X
রবিবার, ১৯ মে ২০২৪
৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে চাপ প্রয়োগ করুন: প্রধানমন্ত্রী

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০৫ নভেম্বর ২০১৭, ১২:৩৭আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০১৭, ১৩:৪২

সিপিসি সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী, ছবি: ফোকাস বাংলা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘মিয়ানমারকে তার নাগরিকদের ওপর নির্যাতন বন্ধ করতে। বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে চাপ প্রয়োগ করুন।’

রবিবার সকালে রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি কনফারেন্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিশ্ব নেতাদের উদ্দেশে তিনি এ কথা বলেন। প্রায় এক মাস পরে গণভবন ও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের বাইরে কোনও অনুষ্ঠানে যোগ দিলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর অমানবিক নির্যাতন এবং তাদের দেশ ছাড়তে বাধ্য করা শুধু এ অঞ্চলে নয়,এর বাইরেও অস্থিরতা তৈরি করছে। মিয়ানমার সরকারের এমন আচরণের জন্য সেখান থেকে ৬ লাখ ২২ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ১৯৭৮ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে আসা আরও প্রায় ৫ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে।’

তিনি বলেন, মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সাময়িকভাবে আমরা এই বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা নাগরিককে আশ্রয় দিয়েছি। আপনাদের অনুরোধ জানাবো রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করুন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশকে দারিদ্র্য,  ক্ষুধামুক্ত, অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। জাতীয় সংসদ,নানা স্তরের স্থানীয় সরকারসহ আমরা গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করেছি। ’

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার অতন্দ্র প্রহরী স্বাধীন এবং শক্তিশালী গণমাধ্যম। বিগত বছরগুলোয় বাংলাদেশের গণমাধ্যম ব্যাপকভাবে বিকশিত হয়েছে। নিশ্চিত করা হয়েছে তাদের স্বাধীনতা। মানুষের তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে।’

ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে উপজেলা,পৌরসভা, সিটি করপোরেশন ও জেলা পরিষদে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা দায়িত্ব পালন করছেন। নারীর ক্ষমতায়ন ও লিঙ্গ বৈষম্য দূর করতে বাংলাদেশের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার ভিত শক্তিশালী করার মাধ্যমে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা। সে লক্ষ্যে আমরা রূপকল্প-২০২১ প্রণয়ন করি। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার ভিত্তিতে আমরা আমাদের কর্মসূচিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়-এই নীতির ভিত্তিতে আমাদের পররাষ্ট্র নীতি পরিচালিত হয়। বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশসমূহের সঙ্গে আমরা সব সময়ই সুসম্পর্ক জোরদার করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। এর ফলে আমরা ভারতের সঙ্গে গঙ্গা নদীর পানি চুক্তি এবং স্থল সীমানা চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে দীর্ঘদিনের বিরোধের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি করতে পেরেছি। একইভাবে মিয়ানমার এবং ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ক্ষুধা-দারিদ্র্য নিরসনের সংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদ মোকাবিলার নতুন সংগ্রাম। জঙ্গিবাদ আজ আর কোনও নির্দিষ্ট দেশের সমস্যা নয়, এটি বৈশ্বিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে। আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে জঙ্গিবাদ সমস্যার মোকাবিলা করতে হবে।

তিনি বলেন, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবের ফলে আমরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। এ বছর অতিবৃষ্টিসহ কয়েকবার বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ফসলের। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলার জন্য যেসব সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর দ্রুত বাস্তবায়ন প্রত্যাশা করছি।

তিনি বলেন, আসুন এই পৃথিবীকে বিশ্ববাসীর জন্য সুখময়, শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ বাসভূমিতে পরিণত করি। বাংলাদেশে আপনাদের অবস্থান আনন্দময় এবং এ সম্মেলনের ফলপ্রসূ হোক।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ধরনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও চর্চার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমাদের প্রথম ও প্রধান নৈতিক দায়িত্ব হচ্ছে গণতন্ত্রে এবং সংসদীয় গণতান্ত্রিক রীতি-নীতি ও প্রতিষ্ঠানকে আরও শক্তিশালী করা। যাতে করে এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতি জনগণের পূর্ণ আস্থা তৈরি করা যায়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিচক্ষণ ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ১৯৭৩ সালে সিপিএর সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয় বাংলাদেশ। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী সিপিএর নির্বাহী কমিটির চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন। বিশ্বব্যাপী কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর সংসদ সদস্যদের দেওয়া এই স্বীকৃতি বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক চর্চা ও মূল্যবোধের স্বীকৃতির একটি প্রামাণিক দলিল।

সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু তার ৭ মার্চের ভাষণে বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেন। ডাক দেন অসহযোগ আন্দোলনের। ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী অপারেশন সার্চ লাইটের মাধ্যমে গণহত্যা শুরু করলে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দেন। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা।’

/পিএইচসি/এসটি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
রিজার্ভ চুরির ঘটনায় গভর্নরের নীরবতা রহস্যজনক: ১২ দলীয় জোট
রিজার্ভ চুরির ঘটনায় গভর্নরের নীরবতা রহস্যজনক: ১২ দলীয় জোট
গাজায় ইসরায়েলি যুদ্ধাপরাধের তদন্ত চায় জর্ডান
গাজায় ইসরায়েলি যুদ্ধাপরাধের তদন্ত চায় জর্ডান
কোটি ভিউতে ফারহানের সেঞ্চুরি!
কোটি ভিউতে ফারহানের সেঞ্চুরি!
ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
সর্বাধিক পঠিত
‘নীরব’ থাকবেন মামুনুল, শাপলা চত্বরের ঘটনা বিশ্লেষণের সিদ্ধান্ত
‘নীরব’ থাকবেন মামুনুল, শাপলা চত্বরের ঘটনা বিশ্লেষণের সিদ্ধান্ত
ভারতীয় পেঁয়াজে রফতানি মূল্য নির্ধারণ, বিপাকে আমদানিকারকরা
ভারতীয় পেঁয়াজে রফতানি মূল্য নির্ধারণ, বিপাকে আমদানিকারকরা
হিমায়িত মাংস আমদানিতে নীতিমালা হচ্ছে
হিমায়িত মাংস আমদানিতে নীতিমালা হচ্ছে
এনবিআর চেয়ারম্যানকে আদালত অবমাননার নোটিশ
এনবিআর চেয়ারম্যানকে আদালত অবমাননার নোটিশ
মোবাইল আনতে ডিবি কার্যালয়ে মামুনুল হক
মোবাইল আনতে ডিবি কার্যালয়ে মামুনুল হক