X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বিদ্যুতের দাম প্রতি ইউনিটে বেড়েছে ৩৫ পয়সা

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৩ নভেম্বর ২০১৭, ১৬:৩০আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০১৭, ২০:০৫

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের কর্মকর্তারা

গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে প্রতি ইউনিটে ৩৫ পয়সা। আগামী মাস থেকে এটি কার্যকর হবে। জানুয়ারি মাস থেকে গ্রাহকদের বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়তি বিল দিতে হবে। বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর কাওরান বাজারে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যুতের নতুন দাম ঘোষণা করা হয়। এর ফলে বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগুলো অতিরিক্ত ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা বেশি আয় করতে পারবে। 

সংবাদ সম্মেলনে কমিশন জানায়, দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে সবশ্রেণির গ্রাহকের স্বার্থ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওপর আর্থিক প্রভাব, বিত্তহীন ও নিম্নবিত্তসহ সব গ্রাহকের ওপর আর্থিক চাপ কমানো, সারাদেশে বিদ্যুতের অভিন্ন দাম, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ও সর্বোপরি দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা ভাবা হয়েছে। এসব বিষয় বিবেচনা করে বিদ্যুতের পাইকারি দাম না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

পাইকারি বিদ্যুতের দাম না বাড়লেও বিতরণ সংস্থাগুলোর বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করা হয়েছে। এবার পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ও নর্দান ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) বিদ্যুতের ক্রয়মূল্য কমানো হয়েছে। অন্য বিতরণ কোম্পানির ক্ষেত্রে তা বেড়েছে। 
আদেশে কমিশন বলছে, পিডিবি বিতরণের জন্য গত অর্থবছরে বিদ্যুৎ কিনতো ৫ টাকা ১২ পয়সায়, এখন তা ৩৩ পয়সা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ টাকা ৪৫০ পয়সা। আরইবির ৪ টাকা ২৩ পয়সা দামের ইউনিটে ১৭ পয়সা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ টাকা ৫৭ পয়সা। ডিপিডিসিকে ৫ টাকা ৮৫ পয়সার বিদ্যুৎ কিনতে হবে ইউনিটে ৮ পয়সা বাড়িয়ে ৫ টাকা ৯২৮ পয়সায়। ডেসকোকে ৫ টাকা ৮৫ পয়সার বিদ্যুৎ ২২ পয়সা বাড়িয়ে ৬ টাকা ৬৬ পয়সা আর নেসকোর দাম ৬২ পয়সা কমিয়ে ৫ টাকা ১২ পয়সা থেকে নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ টাকা ৯৮ পয়সা।

সাধারণত পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর দোহাই দিয়েই গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়। এবার ব্যতিক্রম ঘটলো। পাইকারি না বাড়িয়ে গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়ানোর বিষয়ে কমিশন চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম বলেন, ‘বিতরণ খরচ বেড়েছে এই বিবেচনায় কমিশন এই দাম বাড়িয়েছে।’ তিনি জানান, ২০১৫ সালের তুলনায় এবার পাইকারিতে প্রতি ইউনিটে বিদ্যুতের দাম ৬ পয়সা করে কমানো হয়েছে।
বিইআরসি চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের ২৫ ভাগ এবং অন্য বিতরণ কোম্পানির ১৩ ভাগ গ্রাহক ন্যূনতম বিদ্যুৎ ব্যবহার করেও যে অতিরিক্ত বিল দিতো তা থেকে মুক্তি পাবে। সব মিলিয়ে দেশে এমন গ্রাহক সংখ্যা ৯০ লাখ, যাদের বিদ্যুতের দাম বাড়বে না।’
কমিশন সদস্য মিজানুর রহমানের ভাষ্য, ‘বিতরণ সংস্থাগুলোর বিদ্যুতের দাম নির্ধারণের জন্য জ্বালানি খরচ ও বিতরণ ব্যয় বিবেচনা করা হয়। বিতরণ সংস্থাগুলো গড়ে ৬ টাকা ৮৪ পয়সা পর্যন্ত গ্রাহকের আঙিনায় বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে খরচ করে। কিন্তু বিতরণ সংস্থাগুলো প্রতি ইউনিটে এখন ৬ টাকা ৫০ পয়সা রাজস্ব আদায় করছে। এতে তাদের প্রতি ইউনিটে ৩৫ পয়সা লোকসান দিচ্ছে। কমিশন এবার এই ৩৫ পয়সাই বাড়িয়েছে।’ 
চলতি বছর বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) বিদ্যুতের পাইকারি (বাল্ক) দাম প্রায় ১৫ শতাংশ বাড়ানোর আবেদন করে। একইভাবে বিদ্যুৎ বিতরণকারী পাঁচটি সংস্থাও গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়ানোর আবেদন করে। এই আবেদনের ওপর গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত গণশুনানি করে বিইআরসি। এতে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিষয়ে যেমন কথা হয়েছে, তেমনই বিদ্যুতের দাম কমানোর বিষয়েও আলোচনা হয়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ কনজুাম্যার্স অ্যাসোসিয়েশেন (ক্যাব) দাম কমানোর বিষয়ে কিছু নির্দিষ্ট প্রস্তাব দেয়। ওই সময় এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হলেও বাস্তবে কমিশনের পক্ষ থেকে কোনও পদক্ষেপই নেওয়া হয়নি। বরং সব বিষয় বাদ দিয়ে সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনা করে শুধু বিতরণ সংস্থাগুলোর লোকসান কমানোর অজুহাতে এবার বাড়ানো হলো বিদ্যুতের দাম।
কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, পাইকারি বিদ্যুতের দাম না বাড়ানোর কারণে প্রায় ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা পিডিবিকে লোকসান দিতে হবে। এক্ষেত্রে সরকার এই পরিমাণ অর্থ অনুদান হিসেবে দেবে বলে আশা প্রকাশ করে কমিশন। কিন্তু দাম কমানোর ক্ষেত্রে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ কমানোর বিষয়ে কমিশনের কোনও ভূমিকাই নেই। ক্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে তেলের দাম কমানো হলে বিদ্যুতের দামও কমানো যেতো। তবে কমিশনের কোনও পদক্ষেপ না থাকা প্রসঙ্গে মিজানুর রহমান বলেন, তেলের দাম সমন্বয় করা হলে বিদ্যুতের দাম কমানো যেতো। কিন্তু এক্ষেত্রে সরকারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। কমিশনের কিছু করার নেই।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে আরও ছিলেন কমিশনের সদস্য আবদুল আজিজ খান, মাহমুদুল হক ভূঁইয়া ও রহমান মোর্শেদ। 

সবশেষ ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়। ২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত ৯ বার বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। এতে জীবনযাত্রার ব্যয় আরেকধাপ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ নির্ধারিত আয়ের মানুষের সমস্যা বেশি। বিদ্যুতের দাম বাড়ার কারণে তাদের খরচ আরও বাড়লো।

/ইউআই/জেএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
লিভারপুলের নতুন কোচ স্লট!
লিভারপুলের নতুন কোচ স্লট!
ক্ষমতায় যেতে বিএনপি বিদেশি প্রভুদের দাসত্ব করছে: ওবায়দুল কাদের
ক্ষমতায় যেতে বিএনপি বিদেশি প্রভুদের দাসত্ব করছে: ওবায়দুল কাদের
লেবাননে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ২
লেবাননে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ২
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!