X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

বুদ্ধিজীবী: দেশের নাকি দলের

উদিসা ইসলাম
১৪ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৬:৩০আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০১৭, ১২:৫২


রায়ের বাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ
মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তান হানাদার ও বদরবাহিনীর নির্মম হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়েছিলেন বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীরা। মুক্তিযুদ্ধে যোগদান, মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা এবং স্বাধীন সার্বভৌম দেশের কথা বলতে গিয়ে প্রাণ দিতে হয়েছিল এসব সূর্যসন্তানকে। সমাজ বিশ্লেষক ও বর্তমান সময়ের বুদ্ধিজীবীরা বলছেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় যেসব বুদ্ধিজীবী শহীদ হয়েছেন, যাদের ত্যাগের বিনিময়ে আমরা স্বাধীন হয়েছি, তাদের সঙ্গে বর্তমান সময়ের বুদ্ধিজীবীদের তুলনা হয় না। একজন বুদ্ধিজীবী হচ্ছেন সেই মানুষ যিনি পৃথিবীটাকে তার দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে ব্যাখ্যা করেন, সেই ব্যাখ্যাকে অন্যের কাছে পৌঁছে দিতে চান এবং বিদ্যমান ব্যবস্থাকে বদলাতে চান। যারা সেটা চান না তারা বিদ্বান, বিজ্ঞ হতে পারেন কিন্তু বুদ্ধিজীবী নন। তাদের মত, বুদ্ধিজীবী বলতে আমরা যাদেরকে বুঝি তাদের বেশিরভাগই কোনও একটি দলের হয়ে কাজ করেন, কথা বলেন। কিন্তু একজন বুদ্ধিজীবী কখনোই কোনও দলের নন, অবশ্যই দেশের।
প্রবীণ শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী মনে করেন ১৯৭১ সালে বুদ্ধিজীবীরা সকলেই যে উজ্জ্বল ছিলেন তা নয়। অনেকেই রাষ্ট্রের (পূর্ব পাকিস্তানের) সঙ্গে সহযোগিতাও করতেন। সরকারের সঙ্গে, সরকারের গণমাধ্যমে, ইতিহাস চর্চায়, সরকারের বইপত্রে সমর্থন দিতেন। কিন্তু যারা শহীদ হয়েছেন তারা ব্যতিক্রম ছিলেন, তারা  সামরিক শাসক চালিত রাষ্ট্রকে সহযোগিতা করেননি। বুদ্ধিজীবীদের সেই যে ব্যতিক্রম ধারা, এখন সেটি দুর্বল হয়ে গেছে। এখন সরকার সমর্থক বুদ্ধিজীবী বেশি উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আমরা যে ব্যবস্থার মধ্যে আছি সেটি পুঁজিবাদী। এ ব্যবস্থা উন্নতি আনে কিন্তু, বৈষম্য বাড়ায়। এ ব্যবস্থাকে বেশিরভাগ বুদ্ধিজীবী সমর্থন করছেন, সুবিধা পাচ্ছেন, ফলে সরকার সমর্থক বুদ্ধিজীবী বেশি এখন।
বুদ্ধিজীবী সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা দলকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, বুদ্ধিজীবী সেই মানুষ যিনি পৃথিবীটাকে ব্যাখ্যা করেন, সে ব্যাখ্যাটাকে অন্যের কাছে পৌঁছে দিতে চান, বিদ্যমান ব্যবস্থাকে বদলাতে চান। যারা সেটা চান না তারা বিদ্বান, বিজ্ঞ হতে পারেন কিন্তু বুদ্ধিজীবী নন।
শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল ইসলাম বলেন, ইদানিং বুদ্ধিজীবী বলতে আমরা যাদেরকে বুঝি তাদের বেশিরভাগই কোনও একটি দলের হয়ে কাজ করেন, কথা বলেন। কিন্তু একজন বুদ্ধিজীবী কখনোই কোনও দলের নয়, অবশ্যই দেশের। তারা দেশের স্বার্থে ন্যায়ের পক্ষে থাকেন, কাজ করবেন। কিন্তু ইদানিং তারা রাজনৈতিক চর্চাটা একটু বেশি করেন। দল, ধর্ম, বর্ণের ঊর্ধ্বে গিয়ে তারা কাজ করবেন এটাই আশাবাদ সকলের।
বুদ্ধিজীবীর সংজ্ঞা নিয়ে কাজ করা আছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, যাদেরকে আমরা বুদ্ধিজীবী বলে ধরে নেই, প্রচার প্রচারণা চালাই তাদের বাইরেও বুদ্ধিজীবী আছেন। যেমন, একজন মানুষ যিনি দেশের একদমই প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকেন তিনিও যদি বুদ্ধিবৃত্তির চর্চা করেন তাহলে তিনিও বুদ্ধিজীবী। কারণ, তিনি দেশের জন্য নীরবে নিভৃতে কাজ করেন।
যদিও অধ্যাপক এমাজউদ্দিন মনে করেন দলীয় বুদ্ধিজীবী থাকাটা খুবই স্বাভাবিক। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, দলীয় বুদ্ধিজীবী থাকতে পারবে না কেন। সবদেশেই আছে। দলের হলে আপত্তি থাকার কোনও কারণ নেই। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সংগঠিত সংগঠনের মাধ্যমে ব্যক্তিরা দলের নামে একত্রিত হন এবং জাতীয় স্বার্থ দেখেন। যারা তা দেখেন না তারা দলের নন। জাতীয় স্বার্থ বৃদ্ধির চিন্তা যারা করেন তারা দলের লোক হলেও আপত্তির কিছু নেই। মুক্তিযুদ্ধকালে আমরা নিজেদের একটি দলই মনে করতাম যারা কিনা কম রক্তপাতে কিভাবে দেশটাকে স্বাধীন করা যায় সে চিন্তা করতাম।

মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে সবসমহলের শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন
এখনকার বুদ্ধিজীবীরা দেশের প্রতি দায়িত্বশীল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিশ্চয় দায়িত্বশীল তবে, দুটি পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন। স্বাধীনতার আগে সেটি অর্জন করা যায় কিভাবে সেই চিন্তা ছিল। আর এখন স্বাধীন রাষ্ট্র কোন দল কীভাবে এগিয়ে নিতে চান সে বিষয়ে কথা বলবেন।
অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি বাকী বিল্লাহ মনে করেন, একাত্তরের আগে বুদ্ধিজীবীরা যদি আজকের মতো পাওয়ার স্টাবলিশমেন্টের সঙ্গে মিশে চলতো তাহলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না। বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা হবে স্বাধীন, এ কারণেই স্বাধীন চিন্তাটা গুরুত্বপূর্ণ। মুক্তিযুদ্ধের আগে যারা ক্ষমতায় ছিল তাদের বিপরীতে যারা কথা বলেছেন তাদের বিচ্ছিন্নতাবাদী বলা হতো। অনেকে হয়তো আপস করেছে। কিন্তু বড় একটা অংশ-যারা নিহত হয়েছেন তারা কেউ সে দলে ভেড়েননি। স্টাবলিশমেন্ট ও ক্ষমতার মূলধারার বিপরীতে দাঁড়িয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা দেখাতে পেরেছেন তারা। বুদ্ধিজীবীদের দলীয় হওয়ার প্রবণতাটি  ইতিহাসের যে কোনও সময়ে তাদের স্বাধীন চিন্তার বিকাশ ও সম্ভাবনাকে শেষ করে দেয়।

ছবি: নাসিরুল ইসলাম।

আরও পড়তে পারেন: 

বধ্যভূমির মূল পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়নি

‘মাছ ধরতে গিয়ে শত শত বুদ্ধিজীবীর লাশ দেখে আঁতকে উঠি’

৩০ সেকেন্ডে লোপাট মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের সব ফুল! (ভিডিও)

শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতির শ্রদ্ধা

যে কারণে রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে যাওয়া হয় না প্রধানমন্ত্রীর

রাযেরবাজার স্মৃতিসৌধে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা

ভুলিনি শহীদের স্মৃতি, ভুলবো না আমরা

মুক্তিযুদ্ধের পর বুদ্ধিজীবীদের লাশ যেভাবে শনাক্ত করা হয়

/ইউআই/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নারী কর্মচারীর অকস্মাৎ মৃত্যু, অভিযোগ সচিবের দিকে!
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নারী কর্মচারীর অকস্মাৎ মৃত্যু, অভিযোগ সচিবের দিকে!
উত্তরাসহ দেশের চার পাসপোর্ট অফিসে দুদকের অভিযান
উত্তরাসহ দেশের চার পাসপোর্ট অফিসে দুদকের অভিযান
রনির ব্যাটে প্রাইম ব্যাংককে হারালো মোহামেডান
রনির ব্যাটে প্রাইম ব্যাংককে হারালো মোহামেডান
কুড়িগ্রামে বৃষ্টির জন্য নামাজ, এপ্রিলে সম্ভাবনা নেই বললো আবহাওয়া বিভাগ
কুড়িগ্রামে বৃষ্টির জন্য নামাজ, এপ্রিলে সম্ভাবনা নেই বললো আবহাওয়া বিভাগ
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা