গণপরিবহন,কর্মস্থল এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নারীরা ধর্ষণসহ নানা ধরনের হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এ ধরনের নির্যাতন বন্ধে দেশের প্রশাসন কাজ করলেও নারী যেন নিজেই প্রয়োজনীয় মুহূর্তে আত্মরক্ষা করতে পারে সে জন্য দক্ষ প্রশিক্ষক দিয়ে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীদেরকে কারাতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের উদ্যোগে নারীর অগ্রযাত্রায় কাজ করা দেশের মহিয়সী ছয় নারীর স্বপ্নপূরণে ‘নারী শিক্ষার স্বপ্নভূমি স্থাপন’ নামক প্রকল্পের অন্যতম উপাদান হলো―ছাত্রীদেরকে আত্মরক্ষায় কারাতে প্রশিক্ষণ দেওয়া।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন,প্রকল্পের আওতায় বেগম রোকেয়া,শেখ ফজিলাতুন্নেছা,সুফিয়া কামাল, প্রীতিলতা,নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী এবং সারদা সুন্দরী– এই ছয় মহিয়সী নারীর নামে গড়ে ওঠা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় একাডেমিক ও আবাসিক ভবন নির্মাণ করে ছাত্রীদের শারীরিক ও মানসিক দক্ষতা বাড়াতে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাধারণ কর্মকাণ্ডের বাইরে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীদের জন্য থাকবে আলাদা প্রশিক্ষণ। এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নারী উন্নয়নে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন হবে।
প্রকল্পের প্রেক্ষাপটে বলা হয়েছে,দেশের জনগোষ্ঠীর অর্ধেকেরও বেশি নারী। এ অবস্থায় নারীর উন্নয়ন ছাড়া দেশে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। আবার নারী এখনও নিরাপদ নয়। তাই নারীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে আরও শক্তিশালী করা গেলে অনেক সমস্যার সমাধান নারী নিজেই করতে পারবে। নির্যাতনের শিকার নারীদের স্বাস্থ্যসেবা,মানসিক সেবা ও আইন সেবা দিলেই দীর্ঘমেয়াদে সুফল ভোগ করবে সমাজ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পর্যালোচনা পাঠানোর জন্য প্রস্তাবনা তৈরি করা হচ্ছে। মন্ত্রণালয় থেকে ছাড় পেলে সর্বশেষ একনেক থেকে বাজেট পাস হবে। একনেক থেকে বাজেট বরাদ্দ পাওয়ার পর ২০১৮ সাল থেকে এর কার্যক্রম শুরু হবে।
প্রকল্প সম্পর্কে গবেষণা কর্মকর্তা কামরুন্নাহার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা আশা করছি প্রকল্পটি নারী শিক্ষায় একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে। এর যেসব গুরুত্বপূর্ণ কম্পোনেন্ট রয়েছে, তার সবগুলো ঠিকমতো প্রয়োগ করতে পারলে বাস্তবায়ন সফল হবে। নারীর ওপর যেকোন ধরনের নির্যাতন বন্ধে এবং নারীর আত্মরক্ষায় দক্ষ কারাতে প্রশিক্ষক দিয়ে নারীদের কারাতেও শেখানো হবে।’
এ প্রসঙ্গে মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. ওয়াহেদুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দেশে বেশ কয়েকজন মহিয়সী নারী রয়েছেন, যারা নারীর অগ্রযাত্রায় কাজ করেছেন। নারীর উন্নয়নসহ সব ক্ষেত্রে নারীর অবদান রয়েছে চোখে পড়ার মতো। তারই ধারাবাহিকতায় ওইসব নারীদের অবদান তুলে ধরে নারী শিক্ষাকে এগিয়ে নেওয়া জরুরি বলে মনে করি। এতে শুধু নারী শিক্ষার উন্নয়ন নয়, নারী শিক্ষার্থীদের আরও স্বাবলম্বী করে তোলা সম্ভব হবে।