X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

সাহসী মেয়র চান ঢাকা উত্তরের বাসিন্দারা

শাহেদ শফিক
০৫ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৫:৩৪আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৫:৩৮

সাহসী মেয়র চান ঢাকা উত্তরের বাসিন্দারা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) বাসিন্দারা নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে সাহসী, কর্মঠ ও একজন জনবান্ধব মেয়র চান। দলমতের ঊর্ধ্বে নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতের পাশাপাশি আধুনিক শহর গঠনে ভূমিকা রাখতে পারবেন এমন একজনকে প্রত্যাশা করেন তারা। এক্ষেত্রে নগরবাসী উদাহরণ হিসেবে আনছেন প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের কথা। তার মৃত্যুতে ডিএনসিসি মেয়র পদ শূন্য হওয়ায় নতুন কে এ দায়িত্বে আসবেন তা নিয়ে চলছে আলোচনা।
নাগরিক সমাজের মন্তব্য, নগরে ভালো উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে গেলে তাতে বাধা আসেই। মেয়র আনিসুল হককেও বহু বাধা পেরিয়ে কাজ করতে হয়েছে। তেজগাঁও সাতরাস্তার অবৈধ ট্রাকস্ট্যান্ড উচ্ছেদ করতে গিয়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। শাহজাদপুর গুলশান লেকের রাস্তা উদ্ধার করতে গিয়ে সাহসী ভূমিকা রেখেছিলেন। গাবতলী বাসস্ট্যান্ডের সামনের রাস্তায় অবৈধ পার্কিং মুক্ত করেছেন। বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের দখলে থাকা রাস্তা ও ফুটপাত উদ্ধার করেছেন। সাহসিকতার পরিচয় দিয়েই তিনি এসব কাজ বাস্তবায়ন করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএনসিসি’র একাধিক কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘সত্যি বলতে নগর ভবন পরিচালনা করা অনেক কঠিন। রাজনৈতিক দল সমর্থিত মেয়রের পক্ষে তা আরও কঠিন। কারণ যে কোনও কাজ বাস্তবায়ন করতে গেলে প্রথমেই দলীয় সমর্থকদের কাছ থেকে বাধা আসে। মেয়রকে আগে এটা মোকাবিলা করতে হয়। আমরাও চাই নগর ভবনে এমন একজন মেয়র আসুন, যিনি দলমতের ঊর্ধ্বে থেকে দায়িত্ব পালন করতে পারেন। উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে বিশ্বাসযোগ্য আশ্বাস দেওয়া প্রার্থী নির্বাচনে সবারই সমর্থন পাবেন।’

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার মনে করেন, এ মুহূর্তে সৎ, জনকল্যাণমুখী ও স্বপ্নবিলাসী একজন মানুষ প্রয়োজন। যিনি নগরীকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা কোনও দলবাজ মেয়র চাই না। নৈতিকতাবোধসম্পন্ন নেতার প্রয়োজন। নৈতিকতায় ঘাটতি থাকলে তিনি দলমতের ঊর্ধ্বে থেকে শহরের জন্য কাজ করতে পারবেন না কোনও মেয়র।’

মেয়র প্রসঙ্গে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী তোফায়েল আহমেদ। তিনি পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) নির্বাহী সদস্য ও নগর বিশেষজ্ঞ। তার মন্তব্য— উচ্ছেদ অভিযানে নিজের দখলদারদের প্রতিরোধ করা ও নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে সাহস রাখতে হয় মেয়রকে। সবশ্রেণির অংশীদারের চাহিদার কথা মাথায় রেখে মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। একটি গ্রিন ও ক্লিন ঢাকা বিনির্মাণে জলাবদ্ধতা, পয়ঃনিষ্কাশন, মশা নিয়ন্ত্রণ, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্যোগ এবং মাদক ও যানজট সমস্যার সমাধানে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে হবে। এগুলো করতে পারবেন এমন কাউকেই মেয়র হিসেবে দেখতে চায় নগরবাসী।

মেয়র আনিসুল হককে স্মরণ করে বিএনপি সমর্থিত ডিএনসিসির সংরক্ষিত ওয়ার্ড ২-এর (ওয়ার্ড নং ৪, ১৫ ও ১৬) কমিশনার আমিনা খাতুন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা আসলে ঠিক আনিসুল হকের মতোই একজন মেয়র চাই। তার মতো একজন কর্মঠ ও সাহসী মানুষ আবারও নগরভবনে এলে সবার জন্য ডিএনসিসির জন্য ইতিবাচক হবে।’

আমিনা খাতুন আরও বলেন, ‘নগরবাসীর কল্যাণ বলতে আমি বুঝি জানমালের নিরাপত্তা প্রদান ও সড়কে পথচারীর নিরাপত্তা। পথচারীদের নির্বিঘ্নে চলার জন্য ফুটপাত দখলমুক্ত করতে হবে। সেই সঙ্গে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকেও দৃষ্টি দেওয়া জরুরি।’
প্রয়াত মেয়রের প্রশংসা করে রাজধানীর লাভ রোডের পিঠা বিক্রেতা মুকলেছা বেগম বলেন, ‘আগে রাস্তার পাশে বসে কোনও নারীর জন্য ব্যবসা তো দূরের কথা, চলাচল করাও নিরাপদ ছিল না। এখন দিনরাত সবসময় স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করা যায়। সাতরাস্তা দিয়ে গেলে ছিনতাইকারী ধরতো। পুরো রাস্তা ছিল ট্রাকের টার্মিনাল। এখন কতো সুন্দরই না হয়ে গেছে জায়গাটা।’
নগরবাসীদের মন্তব্য— ডিএনসিসি’র আগামী মেয়রের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত জননিরাপত্তা, সন্ত্রাসমুক্ত নগর, শিশুবান্ধব শহর, পার্ক-খেলার মাঠের নিশ্চয়তা, নগরে সবুজায়ন, দখল ও দূষণমুক্ত খাল-জলাশয়, দখলমুক্ত ফুটপাত, পরিকল্পিত শহর, বায়ু-বর্জ্য-শব্দ-দূষণমুক্ত নগর, শিক্ষা-স্বাস্থ্যসহ নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করা। এসব বাস্তবায়ন করতে গেলে বলিষ্ঠ মেয়র প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।

গুলশান সোসাইটির সদস্য ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘আমরা এমন মেয়র চাই, যিনি নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সক্ষম হবেন। পাশাপাশি সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি উদ্ধারে সাহসী উদ্যোগ নেবেন। কোনও ভয়ের কাছে মাথা নত না করে যিনি বীরের মতো এগিয়ে যাবেন। এমন মেয়র না হলে সিটি করপোরেশনকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়।’

একই এলাকার আরেক বাসিন্দা ফিরোজ আলম বললেন, ‘মেয়র মানেই নগরপিতা। পিতা যদি ভালো হন তাহলে পরিবার ভালো চলে। আমরা এমন একজন নগরপিতা চাই, যিনি নগরবাসীর সব অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করবেন।’

বিভিন্ন জরিপ ও আন্তর্জাতিক সূচকে দেখা গেছে, ঢাকা শহর এখন পৃথিবীর বসবাসের অযোগ্য শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই শহরের বাতাস থেকে মাটি সবকিছুই দূষিত। ভাঙা সড়ক, জলাবদ্ধতা, সুয়ারেজ লাইন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও যানজটের কারণে নিত্য ভোগান্তির শিকার শহরবাসী। নাগরিক সুবিধাও একেবারে তলানিতে। এ অবস্থায় সিটি করপোরেশনের সেবা নগরবাসীর হাতের মুঠোয় পৌঁছে দেওয়ার দাবি নগরবাসীর। তাদের মতে, প্রতিটি ওয়ার্ডের মৌলিক সমস্যা চিহ্নিত করে বাস্তবমুখী সিদ্ধান্ত নিয়ে সাহসিকতার সঙ্গে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।

/এসএস/এএইচ/জেএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মার্কিন কংগ্রেসে ইউক্রেনের বহুল প্রতীক্ষিত সহায়তা বিলে ভোট আজ
মার্কিন কংগ্রেসে ইউক্রেনের বহুল প্রতীক্ষিত সহায়তা বিলে ভোট আজ
ড্রোন হামলার কথা অস্বীকার করলো ইরান, তদন্ত চলছে
ড্রোন হামলার কথা অস্বীকার করলো ইরান, তদন্ত চলছে
শিল্পী সমিতির নির্বাচন, মিশা-ডিপজলে কুপোকাত কলি-নিপুণ
শিল্পী সমিতির নির্বাচন, মিশা-ডিপজলে কুপোকাত কলি-নিপুণ
ভাগ্নিকে শায়েস্তা করতে নাতিকে হত্যা
ভাগ্নিকে শায়েস্তা করতে নাতিকে হত্যা
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
দেয়ালের দেশ: মন খারাপ করা সিনেমা
সিনেমা সমালোচনাদেয়ালের দেশ: মন খারাপ করা সিনেমা