X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই বিদেশে গৃহকর্মী পাঠাতে হবে

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১৮ নভেম্বর ২০১৭, ২০:০০আপডেট : ১৮ নভেম্বর ২০১৭, ২০:২১

 

কেমন আছেন অভিবাসী নারী শ্রমিকরা শীর্ষক গণশুনানি প্রবাসে গৃহকর্মীদের ওপর নির্যাতন হচ্ছে বলে তাদের বিদেশে পাঠানো যাবে না, এমন সাজেশন দেওয়া যাবে না। নারীরা যেন নিরাপদে বিদেশে গিয়ে কাজ করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। অনেক প্রটেকশন দিয়ে পাঠাতে হবে।  শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে আয়োজিত ওয়ান বিলিয়ন রাইজিং-এর আয়োজনে ‘কেমন আছেন অভিবাসী নারী শ্রমিকেরা’ শীর্ষক গণশুনানিতে বিচারক প্যানেলের সদস্যরা এসব কথা বলেন।

গণশুনানির বিচারক প্যানেলে ছিলেন বিচারপতি নাজমুন আরা, বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম, শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরামের আহ্বায়ক মানবাধিকারকর্মী হামিদা হোসেন।

বিশেষজ্ঞ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ওয়ান বিলিয়ন রাইজিং-এর সমন্বয়কারী খুশি কবীর, বিচারপতি নাজমুন আরা, অ্যাডভোকেট সালমা আলী, মানবাধিকারকর্মী আসিফ মুনীর, ট্রেড ইউনিয়ন নেতা আবুল হোসেন, ব্র্যাকের অভিবাসী প্রকল্পের প্রধান শরিফুল হাসান প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন উইমেন চ্যাপ্টার এর সম্পাদক সুপ্রীতি ধর।

গণশুনানির ওয়ান বিলিয়ন রাইজিং-এর সমন্বয়কারী খুশি কবীর সংগঠনটির বিষয়ে জানান। তিনি বলেন, ‘একশ কোটি নারী নির্যাতনের শিকার। তারা যদি জেগে ওঠেন, পুরুষ সহযাত্রীরা যদি জেগে ওঠেন, তাহলে পরিবর্তন সম্ভব। বাংলাদেশে পত্রপত্রিকায় নারী পুরুষের সমতার সূচকে এগিয়ে থাকার খবর পাই। নারী শ্রমিকদের নিপীড়নের খবরও পাই। অভিবাসী নারী শ্রমিকরা কেমন আছেন, তা তাদের মুখ থেকেই শুনতে চাই।’

এরপর সৌদি আরব ও জর্ডান থেকে ফিরে আসা আট জন নারী শ্রমিক গণশুনানিতে তাদের ওপর শারীরিক ও যৌননির্যাতনের কথা তুলে ধরেন। কিভাবে গেছেন, কিভাবে ফিরে এসেছেন, সে কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা।  

শুনানিতে  সৌদি আরব ফেরত শ্রমিক মঞ্জু। তিনি বলেন, ‘চার মাস আগে গিয়েছিলাম রিয়াদে। খাইতে পারি না। তাদের ভাষা বুঝি না। কিন্তু ফিরে আসতে হলে ৪ লাখ টাকা দিতে হবে। আমি সেখানে দুই মাস ছিলাম। কষ্ট সহ্য করতে না পেরে একজনের সাহায্য নিয়ে ফোনের সুযোগ পাই। আমার ছেলেকে দেশে কল দিলাম। তাকে বললাম, কী করে থাকব? আমাকে মারে। এরপর বাড়ি থেকে ৮০ হাজার টাকা সুদের ওপর লোন নিয়ে পাঠায়। আমি ফিরে আসিনি, আমার লাশ এনেছে।’

আরেক শ্রমিক জাহানারা। তিনি বলেন, ‘আমি সৌদি গেছি। কাজের জন্য যে বাসায় দিয়েছে, সেখানে খাওয়ার কষ্ট। ছিলাম ১০ মাস। তিন মাসের বেতন দিয়েছে। রাগারাগি করলে পুলিশ জেলে নিয়ে যায়। জেলে ছিলাম একমাস। পরে পুলিশ আমার ওপর অত্যাচারের কথা জানতে পারে। ৫০ হাজার টাকা পাঠাইছে দেশ থেকে। এরপরই আমি দেশে ফিরেছি।’

জর্ডান ফেরত আরেক নারী বলেন, ‘জর্ডান গেছিলাম। ৭ মাসের বেতন পাইছি। ১১ মাসের পাই নাই। বাংলাদেশে ফিরতে চাইলে মারতো। শরীর খারাপ হয়ে গেছে। খাবার দিতো না। বাংলাদেশে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিল। আমি কান্নাকাটি করি। স্বামীকে কল করি। আমার জীবন ভিক্ষা চাই। বলে ২ লাখ টাকা লাগবে। আমার বোনেরা ২ লাখ ৪ হাজার টাকা দেয়। তখন ফিরে আসি। এরপর জীবন চালাতে নারায়ণগঞ্জ শহরে হাত পেতেছি। আমার শরীর খারাপ। কিস্তিতে টাকা নিয়ে বেঁচে আছি। আমার দায়িত্ব যেন সরকার নেয়।’

ভুক্তভোগীদের বক্তব্য শুনানির পর দিক-নির্দেশনায় বিচারক প্যানেলের সদস্যরা বলেন, নারী শ্রমিক পাঠানোর আগে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। যে দেশে শ্রমিক যাবেন, সে দেশের  ভাষা শেখাতে হবে। যারা যাবেন, তাদের সচেতন করতে হবে। দুর্ভোগের বিষয় তাদের জানা থাকতে হবে। বেসরকারি রিক্রুটমেন্ট এজেন্সিগুলো যেন কথার বরখেলাপ না করে, সেদিকটা মনিটরিং করতে হবে। দূতাবাসগুলোর দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। দূতাবাসগুলোকে  জনবল দিতে হবে, যেন তারা অভিবাসী শ্রমিকদের দেখভাল করতে পারে। স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য দেশে-বিদেশে যে নীতিমালা রয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে।

বিচারক প্যানেলের সদস্য বিচারপতি নাজমুন আরা  বলেন, ‘নারীদের উন্নয়ন জরুরি। দেশে কাজের সুযোগ নেই, পর্যাপ্ত আয় না থাকায় বিদেশে যাচ্ছে। নির্যাতন হচ্ছে বলে তাদের বিদেশে পাঠানো যাবে না, এমন সাজেশন দেওয়া যাবে না। নারীরা যেন নিরাপদে গিয়ে কাজ করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের প্রটেকশন দিতে হবে। বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে নিবন্ধন করে এটি সরকারকে করতে হবে। এটা করা যেতে পারে।’

অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, ‘যারা যান, তারা কিছু না জেনেই যান। সব ধরনের নির্যাতনের শিকার হন নারীরা। সব এক্সেস নিশ্চিত না করা পর্যন্ত পাঠানো যাবে না। এসব দেশে না যাওয়ার বিষয়ে নারীদের সচেতন করতে হবে।’

ব্র্যাকের অভিবাসী প্রকল্পের প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, ১৯৯১ থেকে এ পর্যন্ত ৬ লাখ নারী গেছেন। ২ লাখ নারী গেছেন সৌদি আরবে। যারা ঢাকাই চেনে না, তাদের পাঠিয়ে দিচ্ছে বিদেশে। আমি পাঠানোর বিপক্ষে না। কিন্তু গৃহকর্মী হিসেবে না। ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হন তারা। একেকটা নির্যাতনের কী ধরন, ভাবতেও পারবেন না। সচিব-আমলা, কেউই তাদের পরিচিত কাউকে পাঠাতে চান না। আর আমরা আমাদের নারীদের সম্মান দিতে জানি না।’

 

 

/ইউআই/এমএনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
রাঙামাটিতে হলো সংসদীয় কমিটির বৈঠক
রাঙামাটিতে হলো সংসদীয় কমিটির বৈঠক
ডুবে যাওয়া জাহাজের ১১ নাবিক উদ্ধার, সবার আগে লাফ দেওয়া মাস্টার নিখোঁজ
ডুবে যাওয়া জাহাজের ১১ নাবিক উদ্ধার, সবার আগে লাফ দেওয়া মাস্টার নিখোঁজ
জাকার্তায় সোনা জিতে বাংলাদেশ পুলিশের ভানরুমের চমক
জাকার্তায় সোনা জিতে বাংলাদেশ পুলিশের ভানরুমের চমক
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা