X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখে লাভ নেই: বিএনপিকে প্রধানমন্ত্রী

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৩ নভেম্বর ২০১৭, ২১:৪৯আপডেট : ২৪ নভেম্বর ২০১৭, ০০:১০





সংসদে বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী (ছবি- ফোকাস বাংলা) দেশের মানুষ বিএনপিকে ভোট দেবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিএনপির আমলে নানা অপকর্মের ফিরিস্তি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘তারা ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখে কিভাবে? কাজেই স্বপ্ন দেখে লাভ নেই। যাদের ‘এত গুণ‘ জনগণ তাদের কেন ভোট দেবে। জনগণ কি ভোট দিয়ে ওই আপদ টেনে তাদের জীবনকে আবার দুর্বিষহ করে তুলবে? দেশের মানুষ ভোট দিয়ে ওই অশান্তিকে আবার টেনে আনবে না। এদেশের মানুষের ওপর আমার বিশ্বাস আছে। অন্তত যাদের বিবেক আছে, তারা তাদের (বিএনপি) কোনোদিন ভোট দেবে না। দিতে পারে না।’


বৃহস্পতিবার (২৩ সভেম্বর) জাতীয় সংসদের ১৮তম অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
ক্ষমতায় থাকতে বিএনপি জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন,  ‘‍জনগণ ওই দুর্নীতিবাজ-সন্ত্রাসী যারা আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারে, তাদের কি ভোট দেবে? বড় বড় কথা বলে লাভ নেই। মানুষ শান্তি চায়। মানুষ উন্নতি চায়। মানুষ এটা বুঝতে পেরেছে যে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে উন্নতি হয় এবং উন্নতি হবে। মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ক্ষমতা যদি কারও কাছে ভোগের বস্তু হয়, তাহলে তারা জনগণের জন্য কিছু করতে পারে না। আমাদের কাছে ক্ষমতা ভোগের বস্তু নয়। আমাদের কাছে ক্ষমতা হচ্ছে- জাতির প্রতি কর্তব্য পালন। দেশের মানুষের উন্নয়ন করা। জনগণের প্রতি আস্থা বিশ্বাস থাকতে হবে। জনগণের কল্যাণে কাজ করতে হবে।  আমরা তা  করতে পেরেছি বলেই বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে। আমরা দেশের উন্নতি চাই। জনগণের কল্যাণ চাই। আমরা তা করে যাচ্ছি। দেশকে আমরা একটা সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে গেছি।’
গুম হওয়া বিষয়ে বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদের বক্তব্যের জবাবে সরকার প্রধান বলেন, ‘জনগণকে নিরাপত্তা দেওয়া সরকারের দায়িত্ব, এটা অস্বীকার করছি না। বিরোধী দলের নেতা গুমের কথা বলেছেন। এই গুম তো বহুভাবেই হচ্ছে। অনেকে কিন্তু ফেরতও আসছে। যারা ফেরত আসে বা খুঁজে পাওয়া যায়, তা (নিয়ে) কিন্তু বড় করে নিউজ হয় না।’
উন্নত দেশেও গুমের ঘটনা ঘটছে মন্তব্য করে সরকার প্রধান বলেন, ‘গুম কী কারণে হচ্ছে, কোথায় হচ্ছে? এটা কি শুধু বাংলাদেশে? ২০০৯ সালের একটি হিসাব- বৃটেনে দুই লাখ ৭৫ হাজার ব্রিটিশ নাগরিক গুম হয়ে গেল। তার মধ্যে ২০ হাজারের কোনও হদিসই পাওয়া গেল না। আমেরিকার অবস্থা আরও ভয়াবহ।  ৫৪ হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশ ১৬ কোটি মানুষের দেশ। এইটুকু ভৌগলিক সীমারেখার মধ্যে এত মানুষের অবস্থান। তাদের সেবা ও আর্থ-সামাজিক উন্নতি আমরা করে যাচ্ছি। অথচ এই সব উন্নত দেশগুলোর জনসংখ্যা কত। তাদের সব কিছু তো আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন। তারপরও সেই দেশে এত লোক গুম হয়, তার খোঁজ পাওয়া যায় না। সেই তুলনায় আমাদের অবস্থা অনেক বেশি নিয়ন্ত্রণে। যখন কোনও ঘটনা ঘটছে সঙ্গে সঙ্গে খোঁজ নিচ্ছি।’
কলাম লেখক ফরহাদ মজহারের ‘গুম নাটক‘ প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘আমাদের একজন স্বনামধন্য আঁতেল ‍গুম হয়ে গেলেন। পরে দেখা গেল- উনি গুম হননি। উনি নিজে নিজেই খুলনায় গেলেন। পরে তাকে খুঁজে পাওয়া গেল। এর দোষটা আমাদের। এ ধরনের আরও অনেক ঘটনা তো ঘটে যাচ্ছে। আমি তার নামধাম বলতে চাই না।’

বাংলাদেশ আইপিইউ ও সিপিএ-র নেতৃত্ব দেওয়ার প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, ‘আমরা যে গণতন্ত্র এনেছি, গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি। আমরা কত প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে এটা করেছি বিশ্ববাসী দেখেছে। এজন্য আমরা আইপিইউ ও সিপিএ-র মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব পেয়েছি। সফলভাবে আইপিইউ ও সিপিএ সম্মেলন করে আমরা বিশ্ববাসীকে দেখিয়েছি- বাংলাদেশে কিভাবে গণতন্ত্রের চর্চা হয়। কিন্তু অনেকে এই নির্বাচনকে ( ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন) অবৈধ, এটা-সেটা বলে। মনে হয় ওই কয়েকটা লোকই সব বুঝে গেছেন। তাদের মাঝে যেন জ্ঞানভাণ্ডার রয়েছে। সারাবিশ্বের জনপ্রতিনিধিদের যেন কোনও জ্ঞানই নেই। তারা না বুঝেই বাংলাদেশকে ভোট দিয়ে দিলো।’

তিনি বলেন, ‘আমরা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছি বলেই এর সুফল জনগণ পাচ্ছে। মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের উন্নয়নটা রাজধানী পর্যন্ত নয়, গ্রাম পর্যায়ে বিস্তৃত। গ্রামের অর্থনীতিকে আমরা চাঙ্গা করে তুলেছি। যে কাজ আমরা করেছি তা বলতে অনেক সময় লেগে যাবে। আমাদের লক্ষ্য সার্বিক উন্নয়ন। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’

রামপালের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পরিবেশের ক্ষতি হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পরিবেশের ক্ষতি হলে আমরা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র করতাম না। আমাদের দেশে কিছু মানুষ আছে। যা কিছুই করেন সেটাকে বাঁকাভাবে দেখা, আর সেটি না না করা। এটি তাদের অভ্যাস। সেটি তাদের একটি ব্যবসা। এই ব্যবসা করে তাদের কিছু কামাই করার সুযোগ রয়েছে। সেটাই তারা করে বেড়ান। কোনও কিছুতেই তাদের ভালো লাগে না। কিছুই ভালো লাগে না- এই মানসিকতার লোক তো আছে এবং থাকবে। তারা কী বললো তা শুনে তো আমরা দেশের উন্নয়ন বন্ধ করতে পারি না। আমার মানুষকে বিদ্যুৎ দিতে হবে। ’
সরকারকে টেনে নামানোর বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটি দল নির্বাচনে না এসে রাস্তায় রাস্তায় বসে চিৎকার করে বেড়াচ্ছে।  আমাদের সরকারকে নাকি টেনেই নামাবে। এমন একজন মানুষের মুখ থেকে এই কথাটা আসলো, তার নাম নিতে চাই না। তার চরিত্রটা কী? ছাত্র জীবনে করেছে এক রাজনীতি। ছাত্রশক্তি বোধ হয় করতো। তারপর গেল বিদেশে ব্যারিস্টারি পড়তে। সেখান থেকে এসে আমাদের বাসা থেকে আর নড়ে না। তাকে ডাকুক- না  ডাকুক আঠার মতো চিপটে থাকে। কোথাও ঠাঁই না পেয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের পিএ হানিফের পিএ হিসেবে তার ব্রিফকেস নিয়ে দৌঁড়াতে শুরু করলো। ৭৫-এর পর দেখলাম সে বিএনপিতে গেল। এরপর ’৮২ সালে এরশাদ সাহেব ক্ষমতায় এলে, তখন হয়ে গেল জাতীয় পার্টি। কারণ, সে দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত ছিল। এরশাদ সাহেব রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বলে ক্ষমা করে দিয়ে নিজের দলে টেনে নিলেন। এরশাদ সাহেবের যেই পতন হলো, কিছুদিন পর দেখা গেল উনি তাকে ছেড়ে দিয়ে আবার বিএনপিতে গেলেন। যে মাটিতে এমনিতেই পড়ে আছে, সে আবার কাকে টেনে নামাবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিয়ানমারে আছেন। সুখবর দিয়েছেন। দুপুরে (বুধবার) রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে এমওইউ সই করেছি। তারা স্বীকার করেছে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেবে। বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্রনীতি ছিল সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়। সরকার এই নীতি নিয়েই সব প্রতিবেশীর সঙ্গে সব সমস্যার সমাধান করছে। ’


আরও পড়ুন: 

ঘরে বসে মানুষ খুন হচ্ছে: সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা

 

 

/ইএইচএস/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ব্যাংককে চীনের দাবাড়ুকে হারালেন মনন
ব্যাংককে চীনের দাবাড়ুকে হারালেন মনন
ব্যয়বহুল প্রযুক্তি আর ক্ষতিকর জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধের এখনই সময়
এনার্জি মাস্টার প্ল্যান সংশোধনের দাবিব্যয়বহুল প্রযুক্তি আর ক্ষতিকর জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধের এখনই সময়
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়িয়েছে
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়িয়েছে
তিন লাল কার্ডের ম্যাচ নিয়ে কে কী বললেন!
তিন লাল কার্ডের ম্যাচ নিয়ে কে কী বললেন!
সর্বাধিক পঠিত
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান