X
মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪
৫ চৈত্র ১৪৩০

ইসির এখতিয়ার বহির্ভূত অনেক প্রস্তাব এসেছে সংলাপে

এমরান হোসাইন শেখ
১৯ অক্টোবর ২০১৭, ২৩:০১আপডেট : ১৯ অক্টোবর ২০১৭, ২৩:০৯

 

ইসির এখতিয়ার বহির্ভূত অনেক প্রস্তাব এসেছে সংলাপে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ডাকা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সংলাপ বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে। শেষ দিনে জাতীয় পার্টি (জেপি) ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সঙ্গে সংলাপের মধ্য দিয়ে নিবন্ধিত ৪০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ইসির সংলাপ শেষ হয়। সংলাপের এজেন্ডা হিসেবে ইসি ঘোষিত রোডম্যাপ-নির্ধারিত ৭টি করণীয় ঠিক করে দিলেও এর বাইরের অনেক বিষয়ে পরামর্শ এসেছে। বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলই ইসির এখতিয়ার বহির্ভূত অনেক বিষয়ে প্রস্তাবনা দিয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের সদস্যরা নির্দিষ্ট কয়েকটি ইস্যুতে বিপরীতমুখী প্রস্তাব দিয়েছে। ইসির সংলাপে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনা করে এ চিত্র পাওয়া গেছে।

সংলাপের প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সমমনা কয়েকটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনের সময় সরকার ব্যবস্থা, সেনা মোতায়েন ও সীমানা পুনঃনির্ধারণ ইস্যুতে একই ধরনের প্রস্তাব দিয়েছে। আবার বিপরীতে কিছু দল ওই প্রস্তাবগুলোর বিষয়ে জোরালো বিরোধিতা করেছে। তারা বিপরীধমুখী প্রস্তাব দিয়েছে।

প্রসঙ্গত, নির্বাচন কমিশন একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গত ১৬ জুলাই নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা করে। ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী তারা ‍জুলাই থেকে অক্টোবরের মধ্যে সংলাপ অনুষ্ঠানের সময়সীমা বেঁধে দেয়। এরই অংশ হিসেবে সুশীল সমাজের সঙ্গে সংলাপের মধ্য দিয়ে ৩১ জুলাই সংলাপ শুরু হবে। এরপর ১৬ ও ১৭ আগস্ট গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপ করে ইসি। রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ শুরু হয় ২৪ আগস্ট, শেষ হয় ১৯ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার)। আগামী ২২ অক্টোবর নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা, ২৩ অক্টোবর নারী সংগঠন ও ২৪ অক্টোবর নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে মতবিনিময়ের মধ্য দিয়ে ইসির সংলাপ-প্রক্রিয়া শেষ হবে।

নির্বাচন কমিশন তার রোডম্যাপে সংলাপের জন্য যে ৭টি বিষয় নির্ধারণ করে দিয়েছিল, সেগুলো হলো: আইনি কাঠামো পর্যালোচনা ও সংস্কার, নির্বাচন প্রক্রিয়া সহজীকরণ ও যুগোপযোগীকরণ, সংসদীয় সীমানা পুনঃনির্ধারণ, ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও বিতরণ, ভোটকেন্দ্র স্থাপন, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট সবার সক্ষমতা বৃদ্ধির কার্যক্রম।

সংলাপ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারের মধ্যে না থাকলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, এলডিপি বাদে বেশিরভাগই দলই কোন ধরনের সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে, নির্বাচনের সময় সংসদ বহাল থাকা বা ভেঙে দেওয়া, সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচনের ব্যবস্থা করা, নির্বাচনে ভোটের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব, রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রস্তাবনা দিয়েছে। অবশ্য ইসি বলেছে, এখতিয়ার বহির্ভূত পরামর্শগুলো তারা প্রস্তাব আকারে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠিয়ে দেবে।

ইসির সংলাপে যে প্রস্তাবগুলো এসেছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, বিচারিক ক্ষমতাসহ নির্বাচনে সেনা মোতায়েন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করে সেনা মোতায়েন, সেনা মোতায়েন না করা, বর্তমান সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোকে নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন, নবম ও দশম সংসদের প্রতিনিধিদের নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনে নির্বাচন, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার, নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন, নির্বাচনের সময় স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ইসির অধীনে ন্যস্ত, কমিশনের ক্ষমতা বাড়ানো, ইসির জনবল বৃদ্ধি, ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের থেকে রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ, ভোটের অনুপাতে সংসদে প্রতিনিধিত্ব, নির্বাচনে ধর্মের ব্যবহার বন্ধ, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করা, মানবতাবিরোধী অপরাধী ও ধর্মাশ্রয়ী দলের নিবন্ধন না দেওয়া ও থাকলে বাতিল করা, অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমার বিধান, পর্যবেক্ষক নিয়োগে সতর্কতা, ভোটকেন্দ্রে সিসি টিভি/ক্যামেরা স্থাপন, ‘না ভোটের বিধান চালু করা, প্রবাসীদের ভোটাধিকার ও তাদের ভোটদানের ব্যবস্থা করা, জাতীয় পরিষদ গঠন; রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার; দলের নির্বাহী কমিটিতে বাধ্যতামূলকভাবে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য রাখান বিধান তুলে দেওয়া, সরাসরি জনগণের ভোটে সংসদে এক তৃতীয়াংশ নারী প্রতিনিধি রাখার ব্যবস্থা করা, সংরক্ষিত মহিলা আসন বিলুপ্ত করা, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলে ওই আসনে আবার নির্বাচনে ব্যবস্থা করা, নির্বাচনি ব্যয় কমানো/বাড়ানো, নির্বাচনি এলাকায় প্রজেকশন সভার আয়োজন করা, ইসির অর্থায়নে অভিন্ন পোস্টার ছাপানো, নির্বাচনি ব্যয়ের একটি অংশ ইসির মাধ্যমে সরকারের বহন করা, রাজনৈতিক দল চালাতে ইসি থেকে অর্থ প্রদান, নির্বাচনি আসন পুনঃনির্ধারণ করা/ না করা, ইভিএম চালু করা/ না করা, কালোটাকা ও বেশি শক্তি নিয়ন্ত্রণ, জামানত কমানো/বাড়ানো, হলফনামা প্রদানের বিধান বিলুপ্ত করা, লেভেল প্লেয়ি ফিল্ড তৈরি করা, নির্বাচনের আগে প্রশাসনে আমূল রদবদল, গণমাধ্যমের অবাধ প্রবেশাধিকার, গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ, ইত্যাদি।

এদিকে সংলাপে আগাগোড়া ভলো পরিবেশ বিরাজ করতে দেখা গেলেও দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গে সংলাপে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদার বক্তব্যকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি নতুন মোড় নেয়। গত রবিবার অনুষ্ঠিত বিএনপির সঙ্গে সংলাপে সিইসি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে গণতন্ত্রের পুনঃপ্রবর্তক আখ্যা দেওয়া, বিএনপির সংলাপের দিকে জাতি তাকিয়ে থাকাসহ বিএনপি সরকারের কিছু ‘উন্নয়নমূলক’ কর্মকাণ্ড তুলে ধরায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ওই বক্তব্যের জের ধরে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সংলাপ বর্জনসহ ও সিইসির পদত্যাগও দাবি করে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তার জোটের একাধিক নেতারাও সিইসির কঠোর সমালোচনা করেন। তবে, গত ১৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপের সময় সিইসি ক্ষমতাসীন দলটির সম্পর্কে প্রশংসামূলক বক্তব্য দেওয়ার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। সংলাপে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ভবিষ্যতে সতর্কতার সঙ্গে কথা বলাতে সিইসিকে পরামর্শ দেওয়া হয়।

সংলাপের বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কমিশন মনে করে সংলাপে তারা শতভাগ সফল হয়েছে। প্রত্যেকটি দলই প্রাণোচ্ছলভাবে সংলাপ করেছে। অনেকে বাস্তবসম্মত ও যৌক্তিক প্রস্তাব দিয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো সংলাপ শেষে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। সংলাপ আয়োজনে ইসিকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছে। তারা এ ধরনের আয়োজন আরও করতে ইসিতে পরামর্শ দিয়েছে। তারা বলেছে, যত বেশি সংলাপ হবে ততবেশি ইসির প্রতি আস্থা বাড়বে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হবে।’

ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব আরও বলেন, ‘সংলাপে আমরা অনেক সুপারিশ পেয়েছি। আমরা যে ৭টি বিষয়ের আলোকে সংলাপ করেছি, সেই বিষয় ছাড়াও অনেকে অন্যান্য বিষয়ে প্রস্তাব দিয়েছেন। ইসি সব প্রস্তাবই নিয়ে এখন বসে করণীয় ঠিক করবে। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে যেগুলোর ইসির এখতিয়ারভুক্ত সেইগুলোর ক্ষেত্রে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর সেগুলো ইসির এখতিয়ারের বাইরে, সেগুলো সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। করণীয় থাকলে তার ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হবে।’

এর আগে গত ১৪ অক্টোবর রাজধানীতে ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা বলেন, ‘সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ শেষে সুপারিশগুলো পুস্তিকা আকারে প্রকাশ করা হবে। এরমধ্যে ইসির আওতায় আছে, এমন প্রস্তাবগুলোর বিষয়ে আমরা বিবেচনা করব। সাংবিধানিক বিষয়গুলো নিয়ে পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে কমিশনাররা বসবেন। তবে সব ধরনের সুপারিশ সংলাপে অংশ নেওয়া দল ও সরকারের কাছে পাঠানো হবে।’

 

/এমএনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
এবার রাজশাহীর আম গাছে প্রচুর মুকুল, স্বপ্ন বুনছেন চাষিরা
এবার রাজশাহীর আম গাছে প্রচুর মুকুল, স্বপ্ন বুনছেন চাষিরা
টিভিতে আজকের খেলা (১৯ মার্চ, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (১৯ মার্চ, ২০২৪)
চীনে ৯ বছরে প্রথমবারের মতো বিয়ের সংখ্যা বেড়েছে
চীনে ৯ বছরে প্রথমবারের মতো বিয়ের সংখ্যা বেড়েছে
‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেছে, রাশিয়ায়ও চেষ্টা করেছে’
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক দলের প্রধান ম্যাককিনি‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেছে, রাশিয়ায়ও চেষ্টা করেছে’
সর্বাধিক পঠিত
লিটনের বাদ পড়া নিয়ে যা বললেন হাথুরুসিংহে
লিটনের বাদ পড়া নিয়ে যা বললেন হাথুরুসিংহে
শ্রীলঙ্কাকে উড়িয়ে ওয়ানডে সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ
তৃতীয় ওয়ানডেশ্রীলঙ্কাকে উড়িয়ে ওয়ানডে সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ
পদ্মার গ্রাহকরা এক্সিম ব্যাংক থেকে আমানত তুলতে পারবেন
একীভূত হলো দুই ব্যাংকপদ্মার গ্রাহকরা এক্সিম ব্যাংক থেকে আমানত তুলতে পারবেন
সুইডেনের রাজকন্যার জন্য দুটি হেলিপ্যাড নির্মাণ, ৫০০ স্থানে থাকবে পুলিশ
সুইডেনের রাজকন্যার জন্য দুটি হেলিপ্যাড নির্মাণ, ৫০০ স্থানে থাকবে পুলিশ
সঞ্চয়ী হিসাবের অর্ধকোটি টাকা লোপাট করে আত্মগোপনে পোস্ট মাস্টার
সঞ্চয়ী হিসাবের অর্ধকোটি টাকা লোপাট করে আত্মগোপনে পোস্ট মাস্টার