X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

৭ মার্চের ভাষণ শোষিত-নির্যাতিত মানুষের অধিকার আদায়ের দিগ্‌দর্শন: প্রধানমন্ত্রী

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১৫ নভেম্বর ২০১৭, ০১:০৫আপডেট : ১৫ নভেম্বর ২০১৭, ০৪:০০

৭ মার্চের ভাষণকে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি দেওয়ার পর সংসদে আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণকে শোষিত-নির্যাতিত মানুষের অধিকার আদায়ের দিগ্‌দর্শন বলে অভিহিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্ব প্রামাণ্য ঐহিত্য হিসেবে ইউনেস্কোর ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে’ ৭ মার্চের ভাষণ যুক্ত হওয়ায় জাতীয় সংসদে আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় ইউনেস্কোসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। আলোচনায় তিনি বলেন, ‘৭ মার্চের ভাষণে বাংলাদেশের মানুষ উজ্জীবিত হয়েছিল। আজকে এই ভাষণের স্বীকৃতি প্রমাণ করে— এটা কেবল একটি ভাষণ নয়, শোষিত-নির্যাতিত মানুষের অধিকার আদায়ের দিগ্‌দর্শন। এই ভাষণ নির্যাতিত মানুষের শক্তি জোগায়, এই ভাষণ শোষিত মানুষের অবলম্বন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাঙালিরা নিপীড়িত ছিল, তাদের মনে বেদনা ছিল। তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে বাঙালি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সেই আন্দোলনে যে পাকিস্তানিরা বাধা দিচ্ছিল, তা বুঝিয়েছিলেন।’
বঙ্গবন্ধুর ভাষণের গুরুত্ব তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ১৯৪৮ সালে যে সংগ্রাম শুরু করেছিলেন, সেই সংগ্রামের পথ ধরে ৭ মার্চের ভাষণ ছিল চূড়ান্ত মুহূর্ত। বাংলার মানুষ কী চায়, তা ভাষণে তুলে এনেছিলেন তিনি। তিনি বাঙালি জাতির জন্য কী করতে চান, সেটাও ওই ভাষণে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। ভাষণে তিনি অসহযোগ আন্দোলনে কী কী করতে হবে— তার নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। সেইসঙ্গে গরিব মানুষের যেন কষ্ট না হয়, সেজন্য কোন কোন ক্ষেত্রগুলো মুক্ত থাকবে, তা বলেছেন। তার অবর্তমানেও যেন সেই নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়িত হয়, সেই দিকনির্দেশনাগুলোও দিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। তার সেই নির্দেশনা বাংলাদেশের মানুষ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে। মুক্তিকামী মানুষ যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করেছে। এই ভাষণের প্রতিটি লাইন যতবার পড়া যায়, ততবারই মনে হয়, এটা আবার নতুন করে পড়ছি। প্রতিটি বাক্যই যেন একটি করে কোটেশন। প্রতিটি বাক্যই এ দেশের মুক্তিকামী মানুষের জন্য প্রযোজ্য। এখনও কিন্তু মুক্তির সেই সংগ্রাম অব্যাহত রয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। তিনি অর্থনৈতিক মুক্তির পথে পা বাড়িয়েছিলেন, কিন্তু তা সম্পন্ন করতে পারেননি। আমাদের দায়িত্ব সেটাই পালন করা।’
বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ৭ মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ ছিল উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর এই ভাষণ বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হয়ে গেল। যেখানে পাকিস্তানি সামরিক শাসক এই ভাষণ বন্ধ করতে পারেনি, সেখানে ৭৫-এর পর বাংলাদেশে সেই ভাষণ নিষিদ্ধ করে দেওয়া হলো। তবে মুজিব সৈনিকদের কেউ থামিয়ে রাখতে পারেনি। পৃথিবীতে মনে হয় কোন ভাষণ নেই যে প্রতিটি জেলা-উপজেলা-ওয়ার্ডে বারবার বেজেছে। কত হাজারবার যে এটা বেজেছে, তার হিসাব করাও কঠিন। মানুষ ৪৬ বছরে ধরে শুনছে এই ভাষণ। কিন্তু এটা এখনও পুরনো হয়নি। কিন্তু দুর্ভাগ্য, ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত একটি প্রজন্ম এই অমূল্য সম্পদ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। মনে হয়েছে, ওই সময়ে পাকিস্তানি প্রেতাত্মা দেশ চালিয়েছে। যে কারণে জাতির পিতার নাম, তার ভাষণ— সবই প্রায় বন্ধ ছিল। সব নষ্ট করে ফেলা হয়। কিন্তু ইতিহাস সত্যকে তুলে ধরবে— এটা হাজার চেষ্টা করলেও বন্ধ করা যায় না। সেটাই এই স্বীকৃতির মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে। ১৯৭৫-পর এই তথ্যগুলো প্রায় ডেস্ট্রয় (ধ্বংস) করা হয়। তবে রেডিওতে যারা চাকরি করেছিলেন, তারা রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সংরক্ষণ করেছিল বলেই আমরা এটা আবার পেয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রতিদিন প্রচার করা হতো এই ভাষণ। এটা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা জোগাতো। আমরা যারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কাছে বন্দি ছিলাম। এই ভাষণটা শোনার জন্য আমরা অপেক্ষা করে থাকতাম। চাতক পাখির মতো বসে থাকতাম, কখন এটা শুনবো। এটা ছিল আমাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন।’
ভাষণের পটভূমি তুলে ধরতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, ‘যেদিন স্বীকৃতির খবরটি এলো, মায়ের কথা বেশি বেশি মনে পড়ছিল। ৭ মার্চ ভাষণ হবে, বাবা সেখানে একটা ভাষণ দেবেন। কী বলবেন, না বলবেন— তা নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলছেন। কেউ বলছেন এটা বলতে হবে, কেউ বলছেন ওটা বলতে হবে। যে যার মতো বলে যাচ্ছেন। ঠিক আড়াইটার সময় মিটিংয়ে যাওয়ার কথা। মিটিংয়ে যাওয়ার আগে বাবাকে ডেকে নিয়ে মা বললেন, কিছুক্ষণ রেস্ট নাও। আমি ছিলাম মাথার কাছে বসা। বসে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলাম। মা মোড়া নিয়ে কাছে বসলো। বাবাকে বললেন, কতক্ষণ চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকো। তোমার সামনে অনেক দায়িত্ব।’
সেই দিনের স্মৃতি মনে করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বাবাকে মা বললেন, অনেকে অনেক কিছু বলবে। এ দেশের মানুষের জন্য তুমি সারাজীবন সংগ্রাম করেছ। কত মানুষ রক্ত দিয়েছে। তোমার সঙ্গে বহু মানুষও অত্যাচার সহ্য করেছে। এ দেশের মানুষের কীসে ভালো, কীসে মন্দ— তা তোমার থেকে বেশি কেউ জানে না। সামনে বাঁশের লাঠি, পেছনে বন্দুকের নল। এতগুলো মানুষের ভাগ্য তোমার ওপর। কাজেই তোমার মনে যে কথাটা আসবে, তুমি সেই কথাই বলবে। মা দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছিলেন, তোমার কারও কথা শোনার দরকার নেই। তোমার মনে যে কথা আসবে, তুমি ঠিক সেই কথাই বলবে। এটা একটা উপস্থিত বক্তব্য— নোট হাতে নেই, পয়েন্ট হাতে নেই, কিছু নেই। তিনি উপস্থিতভাবে এই ভাষণটা দিয়ে গেছেন।’
বর্তমান সরকার এই ভাষণ প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই ভাষণের আবেদনে আমরা ব্যাপড় সাড়া পেয়েছি।’
২০১০ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এটি ইউনেস্কোর ঐহিত্য হিসেবে অন্তর্ভুক্তির জন্য উদ্যোগ নেয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এর সঙ্গে সম্পৃক্ত পররাষ্ট্র ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, দূতাবাসসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ধন্যবাদ জানান। ইউনেস্কোর মহাসচিব ইরিনা বোকাবোকেও ধন্যবাদ জানান তিনি।
আরও পড়ুন-
ইউনেস্কোর স্বীকৃতিতে বিশ্বের মানুষ ৭ মার্চের ভাষণ হৃদয়ে ধারণ করছে: কাজী নাবিল

/ইএইচএস/টিআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পুরস্কার পেলেন কুবির চার শিক্ষার্থী
যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পুরস্কার পেলেন কুবির চার শিক্ষার্থী
গরমে বেড়েছে অসুখ, ধারণক্ষমতার তিন গুণ বেশি রোগী হাসপাতালে
ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগরমে বেড়েছে অসুখ, ধারণক্ষমতার তিন গুণ বেশি রোগী হাসপাতালে
টিভিতে আজকের খেলা (১৯ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (১৯ এপ্রিল, ২০২৪)
মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে আসা ৫ টন কফি পাউডার জব্দ
মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে আসা ৫ টন কফি পাউডার জব্দ
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন