X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কী করছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ

উদিসা ইসলাম
১৬ অক্টোবর ২০১৭, ১২:১০আপডেট : ১৬ অক্টোবর ২০১৭, ১৪:৩২

বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তা

বাজার থেকে মাছ এনেছেন রাবেয়া খাতুন। মাছ বেছে ধোয়ার জন্য পাত্রে নিতেই দেখলেন, মাছটি কমলা রঙের হয়ে গেছে। মাছ যতই ধোয়ার চেষ্টা করেন, পিছলে যায়। মাছ পরিষ্কার করে গরম তেলে ভাজার জন্য ফ্রাইপ্যানে ছাড়তেই মাছ খুলে খুলে ফ্রাইপ্যানে লেগে যায়। অতিরিক্ত রঙ ও রাসায়নিক দিয়ে রাখা এই মাছ খাওয়া তো দূরে থাক, রান্নার উপযোগী আর করতে পারেননি রাবেয়া খাতুন।
রাবেয়া বেগমের মতো অভিজ্ঞতা নগরবাসীর অনেকেরই। কেবল মাছ নয়, বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য নিয়েই এমন বিড়ম্বনায় পড়তে হয় তাদের। প্রাকৃতিক কৃষির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উৎপাদনের ক্ষেত্রে মাটি ও পানি ভালো না হওয়া এবং বিভিন্ন ধরনের ‘বিষ’ হরমোনের সংস্পর্শে আসার কারণে অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণ করতে বাধ্য হচ্ছে মানুষ। আর এসব বিষয় দেখভালের জন্য গঠিত বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এখনও যথেষ্ট সক্রিয় নয়। কেবল মোবাইল কোর্ট ও আর কিছু তথাকথিত প্রচার-প্রচারণার মধ্যেই আটকে আছে তারা।
সংবিধানের ১৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সবার জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে ২০১৩ সালে নিরাপদ খাদ্য আইন তৈরি করে সরকার। ২০১৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর এই আইনের আওতায় ২ ফেব্রুয়ারি গঠন করা হয় বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। তারা গত কয়েকবছরে নিরাপদ খাদ্য আইন নিয়ে জনসচেতনতা তৈরি করার জন্য পোস্টার, স্টিকার ও একটি প্যানপ্লেট তৈরি করেছে। এগুলো বিভিন্ন জেলা-উপজেলা শহরে বিতরণসহ টেলিভিশন জিঙ্গেল তৈরি করে প্রচারও চালিয়েছে সংস্থাটি। এছাড়া জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের কর্মশালাও আয়োজন করেছে। কিন্তু আজ বিশ্ব খাদ্য দিবসে এসেও প্রশ্ন রয়েই গেছে, এসব উদ্যোগে খাদ্য কতটা নিরাপদ হয়েছে।
পরিবেশ প্রতিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মনিটরিং করে, মোবাইল কোর্টের মতো নাগরিক উদ্যোগ দিয়ে খাদ্য নিরাপদ করা যাবে না। খাদ্য নিরাপদ হতে হবে উৎসে। রাসায়নিক সার বা কীটনাশকের ব্যবহার যেভাবে শেখানো হয়, সেটা নিরাপদ নয়। এমনকি পরিবহন ও গুদামজাত করার সময় যে প্রিজারভেটিভ দেওয়া হয়, সেটাও ভয়াবহ।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা পোল্ট্রি মুরগিতে সরকারি প্রতিষ্ঠান বার্ড ক্রোমিয়াম পেয়েছে। আমাদের শরীরে ক্রোমিয়ামের সহ্যক্ষমতা ২৫ পিপিএম, পোল্ট্রিতে পাওয়া গেছে ৫০০ পিপিএম। পোল্ট্রি মুরগির খাদ্য এর প্রধান কারণ।’
পাভেল পার্থ আরও বলেন, ‘খাদ্য কার জন্য নিরাপদ হবে? মানুষের জন্য নিরাপদ করতে গিয়ে প্রকৃতির অন্যান্য প্রাণের খাদ্য সংকট দেখা দিচ্ছে। শুধু মানুষের খাদ্য নিরাপদ না করে খাদ্যশৃঙ্খলের কথা মাথায় রাখতে হবে। ফরমালিন বিতর্ক দিয়ে খাদ্য নিরাপত্তা বুঝতে চাইলে মুশকিল।’
প্রাকৃতিক কৃষি নিয়ে কাজ করছেন দেলোয়ার জাহান। তিনি মনে করেন, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে হলে কেবল বাজার মনিটরিং করলে হবে না, এমন একটি কর্তৃপক্ষ থাকতে হবে যারা উৎপাদনের বিষয়টি বুঝতে পারবেন। সেই অনুযায়ী তারা মনিটরিং করবেন।
দেলোয়ার জাহান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাজারে দুই ধরনের খাবার পাওয়া যায়— সরাসরি উৎপাদন করা ও প্রক্রিয়াজাত খাবার। সরাসরি উৎপাদন করা কাঁচা সবজি বা মাছ কোথায় উৎপাদিত হচ্ছে, সেটা পর্যবেক্ষণে রাখা জরুরি। উৎপাদনের ক্ষেত্রে সেচের পানি কিং চাষের জমির মাটিটা নিরাপদ কিনা, সেইটা বিবেচনায় রাখতে হবে।’ প্রাকৃতিক কৃষিজাত পণ্যের সঙ্গে বাজারের পণ্যের তুলনা করে তিনি বলেন, ‘‘বাজারের ক্ষেত্রে উৎপাদনের সময় হরমোন, রাসায়নিক দেওয়ায় বিভিন্ন ধরনের দূষণ হয়। আমরা যে খাদ্য উৎাদন করি, তাতে রাসায়নিক বা হরমোনের নামে, ‘বিষ’ দেওয়া হয় না।’’
তিনি আরও বলেন, ‘পার্থক্যের জায়গাটা বিশাল। প্রক্রিয়াজাত জিনিষের ক্ষেত্রে প্রথম স্তরেরটা আমরা ফলো করি, কিন্তু দ্বিতীয় স্তরে গিয়ে কে কী করছে সেটার পর্যবক্ষণ রাখাও জরুরি। কেননা দ্বিতীয় স্তরে গিয়েই বেশি প্রিজারভেটিভ দেওয়া, চাল সাদা করার জন্য রাসায়নিক ব্যবহারের মতো ঘটনাগুলো ঘটে। আমরা যারা প্রাকৃতিক কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত, তারা এটা করি না। তবে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ কেবল কাজ শুরু করেছে। এ বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে তারা ধীরে ধীরে এগিয়ে যাবেন, এটাই প্রত্যাশা।’
খাদ্য নিরাপদ হওয়া জরুরি কেন, এ প্রশ্নের জবাবে পাভেল পার্থ বলেন, ‘খাদ্যের নিরাপত্তা মানুষ ও প্রতিবেশ— দু’টোর জন্যই জরুরি। মানুষ প্রতিবেশের ওপর নির্ভরশীল। মানুষ তার নিজের খাদ্য উৎপাদন করতে গিয়ে সেই প্রতিবেশকে ধ্বংস করছে। সেই প্রক্রিয়াটা ভেঙে গেলে মানুষ আসলে বাঁচতে পারবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘ধান উৎপাদন মানে ধানের ওজন না, এটা বুঝতে হবে। প্রাকৃতিক কৃষির মাধ্যমে দ্বিগুণ-তিন গুণ উৎপাদন সম্ভব। কিন্তু এই কাজগুলোর বিরুদ্ধে কাজ করেন অনেকে। ফলে প্রাকৃতিক কৃষির প্রসার হচ্ছে না।’ উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘আমি গ্রামে গ্রামে গিয়ে কৃষকদের শেখাচ্ছি। সেখানকার কৃষি কর্মকর্তা পেঁপে গাছ লাগিয়ে রাসায়নিক ব্যবহার করে অনেক বেশি উৎপাদনের পদ্ধতি শেখাচ্ছেন। এভাবে মগজ ধোলাই হচ্ছে। এগ্রিকালচার একাডেমি যেন বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনকে এগিয়ে নেওয়ার জন্যই হয়েছে।’
খাদ্যের নিরাপত্তার বিষয়টিকে অনেক বড় ইস্যু উল্লেখ করে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সচিব খালেদ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা অনেক কাজ শুরু করেছি। এগুলো সংক্ষেপে জানানো সম্ভব না।’ নিরাপদ খাদ্যের জন্য কী করছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করি। আমরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রেস্তোরাঁকে জরিমানাও করেছি। বাজার মনিটরিংয়ের কাজও কিছুটা করেছি।’

/টিআর/জেএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘শো মাস্ট গো অন’
চিকিৎসা সুরক্ষা আইন জরুরি‘শো মাস্ট গো অন’
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
বেয়ারস্টো-শশাঙ্কে হেসেখেলে ২৬২ রান করে জিতলো পাঞ্জাব
বেয়ারস্টো-শশাঙ্কে হেসেখেলে ২৬২ রান করে জিতলো পাঞ্জাব
ফরিদপুরে দুই শ্রমিক হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার দাবিতে খেলাফত মজলিসের মিছিল
ফরিদপুরে দুই শ্রমিক হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার দাবিতে খেলাফত মজলিসের মিছিল
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!