X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

বন্যা গেছে, এখনও মেরামত হয়নি ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক-কালভার্ট

শফিকুল ইসলাম
১৮ অক্টোবর ২০১৭, ২২:১৪আপডেট : ১৯ অক্টোবর ২০১৭, ১৬:৫০

 

বন্যার পানি নেমে গেছে সেই কবে। কিন্তু এখনও সেই বন্যার সাক্ষ্য বহন করে চলেছে ক্ষতিগ্রস্ত পুল, কালভার্ট, সড়ক ও ব্রিজ। বানের পানির তোড়ে ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ পড়ে আছে তেমনই। অনেক এলাকাতেই এখনও শুরু হয়নি কোনও ধরনের সংস্কার কাজ। কোন রাস্তা কোন কর্তৃপক্ষ মেরামত করবে বা সংস্কার করবে―তা নিয়ে চলছে টানাহেঁচড়া। একইভাবে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পুল, কালভার্ট, বেড়ি বাঁধ,ব্রিজ কোন সংস্থার টাকায় মেরামত হবে তা নিয়েও আছে মতভেদ। এসব জটিলতায় রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে অবকাঠামোগত সংস্কার শুরু না হওয়ায় বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ এখন সীমাহীন দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছে।

এদিকে, যেসব এলাকায় কিছু অবকাঠামো বা সড়কের সংস্কার চলছে বা সংস্কার কাজ শেষ হয়েছে, সেসব এলাকাতেও কাজের মান নিয়ে অভিযোগ তুলছেন স্থানীয়রা। স্থানীয়দের অভিযোগ, কোনও রকমে জোড়াতালি দিয়ে চলছে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামতের কাজ। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার জনপ্রতিনিধি ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে এমন তথ্য। জানা গেছে, সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, স্থানীয় সরকার বিভাগ, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের মধ্যেকার দ্বন্দ্বের কারণেই রাস্তাসহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পুল, কালভার্ট, বেড়ি বাঁধ বা ব্রিজের মতো অবকাঠামো সংস্কারের কাজে গতি নেই।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত একটি সেতু

বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম জানিয়েছেন, বন্যা শেষ হওয়ার গত ২০ আগস্ট কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার পাঙ্গা হাইস্কুল মাঠে বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করতে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সময় তিনি বলেছিলেন, পানি নেমে যাওয়ার পরপরই দুর্গত এলাকায় সড়ক সংস্কার কাজ শুরুর হবে। তবে প্রধানমন্ত্রীর এই প্রতিশ্রুতির পরও সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে এখনও সংস্কার কাজ শুরু হয়নি। তা নিয়ে চর হতাশা জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কুড়িগ্রাম-যাত্রাপুর সড়কের বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় খাদ তৈরি হলেও তা এখনও সংস্কার হয়নি। ফলে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে মানুষ ও পণ্যবাহী যানবাহন। গত ৭ অক্টোবর সদর উপজেলার পাঁচগাছি ও যাত্রাপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, বন্যার পানির তোড়ে গ্রামীণ সড়কগুলোর বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। বেহাল সড়কে যান চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে মানুষকে। পানি পুরোপুরি নেমে গেলেও ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাটের কোনও সংস্কার হয়নি।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত একটি সেতু

শুধু কুড়িগ্রাম নয়, দেশের বন্যা কবলিত ৩২টি জেলার প্রতিটিতেই কমবেশি একই অবস্থা। এসব সড়ক মেরামত বা সংস্কারের কাজ কবে নাগাদ শেষ হবে এবং কবে নাগাদ মানুষের দুর্ভোগ কমবে, তা বলতে পারছেন না কেউ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্টদের কেউ কেউ বলছেন, প্রকল্প তৈরি হয়ে গেছে; কেউ কেউ বলছেন, টাকা বরাদ্দ হয়ে গেছে, কিছুদিনের মধ্যেই কাজ শুরু হবে। এমন আশ্বাসেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষদের।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের ন্যাশনাল ডিজ্যাস্টার রেসপন্স কো- অর্ডিনেশন সেন্টারে’র (এনডিআরসিসি) তথ্য অনুযায়ী, বন্যাকবলিত ৩২ জেলার মধ্যে ১১ জেলার ৮৮৫ কিলোমিটার রাস্তা পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে পঞ্চগড়ে ৪৫ কিলোমিটার, দিনাজপুরে ২৬৭ কিলোমিটার, নীলফামারীতে ৩ কিলোমিটার, গাইবান্ধায় ৫০ কিলোমিটার, সিরাজগঞ্জে ৩০ কিলোমিটার, ময়মনসিংহে ১৭০ কিলোমিটার, টাঙ্গাইলে ১৭০ কিলোমিটার, জামালপুরে ১৭ কিলোমিটার, ঢাকায় ৭৭ কিলোমিটার, মানিকগঞ্জে ৩৬ কিলোমিটার ও চাঁদপুরে ২০ কিলোমিটার।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তার পরিমাণ

এর বাইরে ৩২ জেলার মধ্যে ২৮ জেলায় মোট ১০ হাজার ৩৩৬ কিলোমিটার রাস্তার আংশিক ক্ষতি হয়েছে। এসব রাস্তার মধ্যে পঞ্চগড়ে ৮১৩ কিলোমিটার, দিনাজপুরে ১ হাজার ৭২৯ কিলোমিটার, নীলফামারীতে ৫৮৯ কিলোমিটার, কুড়িগ্রামে ১৬৫ কিলোমিটার, রংপুরে ১৬৫ কিলোমিটার, নাটোরে ৯২ কিলোমিটার, জয়পুরহাটে ১০৬ কিলোমিটার, গাইবান্ধায় ৬৩০ কিলোমিটার, বগুড়ায় ৩২৫ কিলোমিটার, সিরাজগঞ্জে ১০২ কিলোমিটার, ময়মনসিংহে ৪১৯ কিলোমিটার, টাঙ্গাইলে ৮২৭ কিলোমিটার, জামালপুরে ১ হাজার ৮৭ কিলোমিটার, নেত্রকোনায় ২২১ কিলোমিটার, শেরপুরে ১৪৩ কিলোমিটার, ঢাকায় ৩ কিলোমিটার, মানিকগঞ্জে ২৫২ কিলোমিটার, মুন্সীগঞ্জে ১০ কিলোমিটার, ফরিদপুরে ৩ কিলোমিটার, মাদারীপুরে ৮ কিলোমিটার, রাজবাড়ীতে ৪৫ কিলোমিটার, কুমিল্লায় ৮৮০ কিলোমিটার, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৩০৮ কিলোমিটার, চাঁদপুরে ৬১৪ কিলোমিটার, সুনামগঞ্জে ৬১২ কিলোমিটার, মৌলভীবাজারে ১২৫ কিলোমিটার, যশোরে ৭৩ কিলোমিটার ও রাঙামাটি জেলায় ২০ কিলোমিটার রাস্তার আংশিক ক্ষতি হয়েছে।

এনডিআরসিসি সূত্র জানায়, এবারের বন্যা কবলিত ৩২ জেলার মধ্যে ১৯ জেলায় মোট ৮৮৪টি কালভার্ট ও ব্রিজের ক্ষতি হয়েছে। এসব কালভার্ট ও ব্রিজের মধ্যে দিনাজপুরে রয়েছে ৩৩৬টি, নীলফামারীতে ১৪০টি, কুড়িগ্রামে ২৩টি, রংপুরে ২৯টি, নাটোরে ২২টি, জয়পুরহাটে ৩টি, গাইবান্ধায় ২৩টি, বগুড়ায় ৬টি, সিরাজগঞ্জে ৬০টি, ময়মনসিংহে ৪৫টি, টাঙ্গাইলে ২৯টি, জামালপুরে ৪৪টি, শেরপুরে ১২টি, ঢাকায় ১৮টি, মানিকগঞ্জে ২৯টি, চাঁদপুরে ২৬টি, সুনামগঞ্জে ৩০টি এবং যশোরে রয়েছে ৯টি।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত একটি কালভার্ট

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যেসব জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের পরিমাণ ১০ থেকে ২০ কিলোমিটার, সেসব জেলার ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের মেরামত হয়েছে স্থানীয়ভাবেই। উপজেলা প্রশাসন, জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন হয়েছে এসব সড়ক মেরামতের কাজ। তবে যেসব জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের পরিমাণ ৫০ কিলোমিটার বা তার বেশি, সেসব জেলায় ভোগান্তি বেড়েছে স্থানীয়দের। দরপত্র পাওয়া, না পাওয়াকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে এই ভোগান্তি। এসব জটিলতায় দরপত্র আহ্বান করার পরও কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের। অনেক ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতাদের দ্বন্দ্বে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের মেরামত বা সংস্কার কাজ আটকে আছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকটি জেলার স্থানীয় সরকার বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা এমন অভিযোগ করেছেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সেতু বিভাগের সিনিয়র সচিব আনোয়ারুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বন্যায় ৩২ জেলার ক্ষতিগ্রস্ত সব কালভার্ট বা ব্রিজ নির্মাণ বা মেরামতের কাজ সেতু বিভাগের নয়। সেতু বিভাগের নিয়ন্ত্রণে থাকা সড়ক ও মহাসড়কে কোনও ব্রিজ বা কালভার্ট বর্তমানে ভাঙা অবস্থায় নেই। অভিযোগ পাওয়ামাত্র সেগুলো তড়িৎগতিতে মেরামতের ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইন

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় সরকার বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব নাম প্রকাশ না করাব শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক, কালভার্ট ও ব্রিজ মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে অনেক আগেই। স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীন ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা পরিষদ এগুলো নিয়ে কাজ করছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে এ কাজ চলছে।’

জেলার সড়ক ও জনপদ বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের বরাত দিয়ে বাংলা ট্রিবিউনের দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান, জেলার ১৫০ কিলোমিটার সড়ক ভেঙে গেছে ও সড়কগুলোতে গর্ত হয়ে গেছে। এছাড়া, আড়াই কিলোমিটার বাঁধ ভেঙে যাওয়াসহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৮০ কিলোমিটার বাঁধ। বন্যার পানিতে এই জেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দিনাজপুর-পার্বতীপুর, দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ, দিনাজপুর-সেতাবগঞ্জ ও বীরগঞ্জ-পীরগঞ্জ সড়ক। মাঝারি কিংবা কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দিনাজপুর-বিরল, দিনাজপুর বাইপাস, চিরিরবন্দর-আমতলী, বিরামপুর-হাকিমপুর, ফুলবাড়ী-নবাবগঞ্জ, বিরামপুর-নবাবগঞ্জ, বীরগঞ্জ-কাহারোল ও বীরগঞ্জ-খানসামা সড়ক।

জানা গেছে, দিনাজপুরের সদরের চেহেলগাজী ইউনিয়নের নশিপুর খালপাড়া এলাকার গ্রামীণ পাকা রাস্তাটিও দু’’টি স্থানে ভেঙে গেছে। এই রাস্তাটিকে দিনাজপুরের বিরল ও কাহারোল উপজেলায় যাতায়াতের বাইপাস হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন আশপাশের প্রায় ১৫ গ্রামের মানুষ। রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় এখন চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয়দের। ভেঙে যাওয়া স্থানগুলোতে বাঁশ ও বাঁশের বাতা দিয়ে মানুষ চলাচলের রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। তবে এই রাস্তায় আগের মতো রিকশা-ভ্যান, মাইক্রোবাস, ইজিবাইকসহ কোনও যানবাহনই চলাচল করতে পারছে না।

রাজারামপুর এলাকার কৃষক যতীন্দ্রনাথ ও শরিফুল ইসলাম জানান, তাদের উৎপাদিত ফসল আনা-নেওয়া করতে এই রাস্তাই ব্যবহার করে থাকেন তারা। কিন্তু এই রাস্তা মেরামত না হলে বিপাকে পড়তে হবে তাদের। অন্য রাস্তা দিয়ে চলাচল করলে প্রায় ১৪ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হবে তাদের। এতে পণ্য পরিবহনও বাড়বে।

দিনাজপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুল হালিম জানান, বন্যায় প্রায় দেড়শ কিলোমিটার রাস্তা পানিতে নিমজ্জিত ছিল। জেলার সব সড়ক মেরামত করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজন হবে ৪৫ কোটি টাকা।

বন্যার পানিতে ভেসে গেছে রাস্তা

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড দিনাজপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়জুর রহমান জানান, দিনাজপুরে এবারের বন্যায় প্রায় ২৯টি জায়গার বাঁধ ভেঙে গেছে। ভেঙে যাওয়া ও ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামতসহ বিভিন্ন সংস্কার কাজে ৩২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

এদিকে, কুড়িগ্রামের যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী সরকার বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পুনর্বাসন (গৃহ নির্মাণ) ও সড়ক মেরামতের জন্য সরকারি কোনও বরাদ্দ এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের তালিকা করে উপজেলা পরিষদে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিন আল পারভেজ বলেন, ‘ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ব্যাপক। রাস্তাঘাট মেরামতের জন্য উপজেলা প্রশাসন থেকে প্রাক্কলন তৈরি করে পাঠানো হয়েছে।’

এদিকে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, এবারের বন্যায় বিভিন্ন জেলায় ৯৩টি সড়কের একশ ২৫ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর ৫০টি ব্রিজ-কালভার্টের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১১শ মিটার। সড়ক মেরামতের জন্য ৩৩ কোটি এবং ব্রিজ-কালভার্ট মেরামতের জন্য ২০ কোটি টাকার প্রাক্কলন করে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর, কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ আব্দুল আজিজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অগ্রাধিকারভিত্তিতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কিছু সড়কের জরুরি মেরামত করা হয়েছে। অন্যান্য সড়কের মেরামতের অর্থ বরাদ্দ চেয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে পর্যায়ক্রমে সংস্কার কাজ করা হবে।’

পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজার রহমান বাংলা ট্রিবিউনের নীলফামারী প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন, জেলার ডিমলায় আটটি বাঁধ, ১০টি কাঁচা রাস্তা ও চারটি পুল-কালভার্ট মেরামতে প্রায় ২ কোটি ৪৬ লাখ টাকার প্রয়োজন। এ টাকা চেয়ে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। টাকা বরাদ্দ হলে এগুলো মোরামত বা সংস্কার করা হবে।

এদিকে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. বেলাল হোসেন জানিয়েছেন, বন্যায় এই জেলার ৫ কি.মি. বাঁধ, ২৩০ কি.মি. পাকা রাস্তা, ৩০৬ কি.মি. কাঁচা রাস্তা, ১৪০টি পুল-কালভার্ট সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলো মেরামতের বরাদ্দ এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব শফিকুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘স্থানীয় পর্যায়ের সড়ক, পুল, কালভার্ট ও অবকাঠামো মেরামত বা সংস্কারের দায়িত্ব একাধিক সংস্থার। অনেক সময় এসব সংস্থার কাজের সমন্বয় কঠিন হয়ে ওঠে। তবে সব কাজ যেহেতু জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে হয়, সেক্ষেত্রে এ দায়িত্ব জেলা প্রশাসনকেই নিতে হবে।’ এ ক্ষেত্রে অর্থ বরাদ্দ একটি সময়সাপেক্ষ বিষয় বলে জানান তিনি।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাইজার আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বন্যা চলে যাওয়ার পর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক, কালভার্ট মেরামত বা সংস্কার না হওয়া দুঃখজনক। বন্যার পর ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক, কালভার্ট ও অবকাঠামো সংস্কার ও মেরামত একটি জরুরি কাজ। সড়ক দিয়ে শুধু মানুষ যাতায়াতই করে না, মিল-কারখানায় উৎপাদিত পণ্য, কৃষকের উৎপাদিত পণ্য পরিবহনেও সড়ক-কালভার্ট উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। এর ওপর দেশের অর্থনীতি নির্ভর করে। এগুলো ঠিক না হলে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সে দিকটি বিবেচনায় রেখে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও সংস্থাগুলোর সমন্বয় জরুরি।’ এ বিষয়ে সরকারকে আরও সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।

/টিআর/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
চেলসিকে গুঁড়িয়ে দিলো আর্সেনাল
চেলসিকে গুঁড়িয়ে দিলো আর্সেনাল
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক