বাংলাদেশে বর্তমানে শিক্ষাকে পরীক্ষা দিয়েই মূল্যায়ন করা হয় বলে মন্তব্য করছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদরা। তারা বলেন, ‘এখন শিশুদের ওপর পরীক্ষার বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সবার প্রশ্ন, ভালো শিক্ষা কোথায় দেওয়া হয়? তারা মনে করেন, পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করলেই সে ভালো ছাত্র হয়ে যায়। আর এ জন্যই সবাই নকল ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের দিকে ছুটছেন।’
বুধবার দুপুরে ( ২২ নভেম্বর) জাতীয় শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত আলোচনা সভায় তারা এসব কথা বলেন। 'শিশুবান্ধব সমাজের সন্ধানে' শীর্ষক ওই আলোচনা সভার আয়োজন করে শিশুশিক্ষার সংগঠন সহজপাঠ।
আলোচনা সভায় এমিরেটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেন, ‘এখন শিশুদের ওপর পরীক্ষার বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এসব পিইসি, জেএসসি, জেডিসি পরীক্ষার কোনও প্রয়োজনীয়তা নেই।’
শিক্ষার সঙ্গে আনন্দ, নাচ, গান থাকতে হবে উল্লেখ তিনি বলেন, ‘যখন বলা হলো শিক্ষার সঙ্গে নাচ থাকবে, তখন একটি মহল থেকে বলা হলো সরকার দেশের মেয়েদের বাইজি বানানোর চেষ্টা করছে। তখন সরকার তাদের খুশি করতে নাচ শব্দের বিকল্প খুজঁতে শুরু করলো। তখন আমি বললাম নাচ শব্দের বিকল্প নেই। আর প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে নাচ থাকাই উচিত।’
ড. আনিসুজ্জামান বলেন, ‘দেশের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার বড় পরিবর্তন প্রয়োজন, এর কোনও বিকল্প নেই। কিন্তু এটা কিভাবে করা যায় তা নিয়ে সবাইকে ভাবতে হবে।’
সভায় অধ্যাপক ড. মনজুর আহমেদ বলেন, ‘এখন আমাদের শিশুদের ওপর যেভাবে পরীক্ষা চাপিয়ে দেওয়া হয় পৃথিবীর আর কোনও দেশে তা করা হয় বলে মনে হয় না। আর পরীক্ষায় ভালো রেজাল্টের জন্য সবাই প্রশ্নপত্র ফাঁসের পেছনে ছুটছেন। এ কাজে শিক্ষক ও অভিভাবকরা জড়িত। ফলে শুরুতেই একটি শিশুর নৈতিকতা নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে।’
ঢাকা বিশ্বদিব্যালয়ের শিক্ষক শাহিন ইসলাম বলেন, ‘আমরা শিশুদের নিজেদের মতো করে শিক্ষা দিতে চাই। কিন্তু তারা কিভাবে শিক্ষা গ্রহণ করতে চায় সেটা কি কখনও জানতে চেয়েছি? তাছাড়া এখন যারা শিক্ষক হচ্ছেন তাদেরও দূরাবস্থা।’
তিনি বলেন, ‘ছাত্রদের কাছে শিক্ষকদের রোল মডেল হতে হবে। শিক্ষদের শুধু কথায় নয়, কাজেও তা প্রমাণ করতে হবে।’
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, শিশুর সুষ্ঠু সার্বিক বিকাশ কেবল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করে না। পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রকেও অনেকটা দায়িত্ব নিতে হয়। দেশে এখনকার শিক্ষার সামগ্রিক পরিবেশ শিশুর মানসিক বিকাশের জন্যে মোটেই অনুকূল নয়।
আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন- সাংবাদিক ও সহজপাঠের উদ্যোক্তা আবুল মোমেন, কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, আনিসুল হক, ড. শাহীন ইসলাম, সাংবাদিক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল, সাহিত্যিক আহসান হাবীব প্রমুখ।
আরও পড়ুন:
ঘোড়ামারা আজিজসহ ছয় জনের মৃত্যুদণ্ড