির সংযোগ। প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ এই সড়কটি দিয়ে যাতায়াত করেন। কিন্তু এই এলাকার পানি যেদিক দিয়ে প্রবাহিত হয় সেই পথ বালু দিয়ে ভরাট করে রাখা হয়েছে। ফলে পুরো এলাকাসহ সড়কে হাঁটু পানি জমে আছে। পানি জমে থাকার কারণে সড়কের আরসিসি ঢালাই উঠে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে সড়কটি এলাকার মানুষজন ব্যবহার করতে পারছেন না। তারা দীর্ঘপথ ঘুরে বনশ্রীর সঙ্গে যাতায়াত করছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা রিকশাচালক আব্দুর রব জানান, তুলনামূলক ভাড়া কম হওয়ায় কয়েক বছর ধরে এই এলাকায় ছোট্ট একটি ঘর ভাড়া করে তিনি পরিবার নিয়ে বসবাস করে আসছেন। কিন্তু বালু ফেলে রাখায় এখন তার বাসায় হাঁটু পরিমাণ পানি জমে আছে। যে কারণে তাকে বাধ্য হয়েই বেশি ভাড়ায় অন্যত্র বাসা নিয়ে থাকতে হচ্ছে।

বন্ধ হয়ে গেছে দোকানপাট সম্প্রতি ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, রাস্তার ওপর হাঁটুপানি জমে আছে। আশপাশের অন্তত ১০টি ঘরে পানি ঢুকেছে। পানি জমে থাকার কারণে কয়েকটি বাড়ির গাছপালা মরে যাচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বাঁশের সাঁকো তৈরি করে যাতায়াতের চেষ্টা করছেন। অনেকেই বাসা ছেড়ে দিয়ে অন্যত্র চলে গেছেন।

সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা কদম আলীর বাড়িটিও কোমর পানিতে তলিয়ে রয়েছে। তার বাড়িতে যাতায়াতের জন্য পাশের একটি বাড়ির পাশের সরু জায়গা দিয়ে বাঁশের সাঁকো তৈরি করছেন এক শ্রমিক। তিনি পাশের বালুভর্তি একটি স্থান দেখিয়ে বলেন, ‘ওখানে বালু দিয়ে ভরাট করে ফেলার কারণে পুরো এলাকা পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এখন এলাকায় শুধু বাড়ি মালিকরা ছাড়া কেউ থাকতে চায় না। গত মাস থেকে এলাকার ভাড়াটিয়ারা বাড়ি ছাড়তে শুরু করেছেন।’

যাতায়াতের জন্য সাঁকো বানাচ্ছেন স্থানীয়রা এদিকে, জমে থাকা পানির সঙ্গে স্যুয়ারেজ লাইনের পানি মিশ্রিত হয়ে পুরো এলাকা দুর্গন্ধময় হয়ে পড়েছে। দুর্গন্ধে এলাকায় টেকা দায়। এলাকার একমাত্র সড়কটি এখন ব্যবহার অনুপযোগী। জলাবদ্ধতার কারণে কেউ এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে পারছে না। স্থানীয় জওয়াহের আলীর বাড়ির ভাড়াটিয়া রোজিনা আক্তার জানান, বাসার জানালা খুললেই পচা পানির গন্ধ আসে। আবার জানালা বন্ধ করে রাখলে গরমে থাকা যায় না। তাছাড়া, বাসা থেকে বের হলেই হাঁটু পানি। বাচ্চাদের স্কুলে নিতে খুবই কষ্ট হয়।

স্থানীয়রা জানান, পানিতে ডুবে থাকা সড়কটি নন্দীপাড়ার সঙ্গে দক্ষিণ বনশ্রীর একমাত্র সংযোগপথ। এই সড়কটি দিয়ে এখন কেউ চলাচল করতে পারছে না। এলাকায় একটি রিকশার গ্যারেজ ছিল। এই গ্যারেজটিকে কেন্দ্র করে এলাকায় কয়েকশ রিকশাচালকের বসবাস ছিল। বর্তমানে গ্যারেজটি বন্ধ হয়ে গেছে। তুলনামূলক ভাড়া কম হওয়ায় তারা এই এলাকায় বসবাস করতেন। কিন্তু দুই মাস ধরে জলাবদ্ধতার কারণে বাসা ছেড়ে তাদের অন্যত্র বেশি ভাড়ার বাসায় থাকতে হচ্ছে।

পানিতে তলিয়ে যাওয়া একটি গলি স্থানীয় বাড়ি মালিক জওয়াহের আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পানির কারণে বাসায় কেউ থাকতে চায় না। কেউ বাড়ি ভাড়া নিতেও আসছে না। মানুষের কষ্ট হচ্ছে। বাচ্চারা স্কুলে যেতে সমস্যা হচ্ছে।’ স্থানীয় একটি বাড়ির পাহারাদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মালিক আগে বাড়িতে থাকতেন। কিন্তু এখন থাকেন না। শুধু জমি পাহারা দেওয়ার জন্য আমাকে বাড়িতে থাকতে হচ্ছে। ঘরের মধ্যে হাঁটু পানি। রাত হলে আতঙ্কে থাকি।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক বাড়ির মালিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এলাকার সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আজিজুর রহমানসহ প্রভাবশালী কয়েকজন ব্যক্তি এই এলাকায় বালুর ব্যবসা করেন। তারা প্লট মালিকদের কাছে বালু বিক্রি করেন। তাদের কাছে এলাকাবাসী পানি প্রবাহের ব্যবস্থা রাখার অনুরোধ করলেও তারা তা মানছেন না।

এ বিষয়ে আজিজুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমিও চাই এলাকার মানুষ পানিবন্দি দশা থেকে মুক্তি পাক। এর সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততা নেই। আপনারা নিউজ করেন। সরকার তদন্ত করে দেখুক এর সঙ্গে কারা জড়িত।’

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মো. বিলাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সমস্যাটি সমাধানের জন্য আমি সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিচ্ছি।’ ডিএসসিসির অঞ্চল-২ এর নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) এ কে এম মামুনুর রশিদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি খবর নিচ্ছি। কিভাবে সমাধান করা যায় সে জন্য আমাদের ইঞ্জিনিয়ারদের পাঠাব।’

 

/এএম/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
কান উৎসব ২০২৪জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
লখনউর কাছে হারলো চেন্নাই
লখনউর কাছে হারলো চেন্নাই
পশ্চিমবঙ্গে প্রথম দফার ভোট শেষেই বিজয় মিছিল
পশ্চিমবঙ্গে প্রথম দফার ভোট শেষেই বিজয় মিছিল
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া