X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা ইস্যু: মানবিক সহায়তা মানে কি কেবল ভাত-কাপড়!

উদিসা ইসলাম
২০ অক্টোবর ২০১৭, ০৭:৫৭আপডেট : ২০ অক্টোবর ২০১৭, ০৭:৫৭

 

ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা (ফাইল ছবি) কেবল ভাত-কাপড় নয়, মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রে সাইকো সোশ্যাল সাপোর্ট, প্রজনন স্বাস্থ্য, শিশুদের সামাজিক আচরণ, ইমারজেন্সি স্কুল সবই জরুরি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুর্যোগকাল শেষ হলে বা যেকোনও শরণার্থী ক্যাম্পে নির্দিষ্ট সময়ের পর এসব সেবা দেওয়া যেতে পারে বলে যে ধারণা রয়েছে, তা ভুল। শুরু থেকেই ভাত-কাপড়ের সঙ্গে এসব সেবা দেওয়া হলে, তবেই মানবিক সহায়তা নিশ্চিত হয়েছে বলা যাবে।

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা লাখ লাখ রোহিঙ্গার জন্য পাহাড় কেটে তৈরি হয়েছে বসতি। সরকারি-বেসরকারিভাবে দেওয়া হচ্ছে তিন বেলা খাবার। প্রতিদিন মানবিক সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস আসছে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছ থেকে। কিন্তু মানবিক সহায়তা বলতে কেবল অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান নাকি আরও  অনেককিছু, এই প্রশ্নের জবাবে সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, জরুরি অবস্থায় এটিই মানবিক সহায়তা। তার মৌলিক অধিকারগুলো ‍পূরণ করতে পারা জরুরি। আর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা গবেষক ও কর্মীরা বলছেন, খাবার থেকে শুরু করে মানসিক সহায়তা প্রদান- সবই মানবিক সহায়তার অংশ। রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে সাইকো সোশ্যাল সাপোর্ট দিতে হবে সবার আগে। কারণ, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে তারা সব ছেড়ে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন।

ত্রাণ সামগ্রী (ফাইল ছবি) বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের আসা অব্যাহত থাকায় তাদের জন্য আরও মানবিক সহায়তা প্রয়োজন বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)। সংস্থাটি বলেছে, এ পর্যন্ত ৫ লাখ ৩৬ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। আইওএম এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ৯ থেকে ১১ অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় ১৫ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের আসা অব্যাহত থাকায় জরুরি মানবিক সহায়তার চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রায় ১০ লাখ শরণার্থীর মধ্যে সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয়, খাদ্য, পানি, স্যানিটেশন এবং  জীবন রক্ষাকারী অন্যান্য সামগ্রীর জন্য মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভর করছে।

ত্রাণ নিয়ে বসে আছে এক রোহিঙ্গা (ফাইল ছবি) কিন্তু এই মুহূর্তে এর চেয়েও জরুরি দরকার সাইকো সোশ্যাল সাপোর্ট, উল্লেখ করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মী নঈম গওহার ওয়ারা বলেন,‘ মোটা দাগে মানবিক সহায়তা বলতে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, স্বাস্থ্যসেবা, বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন বুঝালেও এসব পরিস্থিতিতে ট্রমা কাটাতে কাউন্সিলিং বেশি জরুরি।’ সেটা শুরুর সময়েই দিতে হবে নাকি পরবর্তীতে মৌলিক প্রয়োজন মেটানোর পর দিলেও হবে প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘খাদ্যের থেকেও মানসিক সহায়তা দেওয়াটা বেশি জরুরি। এখানে ধর্ষণের শিকার নারী, বাবা হারানো শিশু, সম্পত্তি ফেলে আসা মানুষ রয়েছে, তারা যে ভয়াবহতার মধ্যদিয়ে দেশ ছেড়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন, তাতে এই মানুষদের জন্য তিন বেলা খাবারের চেয়েও কাউন্সিলিং জরুরি।’

কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মাহিদুর রহমান মানবিক সহায়তা বলতে একজন মানুষ বেঁচে থাকতে যা যা প্রয়োজন সবগুলোকেই গুরুত্বপর্ণ উল্লেখ করে বলেন, ‘খাবার ছাড়া মানবিক অন্যান্য সহায়তা হলো বাসস্থান, স্যানিটেশন, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, অন্যান্য যা যা সামগ্রী লাগে বেঁচে থাকার জন্য।’ সেই বিবেচনায় সহায়তার পরিমাণ যথেষ্ট উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কন্ট্রোল সেন্টারে বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রাপ্ত ত্রাণ আসে। ওখানেই বিতরণ করে দেওয়া হয়। কয় ট্রাক আসলো, কয় পরিবার পেলো, সেটা রেকর্ড রাখা হয়। এখন প্রতিদিন ৬০/৬৫ ট্রাক আসে এবং তাতে ৭০ হাজার পরিবারের আড়াই থেকে তিন লাখ মানুষ জীবন যাপন করতে পারে।’ তাদের কাউন্সিলিং এর কোনও ব্যবস্থা করা হচ্ছে কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই সেটা পাচ্ছে।’
ত্রাণ নিতে ভিড় করছে শিশুরাও (ফাইল ছবি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যাণ্ড ভারনালিবিটি স্টাডিজের পরিচালক মাহবুবা নাসরিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মানবিক কিছু বিষয় আছে যেগুলোর বিশ্বব্যাপী মানবিক স্ট্যাণ্ডার্ড আছে। এরমধ্যে মৌলিক অধিকারগুলো বেশি, আর নিরাপত্তা ইস্যুটাও গুরুতপূর্ণ।’ তিনি বলেন, ‘একজন মানুষের বেঁচে থাকার জন্য যা দরকার, সেই বিষয়গুলো সেখানে থাকবে, তাদের প্রতি কেবল সহানুভূতি দেখানো নয়।’

বর্তমানের রোহিঙ্গা পরিস্থিতিকে সামনে রেখে তিনি আরও বলেন, ‘এর আগেরবার যখন তারা এসেছিল, একবারে এতজন আসেনি। সেসময় ইউএনএইচসিআর ও ইউএনএফপিএ দায়িত্ব নিয়ে কাজ করেছে। এবারে আমাদের একেবারেই প্রস্তুতি ছিল না। এ সময় ক্যাম্পের মানুষজন ট্রমার মধ্য দিয়ে যায়। তাদের জন্য যথাযথ কাউন্সিলিং এর সুযোগ তৈরি করা জরুরি।’

ত্রাণ সংগ্রহ করছে রোহিঙ্গা নারীরা (ফাইল ছবি) একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ মানবিক সহায়তা নিয়ে বেশকিছু গবেষণার উল্লেখ করে বলেন, ‘মৌলিক চাহিদার বাইরে কিছু মানবিক চাহিদা আছে। কেবল ভাত খাওয়ানো বা আশ্রয় দেওয়া মানবিক সহায়তা নয়। সহিংসতায় ভেঙে পড়া মানুষ, দেশত্যাগ করতে বাধ্য হওয়া মানুষের ভাত-কাপড়ের চেয়ে আরও বেশি কিছু লাগে।এরমধ্যে প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে খেয়াল রাখা জরুরি।’ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। তাদের মৌলিক অধিকার পূরণের পর এই মানবিক দিকগুলো নিয়ে ভাবলে সমস্যা কী, প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কোন ইনসিডেন্ট ঘটছে তা বুঝতে পারার সঙ্গে সঙ্গেই রেসপন্স করতে হবে। পুরো সার্কেলটা হলো, প্রিভেনশন-মিটিগেশন-প্রিপিয়ারনেস-রেসপন্স-রিকভারি। সাড়া দেওয়াটা সব শেষে বলা হলেও যখনই জানা যাচ্ছে ঘটনা ঘটছে, তখনই এর কাজ শুরু হয়।’

/ইউআই/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা