X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধান বিচারপতির এই ছুটি কত দিনের

উদিসা ইসলাম
১০ অক্টোবর ২০১৭, ১০:০২আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০১৭, ২৩:১৩

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা সুপ্রিম কোর্টের দীর্ঘ অবকাশ শেষ হওয়ার পরদিন থেকেই প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা অসুস্থতাজনিত কারণে এক মাসের ছুটি নিয়েছেন। ছুটিতে গিয়েই অস্ট্রেলিয়ায় থাকা মেয়ের কাছে যাওয়ার জন্য তিন বছরের ভিসাও নিয়েছেন তিনি। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে প্রধান বিচারপতির এই ছুটি প্রকৃতপক্ষে কত দিনের।

গত ২৭ আগস্ট থেকে আদালতে ২৫ দিনের অবকাশ শুরু হয়। এর আগে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া রায় এবং বিচারিক আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি সংক্রান্ত গেজেট নিয়ে সরকারের সঙ্গে প্রধান বিচারপতির মতপার্থক্য দেখা দেয়। অবকাশ শেষে সুপ্রিম কোর্ট খোলার দিনই অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ৩ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর পর্যন্ত ৩০ দিনের ছুটিতে যান সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। ছুটিতে গিয়েই তিনি সস্ত্রীক অস্ট্রেলিয়ায় পাঁচ বছরের ভিসার জন্য আবেদন করেন। তাদের তিন বছরের ভিসা দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। সেখানে তাদের বড় মেয়ে সূচনা সিনহা থাকেন।

প্রধান বিচারপতি কবে যাচ্ছেন বা কেন যাচ্ছেন তা জানা না গেলেও এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিএনপি। দলটি বলছে, প্রধান বিচারপতিকে জোর করে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।

বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা বলছেন, এই ছুটি ঘিরে যে প্রশ্নের বেড়াজাল তৈরি হয়েছে, তাতে তার ফিরে আসা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারিতে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পাওয়া প্রধান বিচারপতির আগামী ৩১ জানুয়ারি অবসরে যাওয়ার কথা।

এদিকে, প্রধান বিচারপতির ছুটি শেষের এক মাস পর কিছুদিন বিরতিতে আবারও সুপ্রিম কোর্টের শীতকালীন অবকাশ রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রধান বিচারপতি আদালতে কবে ফিরবেন তা নিয়ে সংশয় রয়েই যাচ্ছে।

আইনমন্ত্রী ইতোমধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, ‘প্রধান বিচারপতি সুস্থ হয়ে, ছুটি শেষে কাজে যোগদান দেবেন– এটা আশা করছি।’

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায়ের বহুল আলোচিত পর্যবেক্ষণ অংশটি নিয়ে সৃষ্ট বিতর্কের জের ধরে প্রধান বিচারপতিকে ছুটি দেওয়া হয়েছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে বলার চেষ্টা হচ্ছে জানানো হলে ওইদিন আইনমন্ত্রী বলেন, ‘পর্যবেক্ষণ নিয়ে সমালোচনা করা আমাদের অধিকার। আমরা সংক্ষুব্ধ পার্টি হিসেবে এই রায়ের বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেবো সেটি নির্ধারিত, তার সঙ্গে মাননীয় প্রধান বিচারপতির অসুস্থতার কোনও নেক্সাস নেই। এর সঙ্গে যদি কেউ কানেক্ট করতে চায় তো আমি মনে করবো তাদের একটা দুরভিসন্ধি আছে।’

গত আগস্টে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর থেকেই ক্ষমতাসীনদের সমালোচনার মুখে রয়েছেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। অবকাশ শেষে  সুপ্রিম কোর্ট খুললে প্রধান বিচারপতির অপসারণের দাবিতে আন্দোলনের হুমকিও দিয়ে রেখেছিলেন আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা। কিন্তু তার আগেই  ছুটিতে গেলেন প্রধান বিচারপতি।

প্রধান বিচারপতির ছুটির নিয়ম প্রসঙ্গে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রধান বিচারপতির ছুটির ধরাবাঁধা কোনও নিয়ম নেই। তিনি যতদিন ইচ্ছা ছুটি নিতে পারেন। তিনি নিজেই নিজের ছুটি মঞ্জুর করেন। এটি অন্য কোথাও থেকে নিতে হয় না। ছুটিতে যাওয়ার বিষয়টি তিনি আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যম রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করবেন। এরপর রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৯৭ ধারা অনুযায়ী পরবর্তী কর্মে জ্যেষ্ঠ বিচারপতিকে কার্যভার দেবেন।’

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রধান বিচারপতিকে হিউমিলিয়েট করা হয়েছে। তিনি ইনসালটেড হয়েছেন। বাংলাদেশে আজকের সংকট হলো– সংবিধান অনুযায়ী বিচার বিভাগের স্বাধীনতা থাকবে কিনা। একটি রায় পছন্দ না হওয়ায় যা হলো তাতে প্রমাণিত হয় এরা কখনোই বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেনি। একটি রায় পছন্দ না-ই হতে পারে কিন্তু সেটির প্রতিক্রিয়া এটা হতে পারে না।’

প্রধান বিচারপতি ছুটি নেওয়ার পরপরই আইন মন্ত্রণালয় থেকে সাংবাদিকরা প্রধান বিচারপতির ছুটির আবেদনপত্রের ছবি সংগ্রহ করেন। প্রধান বিচারপতির স্বাক্ষরে রাষ্ট্রপতি বরাবরে লেখা ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে এর আগে তিনি (প্রধান বিচারপতি) দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন এবং গত বেশ কিছুদিন ধরেও বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। বিশ্রামের জন্য ৩ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর পর্যন্ত ৩০ দিন তিনি ছুটি কাটাতে চান। এরপর সরকারের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি তার এক মাসের ছুটি মঞ্জুর করেছেন এবং এই সময়ে জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞাকে প্রধান বিচারপতির কার্যভার দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, প্রধান বিচারপতি স্বেচ্ছায় বিদেশ যাচ্ছেন না বলে মনে করেন আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ছুটির আগেই আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরা বলেছিলেন, প্রধান বিচারপতি ওই রায় বাতিল না করলে বন্ধের পরে তাকে আর বসতে দেওয়া হবে না। তারা সেটিই করে দেখিয়েছেন। এখন শুনছি তাকে বিদেশ পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এরপরও দুই ঘটনায় কোনও সম্পর্ক স্থাপন করা যাবে না– এটা কী করে বলেন।’

 

/এএম/এসটি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
বেয়ারস্টো-শশাঙ্কে হেসেখেলে ২৬২ রান করে জিতলো পাঞ্জাব
বেয়ারস্টো-শশাঙ্কে হেসেখেলে ২৬২ রান করে জিতলো পাঞ্জাব
ফরিদপুরে দুই শ্রমিক হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার দাবিতে খেলাফত মজলিসের মিছিল
ফরিদপুরে দুই শ্রমিক হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার দাবিতে খেলাফত মজলিসের মিছিল
মশা তাড়ানোর ৫ প্রাকৃতিক উপায়
মশা তাড়ানোর ৫ প্রাকৃতিক উপায়
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!