X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

অফিসে দেখতে যাননি, তাই ডাক্তারকে ওএসডি করলেন ডিসি!

জাকিয়া আহমেদ
২২ অক্টোবর ২০১৭, ২৩:৫০আপডেট : ২৩ অক্টোবর ২০১৭, ০০:২২

পাবনা জেনারেল হাসপাতাল (ছবি- সংগৃহীত) পাবনা জেলার জেলা প্রশাসক রেখা বাণী বালোকে তার কার্যালয়ে দেখতে যাননি বলে ২৫০ শয্যা পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মঞ্জুরা রহমানকে ওএসডি (অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি) করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ডা. মঞ্জুরা রহমানের ওএসডি আদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন পাবনা জেলার চিকিৎসকরা। তবে চিকিৎসক মঞ্জুরা রহমানকে ওএসডি করার সিদ্ধান্তে নিজের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছেন জেলা প্রশাসক।
ওএসডি হওয়া ডা. মাঞ্জুরা রহমান বাংলা ট্রিবিউনের কাছে সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, ‘‘গত বুধবার (১৮ অক্টোবর) বেলা ১টার দিকে সার্জারি কনসালট্যান্ট, নাক-কান-গলা কনসালট্যান্টসহ সহকর্মীদের সঙ্গে নতুন যেসব ইন্টার্ন চিকিৎসকরা আসবেন, তাদের নিয়ে আলোচনা করছিলাম। তখন হঠাৎ করেই আমার ল্যান্ডফোনে একটি কল আসে। আমি হ্যালো বলতেই একজন ভদ্রলোক বলেন, ‘স্যার অসুস্থ, ডাক্তার পাঠান।’ আমি তাকে বলি, ‘ভালোভাবে শুনতে পাচ্ছি না, কোন স্যার অসুস্থ এবং আপনি কে বলছেন?’ উনি বলেন, ‘আমি পিএস বলছি, স্যার অসুস্থ।’ তাকে আমি আবার বলি, ‘আপনার ঠিকানা বলেন। আর রোগী বেশি অসুস্থ হলে আমরা অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়ে দিচ্ছি। হাসপাতালে অক্সিজেনসহ সবকিছু আছে, আপনারা তাড়াতাড়ি নিয়ে আসেন।’ তখনই ফোনের অন্য প্রান্তে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি শুনতে পেলাম। এখন মনে হচ্ছে, সেই হাসির অর্থ ছিল এমন যে, হাসপাতালে স্যার যাবে!’
ডা. মাঞ্জুরা বলেন, ‘হাসি দিয়েই তিনি ফোনটা রেখে দেন। আমি রিসিভার নামিয়ে রাখার পর সহকর্মীরা জানতে চান, কার ফোন। তাদেরকেও আমি বলেছি, আমি তো কিছু বুঝলাম না কোন স্যার অসুস্থ। পরদিন একজন সিনিয়র ফোন করে জানান, আমাকে ওএসডি করে বদলি করা হয়েছে ঢাকা স্বাস্থ্য অধিদফতরে। কিন্তু কেন বদলি করা হলো, সেটা তখনও জানতে পারিনি আমি। বদলি তো হতেই পারে। কিন্তু হঠাৎ করে বদলি কেন করা হলো, তার কারণও আমি খুঁজে পাচ্ছিলাম না।’
ডা. মাঞ্জুরা রহমান আরও বলেন, ‘শুক্রবার স্থানীয় একজন সাংবাদিক আমাকে ফোন করে জানান, ডিসি স্যাহেবকে দেখতে যাইনি বলে আমাকে ওএসডি করা হয়েছে। সেই সাংবাদিকের ফোনের আগে আমি জানতামই না, কেন আমাকে ওএসডি করে বদলি করা হয়েছে। পরে পুরো ঘটনা জানতে পেরে মানসিকভাবে আমি অসুস্থ হয়ে যাই। আমার সহকর্মীরা এর প্রতিবাদে সংসদ সদস্যের কাছে গিয়েছিলেন, তাদের সঙ্গে আমিও যাই। আমি জানলাম না, আমার দোষটা কী। আসলেই ডিসি ফোন করেছিলেন কিনা, আমি তো সেটাও জানি না। বদলি নিয়ে আমার কোনও কথা নেই। কিন্তু এভাবে ঘটনাটা ঘটায় মানসিকভাবে অসুস্থ বোধ করছি।’
জেলা প্রশাসক রেখা বাণী বালো (বাঁয়ে) ও ডা. মাঞ্জুরা রহমান ওই ঘটনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক রেখা রানী বালো বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সেদিন তাকে (ডা. মঞ্জুরা রহমান) আমার পিএস ফোন করেছিলেন। কিন্তু তিনি শোনেননি।’
তবে চিকিৎসক মঞ্জুরা রহমানের ওএসডির সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা নেই উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘ওনার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ। তিনি মাদকাসক্ত, হাসপাতালে ঠিকমতো আসতেন না, রোগীদের হেনস্তা করতেন। এসব অভিযোগের সঙ্গে আমার বিষয়টি কো-ইনসাইট করেছে।’
এদিকে, ডা. মঞ্জুরা রহমানের ওএসডি প্রত্যাহার চেয়ে পাবনা জেলার চিকিৎসকরা তিন দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পাবনা বিএমএ’র একজন সদস্য ও জেনারেল হাসপাতালের এক চিকিৎসক বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, তিন দিনের মধ্যে ওএসডি প্রত্যাহার করা না হলে বৃহত্তর কর্মসূচিতে যাবে পাবনা বিএমএ (বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন)।
ডা. মঞ্জুরা রহমানের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের তোলা অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওই চিকিৎসক বলেন, ‘জেলা প্রশাসক গত প্রায় দুই বছর ধরে এখানে আছেন, তিনি জেলার সর্বময় কর্মকর্তা। তিনি কেন এসব অভিযোগ আগে আনেননি? তিনি তো ইচ্ছা করলে এসব কথা আগেও বলতে পারতেন। প্রতিহিংসা থেকেই তিনি ওএসডি করার মতো ঘটনা ঘটিয়েছেন।’
পাবনা বিএমএ’র শীর্ষস্থানীয় আরেক নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ম্যাডামের (ডা. মঞ্জুরা) কাছে যখন ফোন আসে, তখন সেখানে আমি ছিলাম। ল্যান্ডফোনের সমস্যার কারণে ম্যাডাম কথা শুনতে পারছিলেন না, সেটাও বুঝতে পারছিলাম। ম্যাডামকে আমরাও জিজ্ঞাসা করেছি, কার সঙ্গে কথা বললেন? উনি বললেন, বুঝতে পারিনি। তবে আমরা সামনে থেকে দেখেছি, ম্যাডাম কী বলেছেন। অপর প্রান্ত থেকে পরিচয় দেওয়া হয়নি, সেটাও দেখলাম।’
জেলা প্রশাসক অভিযোগ করেছেন, তিনি রোগীদের হেনস্তা করেন, ঠিকমতো চিকিৎসা দেন না। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএমএ’র এই নেতা বলেন, ‘ম্যাডাম তো সরাসরি রোগী দেখার সঙ্গে সম্পৃক্ত না। হাসপাতালের সহকারী পরিচালক হিসেবে প্রশাসনিক কাজ করে থাকেন তিনি। ফলে রোগীদের চিকিৎসা না দেওয়া বা হেনস্তা করার অভিযোগ তো ঠিক নয়। জেলা প্রশাসক আগে থেকে এসব অভিযোগ জানলে তো আগেই অভিযোগ তুলতে পারতেন। এখন কেন বলছেন?’

/টিআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ ডিসি ও এসপিদের
উপজেলা নির্বাচনমন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ ডিসি ও এসপিদের
জিম্মিদের মুক্তির জন্য হামাসকে ১৮ দেশের আহ্বান
জিম্মিদের মুক্তির জন্য হামাসকে ১৮ দেশের আহ্বান
অডিও ফাঁস, নারীর কাছে ডিবি পুলিশ সদস্যের ‘হেরোইন বিক্রি’
অডিও ফাঁস, নারীর কাছে ডিবি পুলিশ সদস্যের ‘হেরোইন বিক্রি’
উপজেলা নির্বাচনে নেই বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল
উপজেলা নির্বাচনে নেই বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা