X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দুই মাসের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো শুরু, শেষ কবে?

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৪ নভেম্বর ২০১৭, ০০:১২আপডেট : ২৪ নভেম্বর ২০১৭, ০০:৩৪

মিয়ানমারের সঙ্গে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী

অবশেষে অব্যাহত আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে সম্মত হয়েছে মিয়ানমার। বৃহস্পতিবার দেশটির রাজধানী নেপিদোতে রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চির দফতরে এ বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক সাক্ষরিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আগামী দুই মাসের মধ্যেই রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়া শুরু করবে মিয়ানমার। তবে এই প্রক্রিয়া শেষ হতে কত সময় লাগতে পারে সে বিষয়ে কোনও ধারণা এখনও পাওয়া যায়নি।    

মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর নৃশংস নির্যাতন ও ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় গত ২৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশের কক্সবাজার-বান্দরবান সীমান্তে রোহিঙ্গাদের ঢল নামতে থাকে। মৃত্যু বিভীষিকায় আক্রান্ত এসব মানুষের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাকামী নিরস্ত্র বাঙালিদের ভারতে আশ্রয় নেওয়ার দৃষ্টান্তকে মনে রেখে অসহায় এসব মানুষকে মানবিক কারণে বাংলাদেশে সাময়িকভাবে আশ্রয় নেওয়ার অনুমতি দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে এই বিপন্ন মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াতে বিশ্ববাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি। পাশাপাশি তারা যেন নিজ নাগরিক অধিকার নিয়ে দেশে ফিরতে পারে সেজন্য মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা চালিয়ে যেতে থাকে সরকার। একইসঙ্গে এ বিষয়ে চাপ অব্যাহত রাখতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের এই সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর তার একটি ফল হিসেবে দেখা হচ্ছে।

রোহিঙ্গা সংকট ইস্যুতে মিয়ানমারের সঙ্গে গত দুই মাস ধরে চলমান আলোচনার অগ্রগতি হচ্ছে এই সমঝোতা স্মারক। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাঠানো বিবৃতি অনুযায়ী,এই সমঝোতার আলোকে আগামী দুই মাসের মধ্যেই রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে। উল্লেখ্য, কক্সবাজারের আশ্রয় শিবিরগুলোতে বর্তমানে ৬ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে।

তবে এর সমঝোতাটির বিষয়বস্তু এখনও পরিষ্কার করেনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাঠানো ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তির সঙ্গে দুপুরে মিয়ানমারে সাংবাদিকদের সামনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীর দেওয়া বক্তব্যেরও অমিল রয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের (রিপোর্টে ছিল লোকদের) ফেরত পাঠানোর জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমার আজ (বৃহস্পতিবার) একটি ‘অ্যারেঞ্জমেন্ট’ সই করেছে।

ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে দুই মাসের মধ্যে। অ্যারেঞ্জমেন্ট সইয়ের তিন সপ্তাহের মধ্যে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হবে। ফেরত যাওয়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট দ্বিপক্ষীয় চুক্তি (ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্টে) দ্রুত সই করা হবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আগামী শনিবার (২৫ নভেম্বর) ঢাকায় ফিরে সংবাদ সম্মেলন করবেন বলেও জানানো হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।

ধোঁয়াশা বিষয়গুলো

রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশে অবস্থানরত সব রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানোর ওপরই জোর দিয়ে আসছে বাংলাদেশ। তবে সব রোহিঙ্গাকেই ফেরত পাঠানো হবে কিনা, তা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়নি।

আবার বাংলাদেশ শুরু থেকেই সময় নির্দিষ্ট করে চুক্তি করার পক্ষে ছিল। তবে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরুর সময় উল্লেখ করা হলেও সেই প্রক্রিয়া শেষ করার কোনও সময়সীমা উল্লেখ করা নেই বিজ্ঞপ্তিতে।

এখানে উল্লেখ্য, ১৯৯২ সালে দুই দেশ রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর জন্য একটি সমঝোতা স্মারকে সই করে। ২০০৫ সালে মিয়ানমার এককভাবে সেই প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেওয়ার আগ পর্যন্ত ১৩ বছরে ২ লাখ ৩৬ হাজার রোহিঙ্গা ফেরত যেতে পেরেছিল। কোনও সময়সীমা উল্লেখ না থাকলে আগের হারেই বাংলাদেশে অবস্থানরত ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠাতে কত সময় লাগবে, সেটিও উদ্বেগের বিষয়।

মন্ত্রী বনাম সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

সমঝোতা স্মারকে সইয়ের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেন। ইলেকট্রনিক চ্যানেলগুলোতে দেখা গেছে, টেলিভিশনে দেখানো সংবাদে দেখা গেছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটি প্রথম পদক্ষেপ এবং দুই দেশকে এখন পরের ধাপে যেতে হবে। এখন কাজটা শুরু করতে হবে। সমঝোতা স্মারকে সবকিছুই বিস্তারিত আকারে আছে।

তিন মাসের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে কিনা, জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘তিন মাসের মধ্যে ফেরত না তো, এখন যেটা হচ্ছে, এই কাজটা শুরু করতে হবে। ওখানে বাড়িঘরগুলো তো জ্বালিয়ে দিয়েছে, সমান করে দিয়েছে। এসব বাড়িঘর তো তৈরি করতে হবে।’

মিয়ানমারের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

এদিকে মিয়ানমার আজকের (বৃহস্পতিবার) সমঝোতা নিয়ে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, ১৯৯২ সালে দুই দেশের মধ্যে সই করা যৌথ বিবৃতির ওপর ভিত্তি করে অ্যারেঞ্জমেন্টটি প্রস্তুত করা হয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী একাধিকবার সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন এবং সে কারণে ১৯৯২ সালের সমঝোতা এখানে গ্রহণযোগ্য নয়।

এ বিষয়ে একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেও বাংলাদেশের অবস্থান পরিষ্কার জানা যায়নি।

/এসএসজেড/টিআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সাফজয়ী ভাইয়ের সঙ্গে লড়াই, নেই কোনও ছাড়
সাফজয়ী ভাইয়ের সঙ্গে লড়াই, নেই কোনও ছাড়
বিয়ে না করানোয় মাকে হত্যা
বিয়ে না করানোয় মাকে হত্যা
ব্রাজিলের জার্সিতে এই বছরই শেষ মার্তার
ব্রাজিলের জার্সিতে এই বছরই শেষ মার্তার
৩ মে ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ ডেকেছে ইসলামী আন্দোলন
৩ মে ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ ডেকেছে ইসলামী আন্দোলন
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী