X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আরও দুই পার্বত্য স্থলবন্দর হবে কবে?

শফিকুল ইসলাম
২২ নভেম্বর ২০১৭, ১০:১৮আপডেট : ২২ নভেম্বর ২০১৭, ১৬:২০

পার্বত্য এলাকা, ছবি: সংগৃহীত

ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে দেশের তিন পার্বত্য জেলায় তিনটি স্থলবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এগুলো হলো—তেগামুখ, ঘুমধুম ও রামগড় স্থলবন্দর। এরমধ্যে রামগড় স্থলবন্দর নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ কিছুটা এগুলেও বাকি দু’টি নির্মাণে সংশয় দেখা দিয়েছে। কবে নাগাদ এ সংশয় কাটবে, তা এখনও পরিষ্কার হওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই তিনটি স্থলবন্দর পুরোপুরি চালু করা গেলে প্রসাধন সামগ্রী, সিরামিক ও মেলামাইন পণ্য, ইট, বালু, সিমেন্ট, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, শুটকি মাছ, তামাকজাত পণ্য, মানুষের মাথার চুল, প্লাস্টিকের পানির ট্যাংক, আলু, অ্যালুমিনিয়াম সামগ্রী, তৈরি পোশাক, ডিম, টিউবওয়েল, প্লাস্টিক সামগ্রী, পুরনো কাপড়, চিপস্ ইত্যাদি ভারত ও মিয়ানমারে রফতানি করা যাবে। এদিকে ভারত ও মিয়ানমারের অংশ দিয়ে শাড়ি, ওষুধ, গরম মসলা, কাঠ, চুনাপাথর, বাঁশ, মাছ, আচার, তেঁতুল, হলুদ, স্যান্ডেল, মাটির সানকি, গাছের ছাল ও সুপারি রফতানি করা সম্ভব হবে। 

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ভারত ও  মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে রাঙামাটি জেলার বরকল উপজেলার তেগামুখে একটি স্থলবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা করছে সরকার যা ভারতের মিজোরাম প্রদেশের সঙ্গে যুক্ত হবে। এছাড়াও বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুমে আরেকটি স্থলবন্দর করার চিন্তাভাবনা করছে যেটি মিয়ানমারের তমব্রু সীমান্তের সঙ্গে যুক্ত হবে। আর খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় উপজেলা সীমান্তে অপর স্থলবন্দরটির কাজ কিছুটা এগিয়েছে। এটি যুক্ত করবে ভারতের দক্ষিণ ত্রিপুরার সাব্রুম সীমান্তবর্তী। এর মধ্যে সরকার ২০১৩ সালের ৩০ জুন তেগামুখ ও ২০১০ সালের ৭ নভেম্বর রামগড় স্থলবন্দরকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিলেও বান্দরবানের ঘুমধুম স্থলবন্দরকে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে স্থলবন্দর হিসেবে ঘোষণা দেয়নি। 

সূত্র জানায়, রামগড় স্থলবন্দর নির্মাণ সংক্রান্ত প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পেয়েছে। বর্তমানে রামগড়ের সঙ্গে খাগড়াছড়ি জেলা সদর এবং বন্দরনগরী চট্টগ্রাম ও রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো। তবে রামগড় থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবস্থিত বারোইয়ারহাট পর্যন্ত মধ্যবর্তী স্থানে কয়েকটি সরু ও ঝুঁকিপূর্ণ সেতু রয়েছে। এছাড়া রামগড় থেকে সাব্রুমের মধ্যবর্তী স্থানে সীমানা লাইনে খরস্রোতা ফেনী নদী রয়েছে। এই নদীর ওপর রামগড় থেকে সাব্রুম যাওয়ার জন্য সংযোগকারী ব্রিজ ও অ্যাপ্রোচ সড়ক নেই। এছাড়া বর্তমানে রামগড় থেকে সাব্রুম যাওয়ার জন্য কোনও বিকল্প স্থল যোগাযোগ নেই। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এই স্থলবন্দরটি চালু করার কথা ছিল।  

অন্যদিকে, তেগামুখ ও ঘুমধুম স্থলবন্দর নির্মাণে জমি নির্বাচন করা হলেও আইন জটিলতায় অধিগ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। রাঙামাটির বরকলের তেগামুখ স্থলবন্দরের জন্য সম্ভাব্য স্থানটি পাহাড়ি ও দুর্গম। ভারতীয় অংশের সঙ্গে তেগামুখ স্থলবন্দরের সঙ্গে সড়কপথে কোনও যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই। যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে নৌপথ। রাঙামাটি জেলার বরকল উপজেলা থেকে তেগামুখের দূরত্ব ১০০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে রাঙামাটি জেলাসদর হয়ে বরকল উপজেলার তেগামুখ পর্যন্ত যোগাযোগের জন্য ১২৬ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করা প্রয়োজন হবে। এর মধ্যবর্তীস্থানে একটি নদীর ওপর ব্রিজও নির্মাণ করতে হবে। এই বন্দরের নির্ধারিত স্থানের ৫০ কিলোমিটার সীমানার মধ্যে কোনও থানা বা পুলিশ ফাঁড়ি নেই। 

এদিকে বান্দরবানের ঘুমধুম এলাকা থেকে মিয়ানমারের তুমব্রুর দূরত্ব সাড়ে তিন কিলোমিটার। আবার ঘুমধুম থেকে নাইক্ষ্যংছড়ির দূরত্ব ৩২ কিলোমিটার। বর্ডার লাইনে নাফ নদীর একটি শাখা রয়েছে। যার স্থানীয় নাম দেবীন্না খাল। খালটির প্রস্থ ১৫ থেকে ২০ ফুট হলেও গভীরতা ৮ থেকে ১৫ ফুট পর্যন্ত। বর্তমানে ঘুমধুম থেকে মিয়ানমারের সঙ্গে একটি পাকা রাস্তা রয়েছে। রাস্তাটি দেবীন্না খালের স্থাপিত লাল ব্রিজের মাধ্যমে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে সংযোগ করা হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে রাস্তাটি চওড়া করার কাজ চলছে। এ জন্য ১২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।   

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কৈ শা হ্লা মারমা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকতাসহ নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান স্থলবন্দর এলাকা পরিদর্শন করেছেন। জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত সামান্য কিছু জটিলতা রয়েছে, তা অচিরেই কেটে যাবে। তবে এই বন্দরের জন্য কাস্টমসের অফিস কক্সবাজারের বালুখালীতে করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। ওই জায়গায় সহকারী কমিশনার, কাস্টমস অফিস ছিল, এখানেই ছিল গবাদি পশুর করিডোর, যা বর্তমানে অকার্যকর অবস্থায় রয়েছে।’ সরকারের এমন সিদ্ধান্তে আমাদের আপত্তি রয়েছে বলে জানান চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘অবশ্যই এই স্থলবন্দরের জন্য কাস্টমস অফিস বান্দরবান জেলার ভেতরে হতে হবে।’ এটি এলাকাবাসীর দাবি বলেও জানান কৈ শা হ্লা।   

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এই তিনটি স্থল বন্দরের মধ্যে রামগড় স্থলবন্দর নির্মাণ প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন দিলেও বাকি দু’টি স্থলবন্দর নির্মাণ কার্যক্রম শুরু করেনি কর্তৃপক্ষ। এ প্রকল্পের জন্য বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন করছে বলে বংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন বাংলাদেশ স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান তপন কুমার চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘কিছু দিনের মধ্যেই এই বন্দরের অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শুরু হবে। এ জন্য বিশ্বব্যাংক ১১৯ কোটি ৭২ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, ‘স্থলবন্দর তিনটি নির্মিত হলে তিন পার্বত্য জেলার অর্থনীতি বদলে যাবে। মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। এ লক্ষ্য নিয়েই সরকার তিন পার্বত্য জেলায় তিনটি স্থলবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। একটির কাজ চলছে। বাকি দু’টি স্থলবন্দর নির্মাণে যেখানে যেটুকু সমস্যা রয়েছে, তা নিরসন করে প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। আমরা সে লক্ষ্যে কাজ করছি। এতে সরকারের রাজস্ব বাড়বে বলেও জানান নৌমন্ত্রী শাজাহান খান।

 

/এমএনএইচ/আপ-এসটি
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
‘শো মাস্ট গো অন’
চিকিৎসা সুরক্ষা আইন জরুরি‘শো মাস্ট গো অন’
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
বেয়ারস্টো-শশাঙ্কে হেসেখেলে ২৬২ রান করে জিতলো পাঞ্জাব
বেয়ারস্টো-শশাঙ্কে হেসেখেলে ২৬২ রান করে জিতলো পাঞ্জাব
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!